কাটছে যেমন প্রভার জীবন
রূপ আর অভিনয়গুণ দুইয়ের সমন্বয় যেন সাদিয়া জাহান প্রভা। দীর্ঘদিন ধরেই বিনোদন অঙ্গনে। ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ। যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে অভিনয়দক্ষতা। হালে ‘পরের মেয়ে’ ধারাবাহিকে তাঁর ‘নাজিফা’ চরিত্রটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্যামেরা-অ্যাকশন ছাপিয়ে ব্যক্তিজীবন কেমন কাটছে প্রভার, এ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। আর ভক্তদের সেই তৃষ্ণা মিটিয়েছেন রূপবতী প্রভা।
গেল জানুয়ারির মাঝামাঝি জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে শুরু হয় নতুন ধারাবাহিক ‘পরের মেয়ে’। আর প্রচারের দুই মাস পূর্ণ না হলেও এরই মধ্যে দর্শকমহলে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ধারাবাহিকটি। শুধু গৃহে টিভির পর্দায় দর্শক এ নাটক দেখছেন এমন নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও নন্দিত হচ্ছে। জীবন ও বাস্তবতার গল্প নিয়ে এ ধারাবাহিক নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। প্রতিটি চরিত্র এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। মনোযোগের কেন্দ্রে আছেন প্রভা।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার একটি শুটিং হাউসে ‘পরের মেয়ে’ ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় প্রভার। জানান, ‘পরের মেয়ে’ নাটকে নিজের চরিত্র সম্পর্কে। শুধু তা-ই নয়, জীবনের প্রথম ক্যামেরার সামনে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে প্রেম-বিয়ে নিয়েও মুখ খোলেন এ অভিনেত্রী। আসুন, পড়ে নিই যেমন কাটছে প্রভার জীবন—
ক্যামেরার সামনে প্রথম
তখন ভোর। জীবনে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার মুখোমুখি হবেন প্রভা। সেটা ছিল একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের শুট। প্রথমবার, তাই খুব নার্ভাস ছিলেন। ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের কমতি ছিল না প্রভার।
প্রথম আয়ের টাকা
নিজের প্রথম উপার্জন। হাতে এলে যে কারো শরীর-মনে শিহরণ খেলে যায়। সবাই চান, প্রিয়জনকে কিছু উপহার দেবেন। প্রভাও ব্যতিক্রম নন। প্রথম আয়ের টাকা কীভাবে খরচ করেছিলেন প্রভা, জানতে চান? এ সুন্দরী জানালেন, সেই টাকা দিয়ে বাবা-মা, ভাই ও নিজের জন্য উপহার কিনেছিলেন।
প্রিয় রং
রং নিয়ে মানুষের মনে কথকতার অন্ত নেই। কেউ বলেন, সাদা রঙে যেন শুচি-শুভ্রতার গন্ধ মেলে। কেউ বলে, বেদনার রং নীল। প্রেমের প্রতীক লাল। সেসব উপমা-তুলনা যা-ই হোক, প্রিয় রং ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন। প্রভার প্রিয় রং কী। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘আমি রঙের সঙ্গে খেলি!’ রং ব্যাপারটাই প্রভার পছন্দের। আর সে কারণে প্রভা এত রঙিন! যদি একটি রঙের কথা বলতেই হয়, তবে সাদার প্রতি দুর্বল তিনি। সাদা শাড়ি, সাদা কামিজ, সাদা টপস, অর্থাৎ সাদা যেকোনো পোশাকই পছন্দ প্রভার। আর দ্বিতীয় পছন্দ মেরুন।
যেমন মেয়ে প্রভা
ভুল-ত্রুটি, দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। জ্ঞানীদের প্রশ্ন, নিজেকে নিজের চেয়ে কে ভালো চেনে? অর্থাৎ আত্মমূল্যায়ন। প্রভা মনে করেন, তাঁর ভালো দিক হলো তিনি বোকা। আর মন্দ দিকও ওই একই। শুনুন তাঁর মুখে, ‘আমার ভালো দিক—আমি খুবই সাদামাটা, বোকা। আমার মন্দ দিক—আমি খুব বোকা আর বদমেজাজি। যদিও আমার রাগ বেশিক্ষণ থাকে না।’
প্রথম প্রেমের চিঠি
প্রভা প্রথম প্রেমের চিঠি কবে পেয়েছিলেন, জানলে চমকে যাবেন। সেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়! তা-ও ঈদের সময়। একটা কার্ডের মধ্যে লেখা ছিল। চিঠিটা পেয়ে খুব ভয় পেয়েছিলেন প্রভা। প্রভা ভেবেছিলেন, ‘আম্মু যদি জানতে পারে, আমাকে তো মেরেই ফেলবে!’ এরপর প্রভা তাঁর তুতো বোনকে চিঠিটা দেখান। ওই বোন তখন সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তারপর দুজন মিলে সেই চিঠিটা কুচি কুচি করে কেটে ফেলেন, পাছে ধরা পড়ে যান সেই ভয়ে। তারপর সেই টুকরো অংশগুলোও আলাদা আলাদা করে লুকিয়েছিলেন।
প্রভার প্রেমিক হতে হলে
রূপে-গুণে অনন্যা প্রভা। আর এই রঙিন মানুষটির প্রেমিক হতে যে হাজারো মানুষ মুখিয়ে আছেন, তা আর বলতে! তাই গুণী প্রভার সঙ্গে পিরিত করতে হলে তাঁরও গুণ থাকা চাই। প্রভা আশ্বস্ত করলেন, গুণের তালিকা দীর্ঘ নয়। বরং প্রেমিক বা পাত্রের দুটি গুণ থাকলেই চলবে। একটি—শতভাগ বিশ্বস্ত হতে হবে। আর দুই নম্বর—কোনোভাবেই মাদকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা যাবে না। ব্যস, এই গুণ দুটো হলেই চলবে। এ দুটো ছাড়া আর সবকিছু মানিয়ে নিতে পারবেন। প্রভা ভালো করেই জানেন, ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। তবে কেউ যদি প্রতারণা করে, তখন সম্পর্কের আর কিছু থাকে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
হালে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া যেন জীবন অর্থহীন, এমনটা ভেবে বসেন অনেকে। এর যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমন রয়েছে মন্দ দিকও। তারকাদের প্রতি এমনিতেই অন্তর্জালবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। একটি ছবি পোস্ট হলো, আর অমনিই চলল মন্তব্যের হিড়িক। মাঝেমধ্যে কথার লাগাম হারিয়ে ফেলেন অনেকে। এ কারণে মন্তব্য-ঘরে ঢুঁ মারেন না অনেক তারকা। প্রভা জানালেন, তিনি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই গ্রহণ করতে জানেন। একসময় নেতিবাচকতার প্রভাবে তাঁকে ধ্যানস্থ হতে হয়েছিল। সেই দুঃসময় উতরে গেছে। এখন তাঁর সোজা কথা, যাদের নিজের কমতি আছে, তারাই নেতির দ্বারস্থ হয়।
প্রভা কি নিঃসঙ্গ
তারকাদের প্রেম-বিচ্ছেদ-বিয়ে নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ অনেক। প্রেমের গুঞ্জনে বারবার খবরের শিরোনাম হন তাঁরা। তবে দীর্ঘদিন প্রেমের গুঞ্জনে নেই প্রভা। প্রভা কি নিঃসঙ্গ, সরাসরি এই প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। জানালেন, বাস্তব জীবনে তিনি খুব সুখী মানুষ। একদমই দুঃখবিলাসী নন। অল্পে সন্তুষ্ট তিনি, প্রত্যাশা কম। জীবনে সব রকম ঝামেলা-জটিলতা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। কাছের বন্ধুরা তাঁকে আদর করে বলেন, তিনি নাকি অল্প বোঝেন, তাই এত সুখী!
বিয়েতে ভয়
প্রভার জীবনে দুঃসময় ছিল। বিচ্ছেদের মুখোমুখি হয়েছেন। সেসব দিন অবশ্য পার করেছেন বহু আগে। তবে এখনো বিয়েতে ভয় তাঁর। কারণ কী? প্রভার ভাষ্যে, ‘বিয়ে করতে ভয় পাই, কারণ স্বামী যখন প্রতারণা করবে, তারপর তো আমি ছেড়ে দেব। তখন তো দোষ আমার হবে। স্বামী যখন মাদক নেবে, তখন তো আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু দোষ তো আমার পড়বে। সমাজব্যবস্থাটাই এ রকম। এ জন্য বিয়ে করতে ভয় পাই।’
রাতে ঘরে ফিরে
সারা দিন শুটিংয়ে ব্যস্ততা প্রভার। শুটিংয়ের প্রয়োজনে রাত করে ঘরে ফিরতে হয়। ফিরে নিজেকে কি কখনো সঙ্গীহীন বা নিঃসঙ্গ মনে হয়েছে? প্রভার উত্তর, ‘আমার বাবা যখন আমাকে ১১টার সময় ফোন দেয়, যখন আমি গেটের সামনে থাকি অথবা বাসার কাছাকাছি আসতে থাকি, শুটিং তো শেষ হয় ১০-১১টার সময়, সে সময় যে মুখটা আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, বাবার মুখটা দেখার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।’ এবার কথায় জোর এনে বললেন, ‘একদমই নিঃসঙ্গ লাগে না, একদমই না।’
মা হওয়ার ইচ্ছে
‘পরের মেয়ে’ নাটকে প্রভার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিয়ানা। বাস্তব জীবনে মা না হলেও নাটকে তাঁর মাতৃত্বগুণ আর অভিনয়দক্ষতায় উচ্ছ্বসিত দর্শক। মা হতে ইচ্ছে করে? প্রভা জানান, আরিয়ানার সঙ্গে অভিনয় করার আগে কখনো মা হতে ইচ্ছে করেনি। আরিয়ানার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে, ওর আদরমাখা মুখ আর বাচ্চামিতে মনটা ভরে উঠেছে প্রভার। কোনদিন তাঁর মন খারাপ, সেটাও নাকি প্রভাকে দেখে বুঝে ফেলে ছোট্ট আরিয়ানা। আর তাই এখন প্রভার মনে হয়, ‘যদি আরিয়ানার মতো আমার একটা বেবি থাকত!’
বিয়ের পরিকল্পনা
আপাতত বিয়ের পরিকল্পনা নেই প্রভার। তবে বললেন, সময় বলে দেবে। তার মানে, ভবিষ্যতে ফের বিয়ের সানাই শুনতে পারেন ভক্তরা। এ সম্ভাবনা তো রইলই। এখন যেমন ‘মি-টাইম’ নিয়ে ব্যস্ত, তেমন না হয় আরো কিছুদিন কাটুক!
সৈয়দ জিয়াউদ্দিনের রচনায় ‘পরের মেয়ে’ পরিচালনা করছেন হাবীব শাকিল। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটের ব্যানারে নাটকটি প্রযোজনা করছেন কাজী রিটন। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন সাদিয়া জাহান প্রভা, গোলাম কিবরিয়া তানভীর, দিলারা জামান, মুমতাহিনা টয়া, শাওন ও শিশুশিল্পী আরিয়া অরিত্র।
‘পরের মেয়ে’ নাটকে আরো অভিনয় করেছেন জিয়াউল হাসান কিসলু, আদৃতা, আল মামুন, মুনিরা ইউসুফ মেমী, ইলোরা গওহর, হিন্দোল রায় প্রমুখ। প্রতি সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে নাটকটি।