চিরকুট থেকে টয়া-শাওনের সংসার
টিনের চালের ঘর। একটু দূরেই খড়ের চালের ছোট্ট ঘর। ছোটবড় গাছগাছালিতে পূর্ণ বাড়ির আঙিনা। ঘরের পেছনে দুটি গরু বাঁধা। খানিক বিশ্রাম নিতে চাইলে বসা যাবে বাঁশের ফালির মাচায়। মুহুর্মুহু কোকিলের ডাকে বুকে বেজে উঠবে বসন্তের কোনো সুরবাঁধা চরণ। বেজে উঠল শাওনের বুকেও। ওঁর গায়ে বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি। মুখে খুশির জৌলুশ এনে শাওন বসলেন মাচায়। চোখে লাগালেন রোদচশমা।
শাওনকে বললাম, কেমন চলছে টয়ার সঙ্গে নতুন সংসার? আশপাশে টয়া আছে কি না—এমন দেখার ভঙ্গি করে বললেন, ‘বিয়ের পর জীবনটা ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেছে!’ আমরা তখন ক্যামেরা ঠিক করছিলাম। শাওন পা দুলিয়ে মুঠোফোন ঘাঁটছিলেন। অজানা কেউ সম্ভবত ফেসবুকে তাঁদের বিয়ে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সেটা নিয়ে আক্ষেপ করলেন শাওন। বললাম, ফেসবুকের মন্তব্য যত না দেখা যায়, ততই মঙ্গল। শাওন হাঁক দিলেন, ‘বউ, আর কতক্ষণ লাগবে?’
একটি ঘরে পোশাক বদলাচ্ছিলেন টয়া। মিনিট দশেক পর নববধূ হাজির। তিনিও পরেছেন হলদে সালোয়ার-কামিজ। শাওনের কাছে আসতেই কি না কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার ডেকে উঠল কোকিল।
এমন চিত্রকল্পই ছিল ৪ মার্চ দুপুরে। বিয়ের পর প্রথমবার শুটিংয়ে এসেছেন টয়া-শাওন। নবদম্পতির চোখেমুখে উজ্জ্বল আভা। আলাপে দুষ্টুমি, খুনসুটি। মাত্র কদিন আগে অধিবর্ষের দিন, অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তাঁরা। সবে চারদিনের সংসার। এই ফাঁকে ‘মিনি হানিমুন’ও সেরে ফেলেছেন। চতুর্থ দিনেই গাজীপুরের পুবাইলের একটি শুটিংবাড়িতে হাজির। ‘পরের মেয়ে’ নাটকে জুটি বেঁধেছেন তাঁরা। ফাগুনের দুপুরে সেখানেই এ আলাপ।
ক্যামেরা অন। ‘আসো না, আমাকে একটু ধরো’ বলে শাওনকে জাপটে ধরলেন টয়া। প্রেমময় এ দৃশ্য শিহরণ ছড়াল গাছগাছালির লতায়-পাতায়, দূরের পুকুরের জলে উঠল ঢেউ। চলল এনটিভি অনলাইনের ক্যামেরা।
পুরো সাক্ষাৎকার দেখুন :
যেভাবে পরিচয়
প্রেমের উক্তিতে ভরা চিরকুটে নয়, ‘চিরকুট’ নামের একটি নাটকের সেটে টয়া-শাওনের কাছে আসার গল্প শুরু। এর আগে ২০১৫ সালে মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত ধারাবাহিক ‘নাইন অ্যান্ড আ হাফ’ থেকে দুজনের একসঙ্গে কাজ শুরু। শাওন বললেন, ‘ওই নাটকে আমরা প্রায় একবছর শুটিং করেছি।’ শাওনকে সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে টয়া বললেন, ‘না না না, একবছর শুটিং করলেও আমরা এক সিন (দৃশ্য) শুটিং করেছি।’ এর দুই-তিন বছর পর বিমানবন্দরে তাঁদের দেখা। টয়া বললেন, ‘তারপর আবার দুই-তিন বছর পর আরেকটা নাটকের সেটে। সেটা গত রমজানের ঈদে। ওখানে দেখা হয়েছে, কিন্তু কথা হয়নি।’
চিরকুটপর্ব
‘চিরকুট’ নাটকের শুটিং চলাকালে শাওন একটু অসুস্থ ছিলেন। সারা দিন একসঙ্গে শুটিং করেছেন। ওই সময় শাওনকে দেখভালও করেছেন টয়া। দুজন একসঙ্গে অনেক ছবি তুলেছিলেন। ভিডিও করেছিলেন। সেসব ছবি ও ভিডিও চালাচালির মাধ্যমে ভাব জমে ওঠে দুজনের।
প্রথম ঘনিষ্ঠতা
প্রথম কাছে আসাও ‘চিরকুট’ নাটকের সেটে। একটি আবেগময় দৃশ্যের শেষে শাওনকে আলিঙ্গন করেন টয়া। নির্মাতা তখনো ‘কাট’ বলছিলেন না। সে সময় টয়ার কপালে চুম্বনচিহ্ন এঁকে দেন শাওন। টয়া বললেন, ‘স্ক্রিপ্টে চুম্বনদৃশ্য ছিল না। নির্মাতা কাটও বলছিলেন না।’ কী আর করবেন। ক্যামেরার সামনেই ভেতরের আবেগ উগড়ে দিলেন দুজন। অবশ্য সবার সামনে এ ঘনিষ্ঠতায় ‘লজ্জা’ পেয়েছিলেন টয়া!
বিয়ের সিদ্ধান্ত
এরপর টয়া-শাওনের ঘোরাঘুরি। শাওন বুঝলেন, টয়ার সঙ্গে তাঁর মানসিকতায় যথেষ্ট মিল রয়েছে। যদিও পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারটি পুরো উল্টো। শাওনের ভাষ্যে, “যখন আমি বুঝলাম, মানুষটাকে আসলেই জীবনসঙ্গী করা যায়, তখন ওকে ডিরেক্ট বললাম, ‘দেখো ভাই, অনেক প্রেম-ভালোবাসা করেছি। আর প্রেম-ভালোবাসা করতে পারব না। বিয়ের জন্য এটাই সঠিক সময়। বিয়ে করব, প্রেম-ভালোবাসা করব না।’” এবং টয়াও একই উত্তর দিয়েছিলেন। টয়া বললেন, ‘আমাদের প্রেম করা হয়নি। খুব বেশি প্রেম করা একেবারেই হয়নি। দুজনেরই বাসা থেকে বিয়ের চাপ ছিল… মনে হয়েছিল, ও হাতছাড়া হয়ে গেলে আমি ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে যাব।’
বিয়ে
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি, অধিবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে এই দিনটিকেই বিয়ের জন্য বেছে নেন টয়া-শাওন। অল্পসংখ্যক কাছের বন্ধু ও আত্মীয়দের নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় ঢাকার একটি মিলনায়তনে। এর আগে হয় মেহেদি ও হলুদের অনুষ্ঠান।
মধুচন্দ্রিমা
এরই মধ্যে মধুচন্দ্রিমা সেরে ফেলেছেন টয়া-শাওন। বিয়ের পরের দিনই সিলেটে চলে যান। দুই রাত ছিলেন তাঁরা। তবে পরে বেশ সময় নিয়ে মধুচন্দ্রিমা সারবেন। শাওনের ভাষায়, ‘আমরা জাস্ট ফ্লেভারটা নিলাম। দেখি, এক ছাদের নিচে মানুষটাকে কতটা সহ্য করা যায়; যদিও আমাকে প্রচুর শাসনের মধ্যে রেখেছে—এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না।’ সঙ্গে সঙ্গে টয়া বললেন, ‘মোটেও না। আমি এমন কিছু করিইনি।’
রিসেপশন পার্টি
তো কবে হচ্ছে টয়া-শাওনের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা? শাওন বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ, খুব তাড়াতাড়ি। হতে পারে এ বছরের শেষের দিকে, আমরা খুব চেষ্টা করব। দুজনেরই খুব ব্যস্ত সময়। সামনে ঈদ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কতটুকু গুছিয়ে উঠতে পারব, জানি না। আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব বড় অনুষ্ঠান করে, সবাইকে দাওয়াত দিয়ে, ভরপেট খাইয়ে, যত অভিমানী মানুষ আছে তাদের অভিমান দূর করে, তাদের দোয়া নিয়ে জীবন শুরু করতে।’ সম্মতি জানালেন টয়াও।
পরের মেয়ে
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে শুরু হয় নতুন ধারাবাহিক ‘পরের মেয়ে’। জীবন ও বাস্তবতার গল্প নিয়ে এ ধারাবাহিক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আলোচনায় উঠে আসে। সৈয়দ জিয়াউদ্দিনের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করছেন হাবিব শাকিল। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটের ব্যানারে নাটকটি প্রযোজনা করছেন কাজী রিটন। এতে অভিনয় করছেন টয়া ও শাওন। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন সাদিয়া জাহান প্রভা। এ ছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন দিলারা জামান, গোলাম কিবরিয়া তানভীর, জিয়াউল হাসান কিসলু, আদৃতা, আল মামুন, মুনিরা ইউসুফ মেমী, ইলোরা গওহর, হিন্দোল রায় প্রমুখ। প্রতি সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে নাটকটি। এ পর্যন্ত ২১ পর্ব সম্প্রচার হয়েছে।
বিয়ের পর গতকালই প্রথম শুট করেন টয়া-শাওন দম্পতি। তাঁরা জানালেন, দর্শক এ ধারাবাহিক নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। শুধু টেলিভিশনের পর্দায়ই নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও এ ধারবাহিকের আবেদন ছড়িয়ে পড়েছে। তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কি নিজেকে পরের মেয়ে মনে হয়েছে? টয়ার সাফ জবাব, একদম না। শাওনের মা নাকি ছেলের আদরটুকুও বৌমাকে দিচ্ছেন। টয়ার ভাষায়, বিয়ের পর শাওন ‘পরের ছেলে’ হয়ে গেছে!