অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার সেরা কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম
নেশা বা পেশা যাই বলা হোক না কেন; ফটোগ্রাফি এখন আর চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষকে ফ্রেমবন্দি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ডিজিটাল কন্টেন্টের অবতারণা দারুণভাবে প্রভাবিত করছে সৃজনশীলতাকে। ছবি তোলার পরেও অকৃত্রিম কন্টেন্টগুলোতে নৈপুণ্যের পরশ দিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে নতুন ধরনের শিল্প। ফলে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও তৈরি হয়েছে নজরকাড়া এই শিল্পের বাজার। এভাবে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে দক্ষ ফটোগ্রাফারদের জন্য। আজকের নিবন্ধটি অনলাইনে ছবি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন সেরা কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে। চলুন, ঘুরে আসা যাক ছবির ডিজিটাল বাজার থেকে।
অ্যাডোবি স্টক
বিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাডোবির উচ্চ মানের গ্রাফিক পরিষেবা অ্যাডোবি স্টক। পেওনিয়ার সাপোর্ট করায় ১৮ বছরের যেকোনো বাংলাদেশি সহজেই এই সাইট থেকে আয়ের চেষ্টা করতে পারবেন।
তাদের ওয়েবসাইটের কন্ট্রিবিউটর পাতায় গিয়ে ‘জয়েন নাউ’তে ক্লিক করে খুব সহজেই খুলে নেওয়া যাবে একটি অ্যাডোবি আইডি। নিবন্ধনের সময় অন্যান্য তথ্যগুলোর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে ট্যাক্স ফর্ম পূরণ করতে হবে। এখানে বাংলাদেশিরা ডব্লিউ-৮বিইএন ফর্মের মাধ্যমে ট্যাক্স তথ্যাদি জমা দিবেন। সাইন-আপ প্রক্রিয়া শেষ করার পর পরই আপলোড করা যাবে নিজের তোলা সেরা ছবিগুলো। অবশ্য ছবিগুলো কোনো স্বীকৃত ব্যক্তি বা অন্য কারও ব্যক্তিগত সম্পদের হলে, সেগুলোতে যে তার স্বত্ব আছে- এই মর্মে তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে।
এই সাইট প্রতিটি স্টক ছবির জন্য ৩৩ শতাংশ রয়্যালটি দেয়। সাধারণত কন্ট্রিবিউটররা প্রতি ছবি বাবদ কমপক্ষে শূন্য দশমিক ৩৩ (৩৬ দশমিক ২৩ বাংলাদেশি টাকা) (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ১২ মার্কিন ডলার (২ হাজার ৩১৮ দশমিক ৪৬ বাংলাদেশি টাকা) (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) পেয়ে থাকেন। এভাবে নূন্যতম ২৫ মার্কিন ডলার (২ হাজার ৭৪৪ দশমিক ৩৯ বাংলাদেশি টাকা) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) জমা হলে তারা অর্থপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারেন।
শাটারস্টক
উচ্চমানের ছবির জগতে সুপরিচিত একটি নাম শাটারস্টক। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের যে কোনো ফটোগ্রাফি উৎসাহী যুক্ত হতে পারবেন এর বিশাল কম্যুনিটিতে। নিবন্ধনের জন্য সরাসরি চলে যেতে হবে তাদের ওয়েবসাইটের সাবমিট পাতায়। এখানে নাম, ইমেল ও মেইলিং ঠিকানা দেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই সাইন-আপ সম্পন্ন করা যাবে।
তারপর কয়েকটি ছবি জমা দিতে হবে। যেগুলো শাটারস্টকের নিজস্ব পর্যালোচকদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। কন্ট্রিবিউটরকে খেয়াল রাখতে হবে, ছবির কপিরাইট যেন শুধুমাত্র তার নিজের হয়।
বাংলাদেশিদের অবশ্যই ডব্লিউ-৮বিইএন ফর্মে ট্যাক্সের তথ্য জমা দিতে হবে। সাইটটি পেওনিয়ার সাপোর্ট করায় বাংলাদেশিরা সহজেই পেমেন্ট নিজেদের ব্যাংকে নিতে পারবেন।
শাটারস্টক থেকে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত রয়্যালটি উপার্জন করা যায়। ধরা যাক, কোনো গ্রাহক ৩০টি ছবির জন্য ১১১ দশমিক ২০ মার্কিন ডলারের প্যাকেজটি কিনলেন। এখানে ১৫ শতাংশ রয়্যালটি পাওয়া কন্ট্রিবিউটররা তাদের প্রতি ছবির জন্য ৫৬ সেন্ট (৬১ দশমিক ৪৪ বাংলাদেশি টাকা) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) করে পাবেন। এভাবে নূন্যতম ২৫ (বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ৭৪৪ দশমিক ৩৯ টাকা) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) জমা পড়লেই টাকাটা তোলার জন্য তারা আবেদন করতে পারবেন।
গেটি ইমেজেস ও আইস্টক
গ্রাফিক কন্টেন্ট সম্পর্কিত সাইট দুইটি একই কোম্পানির হওয়ায় যাবতীয় নিয়ম-কানুন একই। সাইট দুটিতে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লে থেকে এদের স্ব স্ব নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে।
অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের সময় কন্ট্রিবিউটর হিসেবে আবেদনকারির বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। সাইন-আপের সময় ৩ থেকে ৬টি নমুনা ছবি আপলোড করতে হবে। এখানে ছবিগুলোর কপিরাইট অবশ্যই আবেদনকারির হতে হবে। এই নমুনাগুলোর ভিত্তিতে সফল আবেদনকারিরকে প্রাথমিক ভাবে নন-এক্সক্লুসিভ স্তরে ছবি আপলোডের সুযোগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশি কন্ট্রিবিউটররা ডব্লিউ-৮বিইএন ফর্মে তাদের ট্যাক্স তথ্যাবলি সরবরাহ করবেন। আর পেমেন্ট প্রদানের মাধ্যম হিসাবে পেওনিয়ার বাছাই করা যাবে।
গেটি ইমেজেস লাইসেন্সকৃত ছবির প্রতিটির জন্য ২০ শতাংশ রয়্যালটি দিয়ে থাকে। আর আইস্টক প্রতিটি ছবির লাইসেন্সের জন্য রয়্যালটি দেয় ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর পরিধি ১ মার্কিন ডলারের নিচ থেকে কয়েক শত মার্কিন ডলার পর্যন্ত। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০০ টাকা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা)।
স্টকসি
স্টকসির প্ল্যাটফর্মে ছবি বিক্রির প্রথম ধাপ হলো- তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা। এসময় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানপূর্বক নিজের পোর্টফোলিও শেয়ার করতে হবে। অতঃপর ১০টি ছবি আপলোড করতে হবে। যেগুলো যাচাই করে পর্যবেক্ষক টিম অনুমোদন করলে তবেই কন্ট্রিবিউটর হওয়া যাবে।
স্টকসির নিয়মিত আয় থেকে ৫০ শতাংশ তারা কন্ট্রিবিউটরদের দিয়ে থাকে। এটি ১৫ (বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৬৩ টাকা) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ মার্কিন ডলার (৪৩ হাজার ৯১০ দশমিক ১৬ বাংলাদেশি টাকা) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছে।
আর এক্সটেন্ডেড লাইসেন্স আয়ের কমিশন ৭৫ শতাংশ। এই রয়্যালটি নিম্নে ১০০ (১০ হাজার ৯৭৭ দশমিক ৫৪ বাংলাদেশি টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮০০ (১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৪ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা) মার্কিন ডলার পর্যন্ত (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা)। বাংলাদেশিরা পেওনিয়ার ব্যবহার করে স্টকসি পেমেন্ট নিতে পারবেন।
ড্রিমসটাইম
এই সাইটের নিবন্ধন শুধুমাত্র নাম ও ইমেল ঠিকানা দিয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন করা যায়। তারপর ‘ফাইল আপলোড’ বাটনে ক্লিক করে নিজের কপিরাইট সম্বলিত কয়েকটি ছবি আপলোড করতে হবে। সেগুলো যাচাই করে একটি ইমেল দেওয়া হবে। যদি সেগুলো অনলাইনে বিক্রির জন্য গৃহীত হয়, তাহলে সেগুলো ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হবে।বাংলাদেশি কন্ট্রিবিউটররা এর পর পরই অবশ্যই ডব্লিউ-৮বিইএন ফর্মে তাদের ট্যাক্সের তথ্যাবলি সরবরাহ করবেন।
নন-এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটররা রয়্যালটি পান ছবি প্রতি ২৫ শতাংশ করে। এর সীমানা ৩৫ সেন্ট থেকে ৪০ মার্কিন ডলারেরও বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যেটি ৩৩ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকারও বেশি (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা)। ড্রিম্সটাইমের এক্সক্লুসিভ স্তরের স্টক ফটোগ্রাফারদের রয়্যালটি ছবি প্রতি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এই আয়ের ব্যালেন্স ১০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি হলে তারা পেমেন্ট আবেদন করতে পারেন। যে অর্থ বাংলাদেশিরা পেওনিয়ারের মাধ্যমে তুলতে পারেন।
১২৩ আরএফ
৫০ লাখ ক্রেতা এই প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের জন্য, সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম ও ইমেইল সহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। এখানে তথ্যগুলোর জন্য বৈধ নথি আপলোড করা লাগবে। এছাড়া দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নিজের কপিরাইট থাকা ১০টি ছবি জমা দিতে হবে। এগুলো অনুমোদিত হলে পরবর্তীতে নিয়মিত ভাবে আরও ছবি আপলোড করা যাবে।
কন্ট্রিবিউটর স্তরের উপর ভিত্তি করে এই সাইট থেকে নিম্নে ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ রয়্যালটি পাওয়া যায়। এটি ২১৬ সেন্ট থেকে শুরু করে ৪৩২ সেন্ট পর্যন্ত। যা বাংলাদেশি টাকায় ২৩ থেকে ৪৭ টাকা পর্যন্ত (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা)। কমপক্ষে ২৫ মার্কিন ডলার (২ হাজার ৭৪৪ ৩৯ বাংলাদেশি টাক) (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা) হলে পেমেন্ট তোলা যায়, যেটি বাংলাদেশিরা পেওনিয়ারের মাধ্যমে পেতে পারেন।
ডিপোজিট ফটোস
সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি গ্রাহকের এই সাইটটির ক্রেতা কম্যুনিটির অংশ হতে সরাসরি চলে যেতে হবে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। আবেদনকারিকে অবশ্যই নূন্যতম ১৮ বছর বয়স্ক হতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য ও ইমেইল ঠিকানা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। নিবন্ধনকালে কয়েকটি ছবি জমা দিতে হবে, যেগুলোর উপর নির্ভর করে যাচাই করা হবে কন্ট্রিবিউটর হওয়ার যোগ্যতা। এই ছবিগুলোর কপিরাইট আবেদনকারির নিজের না হলে সবগুলো বাতিল করা হবে।
স্ট্যান্ডার্ড বা এক্সটেন্ডেড লাইসেন্সের অধীনে অন ডিমান্ড ডাউনলোডের মাধ্যমে ছবি কেনা হলে রয়্যালটির হার সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ। আর ডিপোজিট ফটোসের সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানগুলোর সঙ্গে ছবি কেনা হলে রয়্যালটির হার হবে নূন্যতম ২৫ সেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ২৭ থেকে ৩৩ টাকা (১ মার্কিন ডলার= ১০৯ দশমিক ৭৭৫৬ বাংলাদেশি টাকা)। রেভিনিউ শেয়ার স্পেশাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী কন্ট্রিবিউটররা মোট সাবস্ক্রিপশন আয়ের ৪০ শতাংশ পাবে।
বাকি ছয়টির মত ডিপোজিট ফটোসও পেওনিয়ার ব্যবহারের অনুমতি দেয়। তাই বাংলাদেশিরা এই গেটওয়েটি ব্যবহার করে সহজেই তাদের উপার্জিত অর্থ নিজেদের ব্যাংকে নিয়ে আসতে পারবেন।
অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার এই সেরা প্ল্যাটফর্মগুলো বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ফটোগ্রাফারদের পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনাররাও স্বপ্রতিভভাবে নিজেদের মেলে ধরছে প্ল্যাটফর্মের ক্রেতাদের সামনে। তাই ছবি তোলা, সম্পাদনা বা নির্মাণের দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে ছবির মার্কেটিং-এর। সুতরাং নিজের ছবিগুলোকে যথাযথভাবে দর্শকদের চোখের সামনে হাজির করতে হলে উপরোক্ত প্ল্যাটফর্মগুলো সুস্পষ্টভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি।