মনোবল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র : বাপ্পী
দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে অচলাবস্থা চলছিল। দেড় হাজারের বেশি সিনেমা হলের মধ্যে খোলা ছিল মাত্র ৬০টি। একসময় বছরে শতাধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও গত বছর মুক্তি পেয়েছে ৪৫টি। নির্মাণসংখ্যা দিন দিন কমছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। তবে দৃঢ় মনোবল থাকলে আর সরকারের সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র—এমনটাই প্রত্যাশা চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরীর।
সম্প্রতি চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরীর সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের দীর্ঘ আলাপ হয় মুঠোফোনে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রে করোনার প্রভাব এবং চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও মুখ খোলেন এ অভিনেতা।
এনটিভি অনলাইন : করোনার এই সময় কীভাবে কাটছে?
বাপ্পী : সবার মতো আমিও ঘরে বন্দিজীবন পার করছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে জগিং করি। যেহেতু বাইরে যাওয়া বন্ধ, তাই গ্যারেজেই জগিং করছি। তারপর নাশতা করে খবরের কাগজ নিয়ে বসি। অনলাইনে খবর দেখি। এভাবেই দুপুর হয়ে যায়। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর আমি ও বাবা মিলে সিনেমা দেখি। পুরোনো দিনের সিনেমা এবং বর্তমান সময়ের, দুটোই দেখা হয়। সন্ধ্যার পর কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আর অনলাইনে চলে আড্ডা। রাতে খাবার খেয়ে কিছুটা হাঁটাহাঁটি, তারপর একটা বই নিয়ে পড়তে বসি। বই পড়তে পড়তে ঘুম। এটাই করোনার সময়ে রুটিন।
এনটিভি অনলাইন : দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে অচলাবস্থা চলছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে চলচ্চিত্র কতটা ঘুরে দাঁড়াবে?
বাপ্পী : এটা সত্য, আমরা চলচ্চিত্রে ক্রান্তিকাল পার করছি। তবে আমার মনে হয়, অবশ্যই চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের মনোবল। আমরা যাঁরা চলচ্চিত্রের মানুষ, তাঁদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে। সময়োপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। তারপর যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে সরকারের সহযোগিতা। এ দুইটা ঠিক থাকলে অবশ্যই চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে।
এনটিভি অনলাইন : কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে?
বাপ্পী : চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য আমাদের চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রয়েছে। তবে অভিযোগ আছে, এফডিসিতে শুটিং খরচ অনেক বেশি। যে কারণে এফডিসির বাইরে বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। আমি মনে করি, এফডিসিতে খরচ কমাতে হবে। এফডিসিতে শুটিং করলে যে টাকা খরচ হয়, তার ৮০ শতাংশ মওকুফ করতে হবে। এটা অন্তত পাঁচ বছরের জন্য। এতে করে অনেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে উৎসাহিত হবে। নির্মাণ হবে নতুন নতুন চলচ্চিত্র।
এনটিভি অনলাইন : এফডিসি তো নিজের আয় দিয়ে আড়াই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন দেয়। ৮০ শতাংশ মওকুফ করলে প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে চলবে?
বাপ্পী : চলচ্চিত্রই যদি না থাকে, তবে বিএফডিসি দিয়ে কী হবে। তা ছাড়া তারা তো এখন আর নিজেদের খরচ দিয়ে চলতে পারছে না। সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা অনুদান নিয়ে গত দুই মাসের বেতন দিয়েছে। এর আগেও মার্চ মাসে অনুদান নিয়েছে বেতন দেওয়ার জন্য। অবশ্যই তাদের চলতে হবে। সে জন্য এফডিসিতে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। সেখান থেকে ভাড়ার টাকায় চলতে পারবে এফডিসি। এখানে যদি অনুদান দেওয়া হয়, তবে চলচ্চিত্র বাঁচাতে নির্মাণ ব্যয় কমানোর জন্যও ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে।
এনটিভি অনলাইন : নির্মাণব্যয় কমলেই ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র?
বাপ্পী : না, এটা প্রথম প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রয়োজন হচ্ছে সিনেমা হল। সারা দেশে অন্তত একশ সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে এফডিসির আন্ডারে। তাদের নিজস্ব সার্ভার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর থেকে যে টাকা আসবে, সেটা দিয়ে এফডিসি নিজের খরচ চালাতে পারবে। প্রযোজকরা সিনেমা মুক্তি দেওয়ার জন্য সিনেমা হল পাবে। এটা এফডিসিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। এফডিসির এই ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আমার তো মনে হয়, এই টাকার সঙ্গে আর কিছু টাকা যুক্ত করলেই সারা দেশে একশ সিনেমা হল হয়ে যায়।
এনটিভি অনলাইন : এই টাকায় মূল ভবন ও চারটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অধুনিক শুটিং ফ্লোর নির্মাণ করা হবে। এগুলো কি অপ্রয়োজনীয়?
বাপ্পী : অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এফডিসিতে চারটি সিনেপ্লেক্স দিয়ে আমরা কী করব যদি সারা দেশে সিনেমা হল না থাকে? আর আমাদের তো একটি মূল ভবন রয়েছে। যেখান থেকে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা হয়। আর দেশে যদি সিনেমা হলই না থাকে, তবে তো কেউ সিনেমা নির্মাণ করবে না। আধুনিক শুটিং ফ্লোর দিয়েই বা তখন কী হবে। এক হাজার ৬০০ সিনেমা হল থেকে বর্তমানে দেশে ৬০টি খোলা। করোনার পর কতটা হল খুলবে, তার ঠিক নেই। আমার মনে হয়, অর্ধেক হল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কোথায় মুক্তি পাবে সিনেমা? ৩০টা সিনেমা হল দিয়ে তো আর চলচ্চিত্র বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
এনটিভি অনলাইন : প্রতি উপজেলায় একটি করে সংস্কৃতিকেন্দ্র করা হচ্ছে। সেখানে ৪০০ আসনের একটি করে অডিটোরিয়াম থাকবে। সেখানে তো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে।
বাপ্পী : বিষয়টি আমি জানি, ২০১৯ সালে চলচ্চিত্র দিবসে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, সেখানে সিনেমা প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে আমরা কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নই। উনারা অনুগ্রহ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুযোগ দেবেন। তবে যে শুক্রবার সিনেমা মুক্তি পাবে, সেদিন যদি তাদের কোনো অনুষ্ঠান থাকে, তবে কি সিনেমা চালাতে দেবেন? সেটা সম্ভব নয়, কারণ তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনে ভবন নির্মাণ করছেন, আমাদের সিনেমা চালানোর জন্য নয়। তাঁরা যদি সারা দেশে সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেন, আমাদের জন্য সিনেমা হল নির্মাণ করতে সমস্যা কোথায়। দুটোই তো বাংলাদেশ সরকারের অধীনে।
সবকিছুর পরও আমি আশাবাদী, করোনার পর আবারও ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র। সরকার সব বিষয় বিবেচনা করবে। এফডিসিতে আধুনিক ভবন হবে। সারা দেশে সিনেমা হল হবে। আমরাও নতুন নতুন চলচ্চিত্র নিয়ে দর্শককে বিনোদন দিয়ে যাব। আপাতত সবাই বাসায় থাকুন, নিজে সুস্থ থাকুন। পরিবারকে সুস্থ রাখুন।