দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে বিরতিহীন, চলবে আটটা-চারটা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আজ রোববার (১০ ডিসেম্বর) এক ইসির পরিপত্র-১২-তে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি, ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা, পুনঃভোটগ্রহণ, পুনর্নির্বাচন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার, প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার, ডাকযোগে সরাসরি নির্বাচন কমিশনে ফলাফল প্রেরণ বিষয় উল্লেখ করে এই পরিপত্র জারি করা হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৪ অনুসারে রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সাপেক্ষে, ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। আগামী ৭ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ভোটগ্রহণের দিন ও সময় উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার জন্য আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। এবং তার একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠাবেন।
পরিপত্রে আরও যা বলা হয়েছে
ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা : প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে যদি কোনো সময় ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত বা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুনরায় শুরু করা সম্ভব না হয়, তাহলে তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৫-এর বিধান (পরিশিষ্ট-ক) অনুসারে ভোটগ্রহণ বন্ধ করবেন এবং নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘটনা জানানোর পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানাবেন।
ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত কোনো স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হেফাজত থেকে বেআইনিভাবে ও জোরপূর্বক অপসারণ করা হলে বা দুর্ঘটনাক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা হলে বা হারিয়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্থ বা বিকৃত হলে যেক্ষেত্রে ওই ভোটকেন্দ্রের ফলাফল নির্ধারণ করা যাবে না, সেক্ষেত্রেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্রুত ওই ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের নিকট একটি প্রতিবেদন পাঠাবেন এবং দ্রুত সময়ে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিয়ে নতুনভাবে ভোটগ্রহণের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন।
বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রে পুনঃভোটগ্রহণ : যে ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হবে, সেই ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ব্যতীত যদি ওই নির্বাচনি এলাকার ফলাফল বাকি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল দিয়ে নির্ধারিত না হয়, তাহলে কমিশন ওই ভোটকেন্দ্রে পুনঃভোটগ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে ওই ভোটকেন্দ্রে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণের জন্য একটি দিন ও সময় ধার্য করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।
এ বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়, ‘মনে রাখবেন—এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রাধীন সকল ভোটার ভোট দিতে পারবেন এবং বন্ধ ঘোষিত নির্বাচনে ভোট গণনা করা যাবে না।’
কতিপয় ক্ষেত্রে কমিশনের নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ৯১-এর বিধান অনুসারে, কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে ন্যায়ানুগ ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে যেকোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন (পরিশিষ্ট-খ)।
তা ছাড়া, কোনো ব্যালট পেপার নাকচ বা গ্রহণসহ এই অধ্যাদেশ বা বিধিমালার অধীন কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ, ন্যায়ানুগ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও ক্ষমতা প্রয়োগসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আদেশ প্রদান করতে পারবেন।
ডাকযোগে ভোটদান : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৭-এবং ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ধারা-৮ অনুসারে ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো কোনো শ্রেণীর ভোটাররা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন এবং কী পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তা ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। এ সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসারের করণীয় কী, তা-ও বিশদভাবে ওই অনুচ্ছেদে জানানো হয়েছে। ডাকযোগে ভোটদান সম্পর্কে গত ১৬ নভেম্বর তারিখে জারি করা পরিপত্র-৩-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে। এ সকল ব্যালট বাক্স ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার বাক্স ব্যবহার করা যাবে না। কোনো ভোটকক্ষে একই সময়ে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা যাবে না। যখন একটি বাক্স ভর্তি হয়ে যাবে তখন ওই বাক্সটি উপস্থিত সকলের সামনে সিল করে (লক করে) নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে এবং ভোটকক্ষে ওই বাক্সের স্থলে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য একটি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ভোটগ্রহণের জন্য রাখতে হবে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সটি এমন স্থানে রাখতে হবে, যা উপস্থিত প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট ও ভোটকেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকে এবং সেখানে ভোটারগণ সহজে পৌঁছতে পারেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার প্রদর্শন : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২০-এর দফা (২) অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে প্রদর্শন করতে হবে। সুতরাং, অনুগ্রহপূর্বক স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোস্টার ছাপিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রদর্শনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে বিতরণ করবেন।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত পোস্টার প্রদর্শন : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৯ অনুসারে যে সকল ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন, অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সম্বলিত একটি পোস্টার নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি মুদ্রণ করা হয়েছে। ওই মুদ্রিত পোস্টারের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই ভোটকেন্দ্রের গুরত্বপূর্ণ প্রবেশপথে ও ভোটকেন্দ্রের প্রকাশ্য স্থানে ওই পোস্টার প্রদর্শনের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতে হবে এবং ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার যোগ্য ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই অবাঞ্ছিত ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণ চলার সময় ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ প্রদান করবেন।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কর্তৃক ডাকযোগে সরাসরি নির্বাচন কমিশনে ভোটগণনার বিবরণী প্রেরণ : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৩৬-এর দফা (১৫)-এর বিধান অনুসারে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্র হতে সরাসরি ডাকযোগে নির্বাচন কমিশনে ভোটগণনার বিবরণীর এক কপি পাঠাবেন। এজন্য প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে বিশেষ খাম সরবরাহ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুদ্রিত খাম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিকট পাঠানো হবে। ভোটগ্রহণের দিন পোস্ট অফিসসমূহ ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে বিশেষ খাম নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে তার জন্য ডাক বিভাগকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হবে।