যে কারণে প্রার্থিতা হারালেন প্রতিমন্ত্রীর ভাই দুর্জয়
উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এমন সতর্কবার্তা একাধিকবার বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু, প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলেছেন। এসব অভিযোগ জমা হতে থাকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে। কখনও কখনও ইসি সেসব প্রার্থীদের তলব করেছে। করেছে সতর্ক। তারপরও প্রার্থী, তার সমর্থক এবং মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা; অনেকের বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে প্রচার-প্রচারণা চালানোর অভিযোগ আছে।
এমন বাস্তবতায় একাধিকবার সতর্ক করার পরও কাজ না হওয়ায় আজ বুধবার (১৫ মে) নির্বাচন কমিশনে তলব করে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে মো. জামিল হাসান দুর্জয়ের প্রার্থিতা। আজ বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে শুনানি শেষে এ তথ্য জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
আগামী ২১ মে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া জামিল হাসান দুর্জয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা, পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলীর ছেলে।
জানা গেছে, প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে একাধিকবার জামিল হাসান দুর্জয়কে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই যাচ্ছিলেন। সবশেষ তাকে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তলব করা হয়। বুধবার প্রার্থীর শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন বারবার নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করায় মো. জামিল হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে জামিল হাসানকে কমিশনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আপনি ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী। আপনি গত ২১ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ও চত্বরের বাইরে আনুমানিক বেলা ১১টা ১০ মিনিটে আপনার কর্মী সমর্থকরা শোভাযাত্রা বা শোডাউনসহ মিছিল করেন এবং এতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় আপনাকে ২১ এপ্রিল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে আপনি নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারপূর্বক ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, পরে আপনি ২৭ এপ্রিল বিকেল ৫টায় গাজীপুর সদর উপজেলাধীন বাঘের বাজার এলাকায় সারাহ গার্ডেনে প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুমানিক ৪০০ জন কর্মী সমর্থক নিয়ে জনসভা করার চেষ্টা করেন। ওই বিষয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইসতিয়াক মজনুন ইশতি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৫ ও ৭ লঙ্ঘনের দায়ে আপনার উপস্থিতিতে আপনার সমর্থক মো. আক্তার হোসেনকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুসারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ইসির চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনি ৭ মে আনুমানিক বেলা ১২টার সময় আনুমানিক এক হাজার কর্মী সমর্থক নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনে উত্তর দিকে মসজিদ মার্কেট এলাকায় বিশাল প্যান্ডেল করে বিনা অনুমতিতে জনসভাসহ দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৭(খ), ৭(গ) এবং ১৭(খ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাইখা সুলতানা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাইখা সুলতানা পুনরায় একই স্থানে বিনা অনুমতিতে সভা আয়োজন এবং জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগ পান। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আয়োজনস্থলে আপনাকে বক্তৃতারত অবস্থায় এবং আপনার প্রায় এক হাজার কর্মী সমর্থকসহ দেখতে পান। পরে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ৭ (খ), ৭ (গ) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৩ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হলে আপনি এবং আপনার সমর্থকসহ সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়াসহ হুমকি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীপুর, গাজীপুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে আপনিসহ আপনার কর্মী সমর্থকরা হুমকি দেওয়াসহ অশোভন আচরণ করে মিছিল করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে দেখেন, যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৭, বিধি ১১, বিধি ১৮ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ এর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এ বর্ণিত বিভিন্ন বিধি ভঙ্গ করছেন। আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ এ বিধিমালায় বর্ণিত দণ্ড দেওয়ার পরও নির্বাচনি আচরণ মেনে চলছেন না, যা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তরায়।