‘সায়েন্স পাব, এতেই খুশি’
‘সায়েন্স পাব এতেই খুশি লাগছে। আর সায়েন্স পেলেই ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে পারব। ডাক্তার হলে সবার বিনাপয়সায় চিকিৎসা করব।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আফ্রিদিতি তাসীন সপ্তর্ষি এভাবেই তার প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করে।
সপ্তর্ষি এনটিভি অনলাইনকে আরো বলে, ‘আমি এখন জিপিএ ৫ পেয়েছি। এটা সামনে আমাকে আরো অনুপ্রেরণা দেবে। এসএসপি পরীক্ষার সময় আমাদের এটা মনে থাকবে যে, একবার জিপিএ ৫ পেয়েছি, এটা আবার আমাকে পেয়ে দেখাতে হবে। আমার বাসার শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক, বাবা-মা, আত্মীয় সবাই চাই আমি জিপিএ ৫ পাই, যেন ভালো মানুষ হই। ভালো মানুষ হওয়া আসলে গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানুষ হয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশায় যেতে হবে। আর ভালো মানুষ হয়ে যদি কোনো পেশায় যেতে না পারি, তা হলে ভালো মানুষ হওয়ার দাম নেই।’
সপ্তর্ষি আরো বলে, ‘বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হয়ে দু:স্থদের বিনাপয়সার চিকিৎসা করাব। আক্ষেপের সুরে সে বলে, ‘আমার বড় বোনের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বড় বোন দুর্ভাগ্যবশত হতে পারে নাই। তাই আমি সে স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল তাবাসুম বলেন, ‘আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি। সায়েন্স পড়তে পারছি এটাই খুশি। সায়েন্সে পড়ে ডাক্তার হবো, না প্রকৌশলী হবো- তা বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে হবো। আমার বাবা-মা অনেক সময় ব্যয় করেছে আমার জন্য। পড়াশুনার অনেক খরচ দিয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশি। তাঁরাই আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ভালো পড়াশুনা করে ভালো রেজাল্ট করা যায়। আমি শিক্ষকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।’
জিপিএ ৫ পেয়ে অনেক খুশি তোহা বিনতে মোস্তফা। সে বলে, ‘বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।’
এ সময় তার সঙ্গে থাকা মা মরিয়ম পারভীন বলেন, ‘মেয়ে তার মেধা অনুযায়ী যেটা হবে সেটাতে আমরা খুশি। মেয়ে ভালো রেজাল্ট করবে এটা আমাদের আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল। আমরা মেয়ের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছি। আল্লাহ আমাদের ভালো রেজাল্ট দিয়েছে। আমরা এ রেজাল্টে খুশি।’
ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই হাজার ১১৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৮৫৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৬ ভাগ। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৯৭১ জন। পাসের হার ছিল শতভাগ।
ফল প্রকাশ হওয়ার পর স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। জুনিয়র সেকশন থেকে সিনিয়র সেকশনে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দের ঢেউ।
ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ ফওজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিপিএ ৫ আগের তুলনায় সব জায়গায় কমে গেছে। আমাদেরও কিছুটা কমেছে। আগের মতো ঢালাও রেজাল্টের বিরোধিতা করছেন আমাদের শিক্ষামন্ত্রী।’
অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘জিপিএ ৫ জরুরি নয়, জরুরি হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। জিপিএ ৫ প্রতিযোগিতা অসুস্থ। এখান থেকে বের হয় আসতে হবে। হুট করে বের হওয়া যাবে না, তবে একটা পদ্ধতির মাধ্যমে বের হতে হবে।’
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘এই পরীক্ষাগুলো বাচ্চাদের ওপর ভীষণ চাপ ফেলে। বাচ্চারা তাদের শিক্ষা নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে যায় যে, অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে যেতে পারে না। মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। পড়ার চাপে যেন বাচ্চাদের ক্ষতি না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’