‘মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে, কী উপহার দেব ভাবছি’
সময় ঠিক দুপুর ১২টা ৫০। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফল কলেজ মাঠের বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ। ফলাফল জানতে বোর্ডের সামনেই ঝাপিয়ে পড়েন ফলপ্রত্যাশীরা। আনন্দ-উল্লাসে শুরু হয় ঢোল-তবলা বাজানো, সঙ্গে নাচ-গান। কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার ফলাফল জেনে উল্লাসে মেতে উঠেছেন পরিবারের সঙ্গে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে ফলাফল বোর্ডের কাছে এই দৃশ্যের দেখা মেলে। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রত্যাশীদের সঙ্গে তাঁদের মা-বাবাও এসেছেন। ভিকারুননিসার মাঠে আসা অধিকাংশ বাবা-মা মেয়ের করা ফলাফলে খুশিতে আত্মহারা। তবে অনেকের সঙ্গে কথা বলে মাত্র একজনের মন খারাপের কথা জানা গেছে।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন সুষমা চক্রচর্তী। জিপিও ৫ পেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন তিনি। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢোলের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে নেচে চলেছেন তিনি। মোবাইল দিয়ে তুলছেন ছবি। সে সময় তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলাম। এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। এখন লক্ষ্য একটাই, বুয়েটে পড়া। বুয়েটে ভর্তি হতে পারলেই জীবন সার্থক হবে। সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।’
সুষমা চক্রচর্তীর সঙ্গে পরীক্ষার ফলাফল নিতে এসেছেন বাবা গৌতম কুমার চক্রবর্তী। তিনি একটি মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের দায়িত্বে আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা হিসেবে গর্ববোধ করছি আমি। আমার বড় মেয়েও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে পড়ছে। রাত জেগে মেয়ের পাশে বসে থেকে পড়িয়েছি সব সময়। আজ ফল পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে খুব ভালো লাগবে। মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে, কী উপহার দেব ভাবছি।’
কুলসুম আক্তার পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৫। এই ফলাফল পেয়ে কুলসুম খুশি। তবে তিনি ভয়ে আছেন যদি তাঁর মা রাগ করেন অথবা অখুশি হন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার ফল আরো খারাপ হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। সেজন্য আমি সত্যিই অনেক খুশি। কিন্তু আব্বু-আম্মু যে কী ভাবেন তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। মা মনে হয় রাগ করবেন।’
কুলসুম তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মা আফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কিছুটা দূরে। পরে কুলসুমের মায়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার সময় আমার মেয়ের জ্বর ছিল। আমি টেনশনে ছিলাম। মেয়ের এই ফলাফলে আমি খুশি হয়েছি। সে আরো ভালো ফলাফল ডিজার্ভ করে। মেয়ের মুখ দেখে মনে হলো সে ভাবছে আমি রাগ করেছি। কিন্তু আসলে আমি রাগ করিনি।’
সুমা আক্তার জিপিএ ৫ পাননি। অল্পের জন্য প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জিত হয়নি তাঁর। সুমা আক্তারের সঙ্গে বাবা মাহবুব উদ্দিন এসেছেন ফলাফল জানতে। ফলাফল বোর্ডে চোখ রেখেই মন খারাপ করে বেরিয়ে এলেন তিনি। জানতে চাইলে মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম সে জিপিএ ৫ পাবে। হালকা একটুর জন্য পায়নি সে। ওর মা ফলাফল জানলে বেশি কষ্ট পাবে। কারণ মেয়েকে সে সব সময় পড়ান। পড়া সম্পর্কিত সব কিছু তাঁর মা দেখাশোনা করেন। কী আর করার!’
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এবার পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে পাঁচজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। অর্থাৎ পরীক্ষা দিয়েছেন এক হাজার ৯২৫। এর মধ্যে পাস করেছে এক হাজার ৯১২ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৭৭৫ জন। জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে গত বছরের চেয়ে সামান্য খারাপ ফলাফল নিয়ে চিন্তিত নন কলেজের অধ্যক্ষ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বসন্তের সিজনসহ নানা কারণে পরীক্ষা হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ ছিল। তাই পাসের হার একটু কমেছে। তবে এই ফলাফলে আমি অবশ্যই খুশি। সামান্য হেরফের হয়েছে ফলাফলে। এই ফলাফল আগামী বছর আরো ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবে।’