নওগাঁয় এই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান হলেন দুই নারী
নওগাঁ জেলার ৯৯টি ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নওগাঁ সদর ও রাণীনগর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে এই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দুই নারী নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিত নারীরা হলেন নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নে আফেলাতুন নেছা ও রানীনগর উপজেলা সদরের খট্টেস্বর ইউনিয়নের চন্দনা শারমিন রুমকি।
এছাড়া অপর ১৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা মার্কার ৯টি, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী পাঁচটি ও স্বতন্ত্র-বিএনপির চারটিতে নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে জেলা নির্বাচন অফিসার মাহামুদ হাসান বেসরকারিভাবে উল্লেখিত নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নে আফেলাতুন নেছা সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
একই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওর্য়াডের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ৬ বারের ব্যালটে ও একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বার আফেলাতুন নেছা এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নৌকা মার্কা নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জেলায় এই প্রথম একজন নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় বইছে খুশির বন্যা। ৬৫ বছরের এই প্রবীণ আফেলাতুন নেছার শিক্ষাগত যোগ্যাতা এসএসসি পাশ হলেও ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের অভ্যন্তরে থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের করেছেন সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা। বর্তমানে তিনি নওগাঁ সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছেন।
সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের দোগাছী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেলওয়ের স্টোর ডিপার্টমেন্টাল কর্মকর্তা তমিজ উদ্দিন প্রামাণিকের স্ত্রী আফেলাতুন নেছার তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। ১৯৭২ সাল থেকেই তিনি তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাঝে কয়েকবার তিনি ভোটে পরাজিত হলেও কখনো মানুষের পাশে থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি। কিন্তু মানুষের সেবায় সর্বদায় নিজেকে উজার করে দিয়ে আসছেন।
এই প্রতিক্রিয়ায় আফেলাতুন নেছা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মতো এত নগন্য একজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার কারণেই আজ আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হতে পেরেছি। এর জন্য আমি আমার ইউনিয়নবাসী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে চির কৃতজ্ঞ ও তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
চেয়ারম্যান বিজয়ী প্রার্থী বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার সংরক্ষণ, তাদের বিকাশ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও ঘরমুখো নারীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষে বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছেন, সেই চ্যালেঞ্জকে গতিশীল করতে ঐকান্তিকভাবে কাজ করে যাব।’
এছাড়া বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনমুক্ত এবং ডিজিটাল ইউনিয়ন হিসেবে বোয়ালিয়াকে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
অন্যদিকে, নওগাঁ রাণীনগর উপজেলার খট্টেস্বর ইউনিয়নে গৃহবধূ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত চন্দনা শারমিন রুমকি।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গৃহিনী থেকে একদম আনকড়া নতুন মুখ হিসেবে চন্দনা শারমিন রুমকি রানীনগর উপজেলার খট্টেস্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। রাণীনগর উপজেলা যুবলীগ নেতা মরহুম গোলাম মোস্তফার স্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন হেলালের ছোট ভাইবউ দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। স্বামী গোলাম মোস্তফা জীবিত থাকা অবস্থায় দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। গত ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গোলাম মোস্তফার আকষ্মিক মৃত্যুর পর গৃহের বাহিরে আসেন রুমকি। স্বামীর মতো রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন এবং মানুষের সেবায় নিজেকে যুক্ত করেন। আর সর্বশেষ স্বামীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষেই তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করলে দল তাকে মনোনয়ন দেন।
নির্বাচনে খট্টেশ্বর ইউনিয়নে রুমকির প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক এবং বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ফরহাদ মণ্ডল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফরহাদ হোসেনকে ১০ হাজার ৩৪২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন চন্দনা শারমিন রুমকি।
রুমকি জানান, তার স্বামী গোলাম মোস্তফার স্বপ্ন ছিল অত্র ইউনিয়নের জনগণের ভাগ্য ও জীবন মান উন্নয়নে নিরলস কাজ করার এবং সেবা দেওয়ার। কিন্তু তার আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাই স্বামীর স্বপ্ন পূরণে সরকারি যতো প্রকার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা প্রাপ্তদের মধ্যে সমবণ্টন করা হবে এবং ইউনিয়নকে মাদক, সন্ত্রাস ও বাল্যবিবাহমুক্ত এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেশের মধ্যে একটি সেরা ইউনিয়ন উপহার দিতে সবার সার্বিক সহযোগিতা চান তিনি। জনগনের পাশে থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে শেষ জীবন পর্যন্ত কাটাতে চান রুমকি। এছাড়া বিপুল ভোটে বিজয়ী করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় অত্র এলাকার জনগণ এবং দলীয় মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান চন্দনা শারমিন রুমকি।
এদিকে, নওগাঁ সদর ও রানীনগর উপজেলার ২০ ইউনিয়নে নিবার্চিতরা হলেন নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বোয়ালিয়া ইউনিয়নে মোছা. আফেলাতুন নেছা (আ.লীগ), তিলকপুর ইউনিয়নে রেজাউল করিম (আ.লীগ), চণ্ডিপুর ইউনিয়নে খুরশিদ আলম রুবেল (আ.লীগ), বলিহার ইউনিয়নের মাশরেফুর রায়হান মাহিন (আ.লীগ), বর্ষাইল ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম (আ.লীগ), শিকারপুর ইউনিয়নে কাজী রকুনুজ্জামান (আ.লীগ), বক্তারপুর ইউনিয়নে সারওয়ার কামাল চঞ্চল (স্বতন্ত্র-বিএনপি), কীর্তিপুর ইউনিয়নে নাজমুল হক হান্নান (আ.লীগ বিদ্রোহী), শৈলগাছী ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম হোসেন (আ.লীগ বিদ্রোহী), হাসাইগাড়ী ইউনিয়নে জসিম উদ্দিন (আ.লীগ বিদ্রোহী), হাপানিয়া ইউনিয়নে দেওয়ান মোস্তাক আহমেদ রাজা (স্বতন্ত্র, বিএনপি), দুবলহাটি ইউনিয়নে মখলেছুর রহমান আজম (আ.লীগ বিদ্রোহী)।
রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে খট্টেশ্বর-সদর ইউনিয়নে চন্দনা শারমিন রুমকি (আ.লীগ), গোনা ইউনিয়নে আব্দুল খালেক (আ.লীগ), মিরাট ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জিয়া (আ.লীগ), বড়গাছা ইউনিয়নে আব্দুল মতিন মাস্টার (আ.লীগ), কালিগ্রাম ইউনিয়নে আব্দুল ওহাব চাঁন (আ.লীগ-বিদ্রোহী), একডালা ইউনিয়নে শাহাজান আলী (আ.লীগ), কাশিমপুর ইউনিয়নে মখলেছুর রহমান বাব (স্বতন্ত্র-বিএনপি) ও পারইল ইউনিয়নে জাহিদুর রহমান (স্বতন্ত্র-বিএনপি) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।