কেএনবি শিক্ষাবৃত্তি : পড়াশোনা ও বসবাসের খরচ দেবে ইন্দোনেশীয় সরকার
পাশ্চাত্যের দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোও বরাবর আকর্ষণ করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। এ দেশগুলোর শিক্ষার মান যেমন সন্তোষজনক, তেমনি খরচটাও কম। এ কারণেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিচ্ছেন প্রাচ্যের সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো।
পাশাপাশি এসব দেশের সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছরই মেধাবী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে। আর এই সুবিধা থেকে বাদ যায় না আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও। ইন্দোনেশীয় সরকার তো শুধু বাংলাদেশি ও নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্যই আলাদা দুটি বৃত্তির সুযোগ রেখেছে। এগুলো হলো ধর্মাসিসওয়া শিক্ষাবৃত্তি ও কেএনবি শিক্ষাবৃত্তি। গত পর্বে আমরা ধর্মাসিসওয়া বৃত্তি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আমরা জানব কেএনবি বৃত্তির খুঁটিনাটি।
কেএনবি শিক্ষাবৃত্তি কী
ইন্দোনেশীয় সরকারের দেওয়া বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে একটি হলো কেএনবি বৃত্তি কেএনবি বৃত্তি (KNB Scholarship)। মূলত মেধাবী বাংলাদেশি ও নেপালিদের জন্য এই বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত তিন বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দিয়ে এই বৃত্তি দেয় ইন্দোনেশিয়া সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রথম বছরে শিক্ষার্থীদের ইন্দোনেশীয় ভাষা এবং প্রারম্ভিক কোর্সে পড়াশোনা করতে হবে। এই কোর্সগুলো সফলভাবে শেষ করার পরবর্তী দুই বছরে স্নাতকোত্তরের মূল বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন পড়ুয়ারা। দেশটির ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করা যাবে।
যারা পাবেন বৃত্তি সুবিধা
মেধাবী যে কেউই আবেদন করতে পারবেন এই বৃত্তির জন্য। তবে যোগ্যতা পরিমাপের বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হবে একজন শিক্ষার্থীকে। যেমন—বৃত্তিপ্রার্থীকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। এ ছাড়া টোফেল স্কোর ৪৫০ থাকতে হবে। আবেদনের অন্যতম শর্ত শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা। তাই সুস্থতা প্রমাণের জন্য জমা দিতে হবে সুস্থতার সনদ। আর প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের মধ্যে। এসব শর্ত পূরণ হলেই আবেদন করা যাবে বৃত্তির জন্য।
বৃত্তির আওতায় যেসব সুবিধা
তিন বছর মেয়াদি এই বৃত্তিতে শিক্ষা ও বসবাসের সব খরচই বহন করবে ইন্দোনেশিয়া সরকার। শিক্ষার যাবতীয় খরচ সরকার থেকেই জমা দিয়ে দেওয়া হবে শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর অন্যান্য খরচ পাওয়া যাবে হাতে হাতেই। এর মধ্যে দেশটিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বৃত্তিপ্রাপ্তদের দেওয়া হবে ১০ লাখ রুপিয়া। এই অর্থ দিয়ে আপনাকে মিটিয়ে নিতে হবে প্রাথমিক সব খরচ।
এর পর প্রতি মাসে শিক্ষার্থীকে বসবাসের খরচের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা রুপিয়া দেওয়া হবে। তবে ভাষা কোর্স এবং প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা কোর্স শেষ করে মূল স্নাতকোত্তর কোর্সে পা রাখার সময় অন্যান্য খরচের সঙ্গে গবেষণার জন্য এককালীন চার লাখ রুপিয়া এবং বইপত্র কেনার জন্য তিন লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া পাবেন একজন শিক্ষার্থী।
এই বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাও থাকবে। সীমিত আকারে প্রতি মাসে এক লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া বিমা খরচ দেবে ইন্দোনেশিয়া সরকার। পাশাপাশি এককালীন বিমান খরচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের খরচও দেওয়া হবে বৃত্তি থেকে।
যেভাবে করবেন আবেদন
আবেদনে ইচ্ছুক হলে প্রথমেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় প্রস্তুত রাখতে হবে বেশ কিছু কাগজ। এর মধ্যে রয়েছে সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও নম্বরপত্রের কপি, দুই কপি শিক্ষা সুপারিশপত্র, টোফেল স্কোরের সনদ (দুই বছর মেয়াদ থাকতে হবে) এবং শারীরিক সুস্থতার সনদ। আবেদনের পর একটি আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হবে দূতাবাস থেকে।
পরবর্তী ধাপ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ। দূতাবাস থেকেই মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়। এটি সংগ্রহের সময় নিজ পরিচয়ের প্রমাণের জন্য আমন্ত্রণপত্র, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধনের সনদ অথবা শিক্ষাসনদের কপি সঙ্গে রাখতে হবে।
মনোনীত হলে পরবর্তী ধাপে ভিসার জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পাসপোর্টের মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর থাকে। দূতাবাস থেকে সাধারণত এক বছর ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুমতি পেলেই স্বপ্নের উচ্চশিক্ষার জন্য উড়াল দেওয়া যাবে ইন্দোনেশিয়ায়।