স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে ‘গেট আউট’ বলে ইসি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ
টাঙ্গাইল-৬ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুলকে ‘গেট আউট’ বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুলবুলের অভিযোগ, প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আপিল শুনানির নির্ধারিত সময়ের আগে ষড়যন্ত্রমূলক তাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরে তিনি প্রধান নির্বাচন কশিনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে গেলে তাকে হাইকোর্টে যেতে বলে বের করে দেওয়া হয়।
ইসি থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে আজ রোববার (১০ ডিসেম্বর) এই অভিযোগ করেন বুলবুল। এ সময় তিনি বলেন, তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তিনি হাইকোর্টে যাবেন।
কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল বলেন, ‘আমার সিরিয়াল নম্বর ৪৪। ইসির দেওয়া সময় অনুযায়ী, সিরিয়াল এক থেকে ২০ হলো সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা, ২১ থেকে ৪০ হলো বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা। ৪১ থেকে ৬০ হলো দুপুর ১২টা থেকে ১টা। সেখানে আমি সময়মতো এসেছি। এমনকি আধা ঘণ্টা আগে এসেছি। দাঁড়িয়ে আছি। তারা বলল, আপনার তো ১২টায়, অপেক্ষা করুন। স্বাভাবিকভাবে সেখানে যাওয়ার দরকার নেই। পরে হেয়ারিংয়ের (শুনানি) সময় গেলে তারা বললেন, আপনার শুনানি হয়ে গেছে। আপনি রিজেক্টেটেড।’
এ সময় ‘মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে’ দাবি করেন বুলবুল।
‘আপনি সময় মতো উপস্থিত ছিলেন?’—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে এই স্বতন্ত্রপ্রার্থী ফের বলেন, ‘এখনও তো ১২টা বাজেনি। ১২টা বেজেছে? আমার টাইম ১২টায়।’
এই স্বতন্ত্রপ্রার্থী জানান, এরপর তিনি সিইসির কাছে যান। সিইসির কাছে সব বিষয় তুলে ধরেন। কিন্তু, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং উচ্চ আদালতে যেতে বলা হয়েছে।
‘কে এটা বলল?’ জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার।’ কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার শুনানি হয়ে গেছে। আপনি হাইকোর্টে যান।’
বুলবুল আরও বলেন, ‘আমার আইনজীবী আছে। আমার প্রশ্ন, কেন তারা আগে শুনানি করবে?’ ওই সময়ে আপনি উপস্থিত ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তো টাইমই আসেনি, আমি কেন সেখানে থাকব?’
আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি হয়েছে জানালে সিইসি কী বলেছেন, এমন প্রশ্নে বুলবুল বলেন, ‘গেট আউট। আপনার ল’ইয়ার (আইনজীবী) কিছু বলেনি। আমি বলেছি–আমার ল’ইয়ার বলেছেন।’
পরে বুলবুলের আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আইনজীবী, আমাকে আগে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। আই ওয়াজ সিটিং দেয়ার (আমি সেখানে বসা ছিলাম)। আমি শুনলাম, ৪৪ নম্বর আইটেম অ্যাকর্ডিং টু দেয়ার রুলস, আমাদেরটা ১২টার পরে তিন নম্বর আইটেম। আমি বললাম, আই ওয়াজ নট প্রিপেয়ার্ড (আমি প্রস্তুত নই)। আমি ওখানে ডেস্কে গিয়ে বললাম, আমার আইটেমটা ৪৪, যেটা ১২টার সময় শুনানির কথা। তারা বললেন—না, না, এগিয়ে গেছে। তখন আমি যখন উপস্থাপন করছিলাম, তারা বলল আপনার কাগজগুলো কই? আমার ক্লায়েন্ট আউট সাইডে (বাইরে)। আমাকে ১০ মিনিট সময় দেন। তারা আমাকে ১০টা মিনিট সময় দিলেন না। আমি যথাযথ উপস্থাপন করলাম, কারণ তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে ইলেকশন (নির্বাচন) করেছিলেন। সেই লিস্টটা আমি তাদেরকে দেখালাম এবং বললাম, উনি যখন এটা জমা দিয়েছিলেন, টাঙ্গাইলের রিটার্নিং কর্মকর্তা উনার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন পরপর দুদিন। আমার হাম্বল প্রেয়ার (বিনীত প্রার্থনা), যেহেতু জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর দরকার ভোটকে নিয়ে আসার জন্য সেজন্য আমি এটি মঞ্জুরের জন্য বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি। তো উনারা বললেন, দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে যে সিলেক্ট করা হয় সেখানে সিরিয়াল নম্বর ছিল না, ইট ইজ আডমিটিডেড। তখন তারা বলল, করতে পারবে না। তখন আমি চলে আসলাম। উনাকে (বুলবুল) খবর দেওয়ার পর উনাকে নিয়ে সেখানে গেলাম। উনি যখন উপস্থাপন করছিলেন তখন নির্বাচন কমিশনারের কয়েকজন বললেন, আপনার সময় ১২টায়, এটা বলেননি। এটা কয়েকবার বলে আইনজীবীর ওপর ব্লেম (মিথ্যা অভিযোগ) এলো। আমি যখন জোর দিয়ে বললাম, আমি কয়েকবার বলেছি, ১০ মিনিট আমাকে সময় দেন। এটা ১২টায় হবে...আমি যে বারবার প্রার্থনা করেছি, একটু সময় দেন তারা শোনেননি। ওখানে তারা মিথ্যে প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছে ব্লেম দিচ্ছিল আমার বিরুদ্ধে। যখন আমি প্রমাণ করেছি, তখন উনারা বললেন যে, পুলিশ দিয়ে বের করে দাও।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘একটা নির্বাচন কমিশন, যেখানে ছয় ছয়জন যদি ইনফ্রন্ট অব দ্য মিডিয়া (মিডিয়ার সামনে), ইনফ্রন্ট অব দ্যা ল’ইয়ার, ইন ফ্রন্ট অব দ্য ভোটার, সেখানে যদি তারা না শোনার ভান করে, যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে, এই কমিশন জাতিকে কী দিতে পারে?’
এক প্রশ্নে টাঙ্গাইল-৬ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল বলেছেন, আমি একজন আইনজীবী। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আমি অবশ্যই হাইকোর্টে যাব।