মন খুলে কাজ করতে পেরেছি বলেই সাড়া পাচ্ছি : বান্নাহ
এবারের ঈদে দশটি নাটক নির্মাণ করেছেন সময়ের আলোচিত নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ; যাঁর প্রায় প্রতিটি নাটক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অন্তর্জালে। কারণ হিসেবে এই নির্মাতা মনে করেন—তিনি যেটা করতে চেয়েছেন, সেটা পুরোপুরি ভাবে ও মন খুলে করতে পেরেছেন। এবারের ঈদ নাটক এবং নিজের ওটিটি পরিকল্পনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন গুণী এই নির্মাতা...
এনটিভি অনলাইন : এবার আপনার ঈদ দারুণ গেল বলা যায়?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : জি, আলহামদুলিল্লাহ। এবারের ঈদ খুবই, খুবই চমৎকার গেল, ভালো গেল, অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়ে গেল।
এনটিভি অনলাইন : ঈদে এনটিভিতে আপনার দুটি নাটক প্রচার হয়েছে, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : নাটক দুটি হচ্ছে—‘দ্য টিচার’ আর ‘নিকষিত’। দুটো নাটকে আসলে দু’রকম সাড়া পাচ্ছি। ‘দ্য টিচার’-এ সাড়া পেয়েছি সবচেয়ে বেশি এখন পর্যন্ত। কারণ খুবই স্বাভাবিক, এটা আগে এসেছে এবং এটা একটু পপুলার জনরার কাজ। ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’-এর প্রথম কাজ। তবে, আকষর্ণীয়ভাবে প্রথম কাজ হিসেবে রাফসান অনেক ভালো সাড়া পেয়েছে। ওর অভিনয় নিয়ে মানুষ প্রশংসা করেছে, যা আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। এবং মনে হয়েছে, আমি যে চয়েজটা করেছিলাম... চরিত্রটার জন্যই তো ওকে নেওয়া... আমার কাছে মনে হয়েছে ও ভালো করবে। আমাদের জায়গা থেকে এই ধরনের চরিত্র প্লে করার মতো অভিনেতা রাফসানকে নেওয়া উচিত। আর, সজল ভাইয়ের জন্য আমার বিশেষ, বিশেষ ভালোলাগা আছে। কেননা টিচার চরিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। নাম ভূমিকায় সজল ভাই যে অভিনয় করেছেন, সত্যি অসাধারণ। তিনি খুব প্রশংসা পেয়েছেন। সব মিলে আমরা সবাই অনেক প্রশংসা পেয়ছি। খুব দ্রুত মিলিয়ন ভিউ ক্রস করে গেছে; যদিও আমি এবার ভিউ গুনিনি কোনো কাজে। তারপরও একটা নম্বর চোখে পড়ল। ভালোবাসা আসলে বেশি পেয়েছি, কাজটার জন্য। সত্যিকার অর্থে কাজটিতে কিছু সমালোচনাও তৈরি হয়েছিল। সেগুলো সংশোধন করে অনলাইনে এখন আছে। কোনো ধরনের কোনো বিভ্রান্তি বা নেগেটিভ ম্যাসেজ দেওয়া আমার লক্ষ্য অন্তত ছিল না।
‘নিকষিত’ নিয়ে বলব—এ ধরনের কাজ আমি খুব বেশি করি না। নাটকটির গল্প সাইফুদ্দিন শাকিল এবং চিত্রনাট্য মামুনুর রশিদ তানিমের। এটা দুজনের প্রথম কাজ। তাঁদের প্রথম কাজ হিসেবে আমি বলব—তাঁরা ভালো করেছেন। তাঁদের লেখা বেশ প্রশংসিতও হচ্ছে। তাহসান ভাইয়ের অভিনয়ের কথা স্পেশালি অনেকেই বলছেন। বাবু ভাইয়ের অভিনয় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। মনিরা মিঠুর অভিনয় আলোচিত হচ্ছে, চমক নতুন হিসেবে ভালো করেছে, ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো ভাল করেছে। বাচ্চা কিন্তু দুজন অভিনয় করেছে ; তারা দুজনই যমজ। অভিনয় করার কথা ছিল একজনের। কিন্তু, শুটিং শুরু করার পর দেখলাম—একজন শুটিং করছে, আরেকজনের খুব মন খারাপ। সেজন্য দুজনই অভিনয় করেছে। অনেকেই হয়তো বুঝতে পারেনি।
এনটিভি অনলাইন : অন্য কাজগুলো...
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : আলহামদুলিল্লাহ, সবগুলো এক এক রকমভাবে যাচ্ছে। মানুষ ভালো কথা বলছে, সেটাই বড় ব্যাপার। সাধারণত, দশে দশ পাওয়া যায় না। আমার মনে হচ্ছে, এবার মনে হয় ১০-এ ১০ পেতে যাচ্ছি আমি। মনে হচ্ছে—মানুষ পছন্দ করছে সবগুলো কাজই। ‘মায়ের ডাক’ কাজটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে। দর্শক অসাধারণ ফিডব্যাক দিচ্ছে। আমি কাজটি নিয়ে মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা গুনতে গুনতে আপ্লুত। এ ছাড়া ‘সুইপার ম্যান’ নাটকের অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। সব শ্রেণির দর্শক পছন্দ করেছেন। আমার টিমের শামীম, জাহিদসহ সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। সবার পরিশ্রমের ফলে এমন কাজ হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : ‘নিকষিত’ নাটকের গল্প নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনা। কিন্তু, সে আলোচনার তুলনায় ইউটিউবে ভিউ নেই। এবারের ঈদের আলোচিত এমন বেশ কিছু কাজের ইউটিউবে তুলনামূলক ভিউ কম। এটার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : হ্যাঁ, নিকষিত নাটকের গল্প নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হয়েছে। পজিটিভভাবে সমালোচনাও হয়েছে। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে অনেক বেশি লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু, ওই অনুযায়ী ভিউ নেই, কারণ এটা স্লো পেইস কনটেন্ট। আমরা সাধারণ ইউটিউবে ফাস্ট পেইস কনটেন্ট দেখে থাকি, ‘নিকষিত’ ঠিক এই পেইসের কনটেন্ট নয়...। প্রতিদিনই তো ভিউ হচ্ছে, একটা না একটা সময় ভালো ভিউ হয়ে যাবে। আর, ভিউ নিয়ে আমি খুব বেশি কথা বলতে চাই না। ভিউ’র দিকে তাকিয়ে কোনো নাটকই বানাইনি। তবে ‘নিকষিত’ আমার খুব প্রিয় একটা কাজ। দর্শক নাটকটি দেখে ভালো ভালো কথা বলছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। এক শ্রেণির বোদ্ধা দর্শক আছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ।
এনটিভি অনলাইন : ফেসবুকে অফুরন্ত ভালোবাসা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এসব ভালোবাসার কারণ এবারের ঈদ নাটকে আপনার নির্বাচিত গল্প। মাঝে আপনাকে ভিউ নির্ভর কনটেন্টে কাজ করতে দেখা গেছে। সেটার কারণ কী? ভিউ নির্ভর কাজ বান্নাহর ক্যারিয়ার গ্রাফ কিছুটা নিম্নমুখী করেছে বলে মনে করেন কি?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : মাঝে ভিউ নির্ভর কনটেন্টে কাজ করেছি বলে মানুষের অভিযোগ থাকতেই পারে। এটা কাস্টিংয়ের ওপর নির্ভর করে। কাস্টিং দেখে মানুষ বলে—এটা ভিউ নির্ভর, এটা ভিউ নির্ভর নয়। আমি যেটা করেছি, আমি মনে করি বুঝে-শুনে করেছি। না বুঝে করিনি। আর আমার ক্যারিয়ার গ্রাফ নিয়ে আমি যে খুব বেশি চিন্তিত, সেটাও আসলে নয়। কারণ, করোনার কারণে সব পেশার মানুষ ধাক্কা খাচ্ছে, সবাই বিপদে আছে...। সেখানে আমার ক্যারিয়ার গ্রাফ এই এক-দেড় বছরে খুব বেশি ওঠা-নামা করল কি করল না, সেটা আমার কাছে খুব বেশি ভ্যালু রাখে না। হ্যাঁ, আমার ভালো লাগছে—এই ঈদে আমি যেটা করতে চেয়েছি, সেটা পুরোপুরিভাবে করতে পেরেছি। মন খুলে করতে পেরেছি বলেই সাড়া পাচ্ছি।
এনটিভি অনলাইন : নতুনদের নিয়ে কাজ করার জন্য আপনি বেশ আলোচিত। এবারের ঈদে রাফসানকে সুযোগ দিলেন, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। নাটক মুক্তির পর এখন সে আলোচনা-সমালোচনা কোন পর্যায়ে?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : অনেকে অনেক ধরনের কথা বলেছেন। অনেকেই বলেছে, ফুড ব্লগারকে কেন আমি কাজে নিলাম। তবে, সে সংখ্যাটা খুবই কম। দশ জনের মধ্যে হয়তো দুজন বা একজন বলেছেন। এখন এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমাকে দিতে বলা হয়, আমি বলব—
আমার গল্পের জন্য কাকে উপযুক্ত মনে করব, সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কারণ আমি পরিচালক, এখানে আমি কারও কথা শুনব না এবং আমি কারও কথা শুনতে বাধ্যও নই...। তো, রাফসান আসলে অনেক ভালো করেছে নতুন হিসেবে এবং মানুষ দেখছে।
এনটিভি অনলাইন : বিশ্বজুড়ে সবাই ওটিটিতে ঝুঁকছে; আপনি তো এখনও শুরুই করলেন না, কেন?
মাবরুর রশিদ বান্নাহ : ওটিটির জন্য সবাইকে বলব—যাঁরা আমার কাজ পছন্দ করেন, ভালবাসেন, একটু ধৈর্য ধরুন। সবই হবে। আমি যদি বেঁচে থাকি, সুস্থ থাকি, সবই হবে। আমি এমন কিছু করতে চাই না ওটিটিতে বা ফিল্মে বা ফিচার ফিল্মে, যাতে মানুষ হতাশ হবে। আমাকে একটু সময় দিন। আমি কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাই না, আমার কোনো তাড়া নেই। মাথা ঠান্ডা করে সেরা কাজটা করতে চাই।