শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টিপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটা ও রাবার বুলেটে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
urgentPhoto
আজ বুধবার দুপুরের দিকে রাজধানীর আফতাবনগর ও রামপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ দুপুরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দুপুরে আফতাবনগরের স্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে রামপুরা ব্রিজে উঠতে গেলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বেধরক লাঠিপেটা শুরু করে এবং গুলি ছুড়ে।
পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
এদিকে আহত অনেক শিক্ষার্থীকে বনশ্রীর ফরায়েজি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম শিমুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭-১৮ জন শিক্ষার্থীকে আমাদের এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসার জন্য আরো কয়েকজনকে আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
আঘাতের ধরন প্রসঙ্গে আতিকুল বলেন, ‘বেশির ভাগের শরীরে স্প্লিন্টার ছিল। এ ছাড়া পুলিশের লাঠির আঘাতেও আহত ছিলেন বেশ কয়েকজন।’
এ বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা রাহাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা রামপুরা ব্রিজ অংশে মিছিল ও অবরোধ করি। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। প্রথমে তারা কিছু বলেনি। কিছুক্ষণ পরে ব্রিজ থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আফতাব নগরের দিকে নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাজি না হলে তারা লাঠিপেটা করে। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এরপর পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা আবারও সংগঠিত হলে পুলিশ প্রায় ৩০টি রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে বাধ্য করে পুলিশ।’
পরে বিকেলের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আবার সংগঠিত হয়ে প্রগতি সরণিতে অবস্থান নেন বলে জানান রাহাত। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। তবে দুপাশ থেকেই তাদের পুলিশ ঘিরে রেখেছে বলে জানান তিনি। এমনকি দুপাশে জলকামানও প্রস্তুত রয়েছে। সন্ধ্যা শেষ হতেই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অ্যাকশনে নামবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থী।
এই কর্মসূচি কত সময় চলবে তা জানতে চাইলে রাহাত বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল কেউ ভ্যাট কমানো সংক্রান্ত কোনো আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ে যাবেন।
আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তফা রাহাত বলেন, ‘এটা তো আসলে কোনো পরিকল্পিত আন্দোলন না। অনেকদিন ধরেই ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিলাম। তবে তাতেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় আজ মিছিল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।’
হাসপাতালে আহত এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, ফায়ারগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের বুকে পিঠে মুখে গালে লেগেছে। আমাদের এক স্যার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকে ফায়ার না করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু পুলিশ এ বক্তব্য শুনেনি।
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভ্যাট না থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেন ভ্যাট থাকবে। শিক্ষা একটা অধিকার। সেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকা উচিত।
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এ কারণেই আমরা তাদের আটকে দিয়েছি। তারপরও পুলিশের কারো যদি এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি থাকে সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। আমরা তাদের সরে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা সরেননি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এসেও রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতেও ভাঙচুর চালান। তা ছাড়া রাস্তা অবরোধ করে রাখায় জনগণের চলাচলের খুব সমস্যা হচ্ছিল। যানজট তীব্র হচ্ছিল। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়।’
শিক্ষার্থীরা যে গুলি চালানোর অভিযোগ করছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষক গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগও নাকচ করে দেন তিনি। বলেন, ‘উল্টো তাদের ছোড়া ইট পাটকেলে আমি ও আমার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছি।’
এদিকে দুপুরে লাঠিপেটা করে একবার রাস্তা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিলেও এখন তারা আবারও প্রগতি সরণি থেকে কুড়িল-বিশ্বরোড যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন বলেও জানান ওসি।
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি ও তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের হাতে ‘ভ্যাট দিব না, গুলি করো’, ‘গুলি করো, মেরে ফেলো, ভ্যাট দেব না ভ্যাট দেব না’, ‘নো ভ্যাট, গুলি কর’ এসব স্লোগান লেখা পোস্টার দেখা যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছিল।