খুঁটিনাটি বিষয়ের এত সমালোচনা করলে কাজই করতে পারব না : শিহাব শাহীন
জনপ্রিয় নির্মাতা শিহাব শাহীনের ঈদ নাটক ‘প্লাস ফোর পয়েন্ট ফাইভ’ বিগত ছয় দিন ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে বাংলাদেশে শীর্ষে অবস্থান করছে। এ ছাড়া তাঁর ‘রুনু ভাই’ নাটকও আলোচনায়। এর বাইরে তাঁর বেশ কিছু ঈদ নাটক অনলাইনে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এবারের ঈদ নাটক নিয়ে এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন গুণী এই নির্মাতা।
এনটিভি অনলাইন : ছয় দিন ধরে আপনার ‘প্লাস ফোর পয়েন্ট ফাইভ’ নাটক ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে বাংলাদেশে এক নম্বরে আছে। শুনেছেন?
শিহাব শাহীন : অনেকেই আমাকে ইনবক্সে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে, সবাই পছন্দ করেছে। ভালো লাগছে।
এনটিভি অনলাইন : নাটকটি এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
শিহাব শাহীন : এর পেছনে কয়েকটি ফ্যাক্টর রয়েছে; যার একটি হলো—নাটকটি হালকা মুডের, রুচিসম্মত কাজ। ভাঁড়ামো নেই। আবার আফরান নিশো-মেহজাবীন জুটিও এর কারণ হতে পারে। তা ছাড়া ফোর্থ ওয়াল ব্রেকিং বিষয়টা মানুষকে মজা দিয়েছে...। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি মেহজাবীন খুব ভালোভাবে করতে পেরেছেন। সব মিলিয়েই দর্শক নাটকটি পছন্দ করেছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার ‘রুনু ভাই’ নাটকও তো আলোচনায়...
শিহাব শাহীন : আলোচনা হচ্ছে, ভালো। নাটকটিতে আমি একটি ইস্যু ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। আমাদের সময়ে কাজিনদের মধ্যে অনেক বিয়ে হতো। অনেক সময় ছোটবেলা থেকেই তা ঠিক করে রাখা হতো। সময় পাল্টাচ্ছে, মানুষের মনও পাল্টাচ্ছে। আমাদের সন্তানেরা এখন আর এ ধারণাকে ভালোভাবে দেখে না। এই যে জেনারেশন থেকে জেনারেশনে মনোভাবের পরিবর্তন—কাজিন হচ্ছে কাজিন—এই বিষয়টাই আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি, কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হলে কী হয়।
এনটিভি অনলাইন : নাটকটির গল্প শেষ করেননি, মানে পার্ট-টু আসছে?
শিহাব শাহীন : অবশ্যই। যেহেতু একটি প্রশ্ন দিয়ে শেষ করেছি—বিয়ে তো করেছে, এখন সংসার করতে পারবে কি না? সুতরাং পার্ট-টু-তে আমরা সে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
এনটিভি অনলাইন : এই ঈদে আপনার অন্য নাটকগুলো...
শিহাব শাহীন : ‘স্বামীর দশটি বদঅভ্যাস’, ‘শূচিবাই’, ‘বিয়ে বিড়ম্বনা’, ‘রঙ্গিলা ফানুস’সহ আরও চার পাঁচটি কাজ আসবে।
এনটিভি অনলাইন : দর্শক শিহাব শাহীনের কাজ বলতেই বোঝে—খুব সিরিয়াস কাজ হবে, মেসেজ থাকবে। এবারও সে রকম কাজ হয়েছে, তবে কিছুটা ভিন্ন শিহাব শাহীনকে দেখা গেল এই ঈদে?
শিহাব শাহীন : হ্যাঁ। আমি সবসময় দর্শকের জন্য কাজ করেছি। এনটিভিতে যখন কাজ শুরু করি, প্রতি ঈদের দ্বিতীয় দিন এনটিভিতে আমার টেলিফিল্ম যাবে—এটা বাঁধা ছিল। প্রচুর টেলিফিল্ম করেছি এনটিভিতে। এখন টেলিফিল্ম বিষয়টি উঠে গেছে। এখন চল্লিশ মিনিটের কাজ করতে হয়, এখানে তো আর টেলিফিল্মের মতো বার্তা দেওয়া যায় না। এখন কন্টেন্ট মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হয়। ‘রুনু ভাই’-এ কাজিনের বিয়ে, ‘স্বামীর দশটি বদঅভ্যাস’-এ স্বামীরা আসলে কী কী কারণে স্ত্রীদের থেকে দূরে সরে যায়; এরপর ‘শূচিবায়ু’-তে আন-রোমান্টিক হাজব্যান্ড থাকলে কেমন হয়–সেটি দেখিয়েছি। ‘প্লাস ফোর পয়েন্ট ফাইভ’-এ একটি মেয়ের কনফিডেন্স ফিরে পাওয়ার গল্প বলেছি।
এনটিভি অনলাইন : এবারের ঈদ নাটকের সংলাপ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আপনি এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। সমালোচনার কারণ—আমাদের দর্শকরা বেশি সচেতন হচ্ছে নাকি অন্য কিছু?
শিহাব শাহীন : অন্য কারণই বেশি। এটি অনেক ক্ষেত্রে অ্যাটেনশন সিকারদের কাজ। অনেকে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়, লাইমলাইটে আসতে চায়; কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। যাঁরা সত্যিই আঘাত পেয়েছেন, তাঁরা অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছেন। এখন অন্য একটা সংলাপকে নিয়ে বলা হচ্ছে—এর মাধ্যমে কৃষিবিদদের গালি দেওয়া হয়েছে। এটা গালি কীভাবে হয়? আমাদের আরেকটু কম সেনসিটিভ হতে হবে, আরেকটু সহনশীল হতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : সহনশীল কি দর্শকদের হতে হবে, নাকি সমালোচকদের?
শিহাব শাহীন : সবারই সহনশীলতা বাড়াতে হবে। যাঁরা সমালোচনা করছেন, ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে, ভিন্ন কারণে সমালোচনা করছেন। এর আগের কিছু ইস্যুতে ক্ষোভ ঝাড়ার জন্য, অ্যাটেনশন সিক করার জন্য কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। প্রত্যেকটা ছোটখাটো খুঁটিনাটি বিষয়ের এত সমালোচনা করলে, আমরা তো কাজই করতে পারব না। এখন যদি নাটকে ‘কসাই’ বলে গালি দেই, তাহলে আবার এক শ্রেণি বিদ্রোহ করে বসবে। অথচ বহুবছর আগে আমাদের বাপ-দাদারা এসব বলেছেন। অনেকেই ‘কসাই’ বলে গালি দিয়েছেন। আমরাও সমাজের অংশ। দায়িত্ব নিয়েই সমাজের বিভিন্ন দিক আমরা তুলে ধরি।
সারা জীবন প্রেমের নাটক তৈরি করলে বলবেন—একই জিনিস; আবার ভিন্ন গল্পে কাজ করলেও অদ্ভুতসব সমালোচনা করবেন। কোথায় যাব আমরা নির্মাতারা? প্রত্যেকটা কথার খুঁত ধরলে কোনো কথাই বলা যাবে না। খুঁত ধরতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা অল্প এবং তারা খুব স্বার্থ নিয়েই এসব করে।
এনটিভি অনলাইন : কয়েক বছর আগে আমাদের নাটক বলতে একই ঘরানার প্রেমের গল্প ছিল। বিগত দুই-তিনটি ঈদে গল্পনির্ভর কাজ বেশি হচ্ছে...
শিহাব শাহীন : আগে কাজ কম হয়েছে। মাঝখানে কয়েক বছর তরুণদের কেউ কেউ প্রেমের নাটক বেশি বানিয়েছেন। অনেকে আমার মতো করে বানাতে গিয়ে হুবহু আমার নাটকই বানিয়ে ফেলেছেন। তবে, এখন বক্তব্য-নির্ভর ভিন্ন রুচির কাজ হচ্ছে। সেটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে দর্শকদেরও দেখতে হবে, নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে হবে। তাঁরা না দেখলে তো প্রযোজক পাওয়া যাবে না, কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। গতবার ‘বঙ্গের ব্যাডেড অন বুকস (বব)’ হলো, এ বছর হয়নি; এ বছর ‘সাত দুগুণে চৌদ্দ’ হল। এ ধরনের কাজগুলো দেখতে হবে। দেখলে পরের বার প্রযোজকরা এগিয়ে আসবে। সব কিছুর ব্যালেন্স থাকতে হবে। কাজও এমন হতে হবে তা যেন দর্শক বোঝে। দর্শকের মাথার ওপর দিয়ে গেলে তো তারা ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের দিকেই ঝুঁকবেন। আমরা যদি ভালো ভিন্নধর্মী কাজ না করতে পারি, তাহলে বিদেশি ইন্ডাস্ট্রির লাভ। যাঁরা বারবার সমালোচনা করছেন, তারা কি বিদেশিদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন কি না? সবাই এখন দেশীয় নাটক দেখছেন, সেটা হয়তো কারো কারো সহ্য হচ্ছে না।