তাদের মুখে হাসি ফুটেছে
৭০০ একরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। যানবাহন মাত্রই রিকশা-ভ্যান। চার-পাঁচশ রিকশা ও ভ্যানচালকের জীবিকা এর ওপর। কিন্তু করোনায় এক বছর ধরে বন্ধ ক্যাম্পাস। অভাব অনটনে দিন কাটছে তাদের। রিকশা রেখে অনেকে যোগ দিয়েছেন ভিন্ন পেশায়। আজ তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। আন্দোলন করে হলে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে ক্যাম্পাসে চলছে রিকশা।
‘অনেকদিন পর আপনাদের দেখছি। আবার আগের মতো মনে হচ্ছে। এভাবে রিকশা চালাতে পারলে পরিবারের অভাব কিছুটা দূর হবে।’ এমনি বললেন অটোরিকশা চালক সিকান্দার। হঠাৎ ক্যাম্পাসে রিকশা চালাতে পেরে মুখে হাসি ফুটেছে তার।
সিকান্দারের গ্রামের বাড়ি নড়াইল। থাকেন ক্যাম্পাসের পাশে ইসলামনগর এলাকায়। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাঁর স্বপ্ন মেয়েকে পড়াবেন। গত এক বছর ক্যাম্পাসের আশেপাশেই রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে দিন পার করেছেন তিনি। রিকশা নিজের হওয়ায় ভাড়া পরিশোধ করতে হয়নি। করোনাকালে যা আয় হয় তা ক্যাম্পাস খোলা থাকার তুলনায় অর্ধেক। সিকান্দারের মতো প্রায় চারশ-পাঁচশ রিকশাচালক থাকেন ক্যাম্পাসের পাশে। সবার অবস্থা একই রকম।
‘চা খাবেন ভাই?’, জানতে চাইল ১২ বছরের হোসাইন। থাকে ক্যাম্পাসের পাশে আমবাগান এলাকায়। মা ও চার ভাই-বোনের সংসার। মুখে হাসি তার। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘ক্যাম্পাস খুলে গেছে। বেচাকেনা আবার শুরু হবে। মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান হবে, অনেক বিক্রি হবে।’
হোসাইন আগে বাদাম ও চা বিক্রি করত। এখন করোনায় শুধু চা বিক্রি করে। দিন শেষে পায় ২০০ টাকা। আগে ৫০০ টাকার মতো বিক্রি হতো। আশায় বুক বেঁধেছে সে। আবারও আগের মতো অনেক মানুষের মধ্যে চা বিক্রি করবে, অনেক আয় হবে। পরিবারকে আরও সহযোগিতা করতে পারবে।
বিয়ে করেছে দুই বছর হলো, স্ত্রী ও পাঁচ মাসের ছেলেকে নিয়ে সংসার। যার কথা বলছি তিনি জাবি ক্যাম্পাসের অটোরিকশা চালক উজ্জ্বল। তিন বছর ধরে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। গ্রামের বাড়ি সিলেট। থাকেন ক্যাম্পাসের পাশেই। ভাড়ায় রিকশা চালান। করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তাঁর। মালিকের ভাড়া পরিশোধ করে তেমন কিছুই থাকে না।
আজ রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছেন উজ্জ্বল। প্রশাসন থেকে কোনো বাধা নেই। আনন্দের যেন শেষ নেই। এমন চললে তো দুঃখ অনেকটাই দূর হবে। ‘ক্যাম্পাস খোলা থাকলে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা থাকত। বহুদিন পর আবার ক্যাম্পাসে রিকশা চালাতে পারছি। খুবই আনন্দ লাগছে। প্রশাসন অনুমতি দিলে ক্যাম্পাসে রিকশা চালাতে চাই। আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।’ এমনি জানালেন রিকশাচালক উজ্জ্বল।
রিকশা ও ভ্যানচালক, চা ও বাদাম বিক্রেতাসহ ক্ষুদ্র দোকানিদের মুখে হাসি। হয়তো ক্যাম্পাস খুলে দিলে আবার ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করবে, আয় বেশি হবে। দীর্ঘ দিনের কষ্ট আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠবে। আদৌ কি প্রশাসনের অনুমতি মিলবে? মুখের হাসি দীর্ঘস্থায়ী হবে তো!