রাজশাহীর দুই ইউনিয়নে ভোটের ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ
রাজশাহীর দুই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষিত ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার রাজশাহী নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন গোড়াগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের মো. মুখলেসুর রহমান ও গোগ্রাম ইউনিয়নের মো. হযরত আলী।
গত ১১ নভেম্বর এ দুটি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে রিশিকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুখলেসুর রহমান অটোরিকশা নিয়ে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হযরত আলী আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে জেতার পরও ভোটের ফল পাল্টে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ তুলে গতকাল রোববার তাঁরা দুজনেই জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আজ নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে বেলা ১১টার দিকে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেসুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন। তখন কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপি নেতা হযরত আলীও অবস্থান করছিলেন। মুখলেসুর রহমানের সংবাদ সম্মেলনের পাঁচ মিনিট পর হযরত আলী একই চেয়ারে গিয়ে বসে নিজের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুখলেসুর রহমান জানান, নির্বাচনে তিনি অটোরিকশা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলাম। সংবাদ সম্মেলনে ১০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষর দেওয়া ফলাফল শিট উপস্থাপন করেন। নির্বাচনে তিনি সাত হাজার ২২ ভোট পেয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শহিদুল ইসলাম টুলু পেয়েছেন ছয় হাজার ৩৪৬ ভোট। ফলে ৬৭৬ ভোটে জিতেছেন তিনি। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফলাফল যাওয়ার পর ঘোষণা দিতে গড়িমসি করা হয়। শেষে গভীর রাতে ফল পাল্টে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গোগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষর দেওয়া ফলাফল শিট অনুযায়ী ১০টি কেন্দ্রে আনারস প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৮০১ ভোট। আর নৌকার প্রার্থী মজিবর রহমান পেয়েছেন ৯ হাজার ২৮৭ ভোট। তিনি ৫১৪ ভোট বেশি পেয়ে জিতে যান। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁরও ফলাফল ঘোষণায় গড়িমসি করা হয়। শেষে গভীর রাতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দুজনেই অভিযোগ করেন, খুব অল্প ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে তাদের ফেল দেখানো হয়েছে। তারা বলেন, দিনভর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলেও পাল্টে দেওয়া হয়েছে জনগণের রায়। বিষয়টি নিয়ে দুজনেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে যান। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ না নেওয়ায় জেলা প্রশাসক ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে তাঁরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁদের বিজয়ী ঘোষণার করার দাবি জানান।
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসাররা রাতেই আমাদের একটা ফলাফল শিট দেন। আবার প্রার্থীরাও একটা শিট আনেন। তখন দেখা যায় দুজনের ফলাফল শিট এক নয়। তাই প্রিসাইডিং অফিসারকে রাতে আবার ডেকে এনে যাচাই করা হয়। এরপর ফল ঘোষণা করা হয়। ফল পাল্টানোর অভিযোগ সঠিক নয়।’