৮৩৫ ইউপিতে ভোট শেষে চলছে গণনা, ফলের অপেক্ষা
সংঘর্ষ, হামলা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ধাপে ২৬টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এখন ভোট গণনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটগণনা শেষে রাতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।
এদিকে নির্বাচনি সহিংসতায় বিভিন্ন এলাকায় হামলা ও দুপক্ষের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
সারা দেশে দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এ ভোট নিয়ে একদিকে রয়েছে উত্তেজনা। অন্যদিকে রয়েছে অজানা শঙ্কা।
এই ধাপের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় বাধ্য হয়ে ১০ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারের ইউপি নির্বাচনে ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্বাচন কমিশন অনেকটা অসহায়।
এদিকে, ঘরে ঘরে বা পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়ে নির্বাচনি সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
নরসিংদীসহ কয়েকটি এলাকায় সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘এ জাতীয় ঘটনা এভাবে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যায় না, বাস্তবতা হলো এটা। ঘরে ঘরে, মহল্লায় মহল্লায় পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে এ জাতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা থামানো যায় না। এর একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহনশীলতা। নির্বাচনসুলভ আচরণ করতে হবে।’
ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপিতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হলেও আজ ভোটগ্রহণ হয়েছে ৮৩৫টিতে। কেননা পাঁচ ইউপিতে সব পদে জনপ্রতিনিধিরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাত ইউপিতে ভোট স্থগিত করেছে ইসি এবং একটি ইউপির ভোট বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে আট হাজার ৪৯২টি। মোট ভোটার হচ্ছে এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে এ ধাপে ১৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
ইসি সূত্র বলছে, ৮৩৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন তিন হাজার ৩১০ জন, সংরক্ষিত নারী প্রার্থী নয় হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। এ নির্বাচনে মোট ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় টহলে রয়েছে। তাঁরা আগামীকাল পর্যন্ত টহলে থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
জানা গেছে, এ নির্বাচনে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ইসি। স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ওসিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় একজন নির্বাচন কমিশনার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, থানার ওসিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ওসিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন। পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে র্যাব-বিজিবি লাগে না।
এদিকে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, মাদারীপুরসহ ১০টি জেলায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৮১টি চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী
দ্বিতীয়ধাপের ভোটে ১৮ জেলার ২৮ উপজেলায় ৮১ জন ইউপি চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় পাঁচ জন, ভোলার দৌলতখানে একজন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে একজন, নারায়ণগঞ্জ সদরে দুজন, রূপগঞ্জে তিন জন, শেরপুর সদরে তিন জন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে তিন জন, জামালপুর সদরে পাঁচ জন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে তিন জন, কুমিল্লার লাকসামে পাঁচ জন, তিতাসে একজন ও মেঘনায় একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন।
একইভাবে চাঁদপুর সদরে দুজন, ফেনীর ফুলগাজীতে তিনজন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে একজন, মাদারীপুরের কালকিনিতে একজন, শরীয়তপুর সদরে তিন জন, খুলনা সদরে একজন, মাগুরা সদরে তিনজন, যশোরের চৌগাছায় দুজন, বাগেরহাট সদরে তিনজন, মোল্লাহাটে একজন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একজন, সিরাজগঞ্জ সদরে তিনজন, রায়গঞ্জে তিনজন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাঁচজন, মিরসরাইয়ে ১৩ জন ও ফটিকছড়ি উপজেলায় তিনজন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনি সহিংসতায় এরই মধ্যে নরসিংদীতে চারজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজন ও মেহেরপুর দুজন নিহত হয়েছে। এ পর্যন্ত ইউপি ভোটে ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
সারা দেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউপির ভোট আজ। তৃতীয় ধাপে এক হাজার তিনটি ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। চতুর্থ ধাপের ৮৪০ ইউপিতে ভোট ২৩ ডিসেম্বর।