পাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অবরুদ্ধ, উপাচার্য পলাতক!
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর নানা অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতির অভিযোগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১৭ দফা দাবি না মানায় রেজিস্ট্রার অফিসে তালা দিয়েছে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। আজ শনিবার সকালে পাবিপ্রবি কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
১৭ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়ে পাবিপ্রবি কর্মকর্তারা কর্মসূচি পালন করছেন। গত চার বছরে নানা আশ্বাস দিলেও ভিসি তা পালন না করায় কর্মকর্তারা এই কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন। পাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ হোসেন জানান, ১৭ দফা দাবি কার্যকর না হওয়া পযর্ন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
পাবিপ্রবি সূত্র জানায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ মার্চ। শুরু থেকেই উপাচার্যের বাড়িভাড়া ফাঁকি দেওয়া, বিধিবহির্ভূতভাবে গাড়ি ব্যবহার করা, নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে রাখাসহ নানা হয়রানি করা, প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। মেয়াদের শেষ দিকে এসে তার বিরুদ্ধে ওঠে নিয়োগ বাণিজ্য, ভাতিজি-ভাগিনাসহ স্বজনদের নিয়োগ ও গণনিয়োগের অভিযোগ।
গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ নিয়োগের নানা অনিয়ম তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। ছাত্রছাত্রীরা গণনিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করে। অনৈতিকভাবে নিজের ভাতিজি কানিজ ফাতিমার নিয়োগসহ নানা অভিযোগের মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান করে সদস্যদের তোপের মুখে তা বাতিল করেন। এরপর নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করলে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সহায়তায় অবরোধ মুক্ত হয়ে পুলিশ প্রহরায় ক্যাম্পাস ছাড়েন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রিজেন্ট বোর্ডের সভা করার কথা থাকলেও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তা করতে পারেননি তিনি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ক্যাম্পাসে আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। তারা স্লোগান দেয় ‘দুর্নীতবাজ ভিসির আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘নিয়োগবাণিজ্য করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘রুস্তমের দুই গালে, জুতা মার তালে তালে’।
শিক্ষকরাও পরের দিন দফায় দফায় বৈঠক করে তার গণনিয়োগ বন্ধের দাবি জানান। কর্মকর্তারা বৈঠক করে আজ থেকে উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি দিলে গতকাল দিন ভোর ৫টা দিকে কাউকে না জানিয়ে উপাচার্য ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যান।
আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে পাবিপ্রতিতে গিয়ে দেখা গেছে কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ১৭ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, উপাচার্য রোস্তম আলী ও তার বিতর্কিত সব নিয়োগ ও অনিয়মের প্রধান সহায়তাকারী ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম এখন পাবিপ্রবির ঢাকার গেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, উপাচার্যের ১০১ অনিয়মের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম একক-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ইউজিসির তদন্তে সেসব অভিযোগের বেশ কিছু প্রমাণিত হয়। রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, উপাচার্য অনিয়ম করে ব্যয় করা অনেক টাকা ফেরত দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর শাস্তি না হওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে স্বজনপ্রীতি, নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। অবেশেষে শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তিনি।
উপাচার্য রোস্তম আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বরতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম বলেন, ‘সবকিছু নিয়ম মেনে হয়েছে। কর্মকর্তারা কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। উপাচার্য মহোদয় অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।’