রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রাগৈতিহাসিক’
বিকেল সোয়া ৫টা বাজতে তখনো আধা ঘণ্টা বাকি। দুই-একজন করে আসতে শুরু করেছে। সময় যতই গড়াতে থাকে ততই বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। ৫টা ১০ বাজলে দরজা খুলে দিল। পাঁচ মিনিটেই মিলনায়তনে সন্তোষজনক দর্শক। ক্ষণিকেই সবকিছু নিঃশ্চুপ। অন্ধকারে ধীরে ধীরে বাজতে শুরু করল বাদ্যযন্ত্র। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে গেল মঞ্চ নাটক ‘প্রাগৈতিহাসিক’।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) ৫৮তম প্রযোজনা ছিল ‘প্রাগৈতিহাসিক’। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় এবং মো. জিল্লুর রহমান টিটনের নিদের্শনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। নাটকটির দুটি শো প্রদর্শন হয় বিকেল ৫টা ১৫ ও সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে।
নাটকটি এগিয়ে চলে ইচ্ছেকে অবলম্বন করে। যেখানে ইচ্ছেই হচ্ছে প্রকৃত শক্তি। সেটা কু বা সু দুই ধরনেরই হতে পারে। একদিকে ভিখু ডাকাতের কুইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ আর অপর দিকে নিম্ন আয়ের দারিদ্র-পীড়িত বাংলার মানুষের সমাজ চিত্র। কিন্তু আমাদের সমাজে ভিখু ডাকাতের মতো ইচ্ছের মানুষ সংখ্যায় অনেক। গ্রাম, শহর সবই যেন অনাহারী। খাদ্যের নয় জ্ঞানের অভাবে অভাবী।
তবে নাটকে শুধু দুঃখ নয়, ভালোবাসাও আছে। এটা ফুটে উঠে বিন্নু মাঝির কথায়, ‘ফুল, ওই ভিখু দাদার চালার পিছনে যে চাপা কলার বাগান কইরেছি, তোক গোট কিনে দেব বলে।’ এ থেকে বোঝা যায়, গ্রামীণ মানুষের ভালোবাসার গভীরতা।
নাটকটি দেখার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যোতি বলেন, ‘আমি নিয়মিত মঞ্চ নাটক দেখি। তাই কোনো নাটক মঞ্চায়ন হবে বললেই আমার ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। আজকের নাটকটি দেখার পর থেকে আরো ভালো লাগছে। কারণ নাটকটির মঞ্চায়ন বেশ ভালো ছিল, এতে শিক্ষণীয়ও অনেক কিছু আছে।’
জ্যোতি আরো বলেন, ‘যখন কোনো নাটক হয় তখন আমরা বন্ধু-বান্ধবীরা এক সঙ্গে নাটক দেখি। এটা আমাদের কাছে অনেকটা উৎসবের মতো।’
নাটকে অভিনয় করেছেন মো. খায়রুল ইসলাম সবুজ, সুব্রত কুমার ভৌমিক, তাসমী তামান্না তৃষা, মো. আতোয়ার রহমান মারুফ, সুতপা বর্মণ, সিহাব, মো. আব্দুল মমিন, অর্ণব আকাশ, আরমিন সুলতানা সিনথি, মিথুন ও বাপ্পী।
এ ছাড়া মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সুতপা বর্মণ ও খাইরুল ইসলাম, আবহ সংগীতে জিল্লুর রহমান টিটন, সুতপা বর্মণ ও সুব্রত কুমার, নেপথ্য কণ্ঠে রফিউল আজম নিশার, আলোক ব্যবস্থাপনায় হিরো আনাম ও নিশার খান।