ঢাকায় রাবি উপাচার্যকে তালাবদ্ধ রেখে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া তিন নেতার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকার অতিথি ভবনে উপাচার্যকে তালাবদ্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটান। তবে তালা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তা খুলে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বিশেষ কাজে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউর ইন্দিরা রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে উঠেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অতিথি ভবনের বাইরের গেটে তালাবদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপাচার্যকে তালাবদ্ধ রেখে বাইরে মোমবাতি জ্বালিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর শেরেবাংলা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি জানান, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিপান সরকার দ্বীপ, মারুফ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মাহমুদ হাসান রাসেল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পলাশসহ অনেকেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ঢাকার অতিথি ভবনে উপাচার্যকে তালাবদ্ধ রেখে আন্দোলন করবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
সারওয়ার জাহান আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় কোনো সংগঠন সন্ত্রাসীর মতো কর্মকাণ্ড ঘটাবে, সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা যেভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে মারধর করেছে, তার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ফলে তারা যেটা উপাচার্যের সঙ্গে করেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট রাবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তুহিনের নেতৃত্বে ১০-১২ ছাত্রলীগকর্মীর সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনে প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মারধরের শিকার হন ওই প্রকৌশলীসহ দপ্তরের অফিস সহকারী সুমন ও প্রশাসন ভবনের প্রহরী আবুল কাশেম। এ অভিযোগের ভিত্তিতে দুদিন পর উপাচার্য ওই তিন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুহিনসহ তিনজনের নামে মতিহার থানায় চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে একটি মামলাও করে।
এর পর চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ সিন্ডিকেটে তোলার পর গত ২৯ মার্চ তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।