রোকেয়া দিবসে কর্মসূচি নেই, বিজয় দিবসও ‘মলিন’
বেগম রোকেয়া দিবস, বিজয় দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ কর্মসূচি না থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অবহেলা ও হেঁয়ালিপনা দায়ী। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে আছে।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠার আট বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ক্যাফেটেরিয়া খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আজ শুক্রবার বন্ধ মসজিদের সামনেই জুমার নামাজ আদায় করে এর প্রতিবাদ জানান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। এ ছাড়া শীতের বন্ধে ক্যাম্পাস ‘ফাঁকা’ থাকায় বিজয় দিবসে বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। আগামী জানুয়ারিতে রোকেয়া দিবসের বিশেষ কর্মসূচি পালিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হল চালু হয়েছে প্রায় আড়াই মাস আগে। ক্যাম্পাসে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের বাইরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়। শুধু মসজিদ নয়, ক্যাফেটেরিয়া থাকলেও আজ পর্যন্ত তা চালু হয়নি।
মসজিদ চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা আমাদের জন্য চরম লজ্জার একটি বিষয়। আমরা মসজিদ থাকতেও মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করি আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মসজিদে তালা ঝুলিয়ে রাখে। ক্যাম্পাসে মসজিদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক, অন্যান্য ক্যাম্পাসেও আছে। আর আমরা আমাদের মসজিদ থাকতে কেন বাইরের মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাব! এ দায় অবশ্যই প্রশাসনকেই নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন এতদিনেও মসজিদটি চালু করতে পারেনি? কেন ক্যাম্পাসে ক্যাফেটেরিয়া থাকতে বাইরের হোটেলে খেতে হবে?
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোরশেদ উল আলম রনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। দ্রুতই মসজিদ চালু করা হবে।’
এ ছাড়া বেগম রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হলেও রোকেয়া দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল না কোনো বিশেষ আয়োজন। বিজয় দিবসে সারা দেশে যখন বিজয়োৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অনেকটা মলিন।
বিজয় দিবসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া দায়সারাভাবে রাতে শুধু কয়েকটি লাইট আর সকালে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আলোচনা সভাটিও হয় নীরবে-নিভৃতে।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস এখন মৃত ক্যাম্পাস, একে মৃত করা হয়েছে। বেগম রোকেয়ার নামে এই ক্যাম্পাস অথচ রোকেয়া দিবসে কোনো আয়োজন ছিল না! আর মহান বিজয় দিবসে ক্যাম্পাস যেন আরো মলিন হয়েছে। বিজয়োৎসবের ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যায়নি। ক্যাম্পাসে নেই ভালো শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ। রয়েছে শুধু হাড় জিরজিরে অর্ধনির্মিত একটি স্বাধীনতা স্মারক। অর্ধেকটা নির্মাণের পর এর নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে গেছে।’
বেশকিছু শিক্ষার্থী এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোনো বাজেট আসে না? সাধারণ একটা স্বাধীনতা স্মারকের কাজ শেষ করতে কেন এত সময় লাগবে? বিজয় দিবসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রোকেয়া দিবস নীরবে চলে যায়। যদি বাজেট আসেও তবে সেটা কোথায় যায়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোর্শেদ উল আলম রনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিজয় দিবস পালনে তেমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। এর পেছনে কোনো বাজেটও ছিল না। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম ছিল বলে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা হয়নি। তাই জানুয়ারিতে রোকেয়া দিবস পালনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, ‘শীতকালীন ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। পরের প্রোগ্রামগুলো আরো ভালোভাবে করা হবে।’