শুটিং
আজাদ আবুল কালাম ও নাদিয়ার ‘ক্ষরণ’
আকাশে ছোপ ছোপ মেঘ। মেঘের ফাঁক থেকে মিষ্টি রোদের উঁকি। বৃষ্টি হবে কি হবে না, এমন অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে রওনা হলাম উত্তরায়। জ্যামের ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম শুটিংবাড়িতে। ঘড়িতে তখন সময় বেলা ১২টার এদিক-সেদিক। রোদের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। যা হোক, ভেতরে ঢুকতেই কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। কে যেন কাঁদছে! কে কাঁদছে? কৌতূহলী হয়ে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলাম। ডান পাশের ঘরটাতে তাকাতেই দেখি, অভিনেত্রী নাদিয়া কাঁদছেন। পরনে লাল রঙের ছাপার শাড়ি। চোখ থেকে পানি ঝরছে। তাঁর চারপাশে লাইট আর সামনে ক্যামেরা। শুটিং চলছে। পরিচালক কাট বললেন। শট ওকে।
আমাকে দেখে পরিচালক পারভেজ আমিন এগিয়ে এলেন। হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলেন। জানতে চাইলাম, নাদিয়া কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, “এটি ‘ক্ষরণ’ নাটকের একটি স্যাড সিকোয়েন্স। হাজবেন্ডকে হাসপাতাল থেকে দেখে এসে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর কাঁদছে। এখানে বিষয়টি হলো, নাদিয়া অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একটা সময় সে হাজবেন্ডকে সব খুলে বলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক সে মুহূর্তে হাজবেন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন নাদিয়ার হাজবেন্ডের প্রতি মায়া জন্মে। টান অনুভব করে।”
নাটকের কাহিনী কি এতটুকুই? পরিচালক কাহিনী বলতে রাজি হবেন কি না—এমন সংশয় থেকে জানতে চাইলাম। পরিচালক কাহিনী বলতে রাজি হলেন। প্রোডাকশন বয়ের দিয়ে যাওয়া লাল চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন, 'নাটকে নাদিয়ার চরিত্রের নাম অর্পা। অর্পাকে ঘিরেই নাটকটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। তার স্বামী একজন আর্কিটেক্ট। প্রচুর ব্যস্ত মানুষ। স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না, যার কারণে অর্পা খুব একাকিত্বে ভোগে। তার এই একাকিত্ব জীবনে অন্য একটি ছেলের প্রবেশ ঘটে। তার সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। একসময় সিদ্ধান্ত নেয়, সে সেই ছেলেটির সঙ্গে চলে যাবে। এমন এক সময় তার হাজবেন্ডের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সে নিউরোসার্জনের অধীনে চিকিৎসা নিতে থাকে। এদিকে, অর্পা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তবে গর্ভের সন্তান হাজবেন্ডের নয়, বয়ফ্রেন্ডের। অর্পা নিউরোসার্জনের কাছে হাজবেন্ডের বেঁচে থাকার সম্ভাবনার কথা জানতে চায়। যদি সে বেঁচে থাকে, তাহলে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবে। আর মরে গলে বাচ্চাটিকে পৃথিবীর আলো দেখাবে। এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যায়।'
কথা বলতে বলতে পরের দৃশ্যের সেট তৈরি হয়ে গেল। পরিচালক চলে গেলেন শট নিতে। এই ফাঁকে মেকআপ রুমে ঢুঁ মারলাম। আজাদ আবুল কালাম মেকআপ নিয়ে বসে আছেন। ইনিই অর্পার আর্কিটেক্ট স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। নাটকের চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই বললেন, 'আমি একজন আর্কিটেক্টের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যে পেশাদার জীবনে খুব ব্যস্ত একজন মানুষ। স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না। যার ফলে স্ত্রী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সন্তান কন্সিভ করে। হঠাৎ আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। তখন আমার কাছে অগাধ সময়। সেই সময়টাতে স্ত্রী সব সময় পাশে থাকে। তখন স্ত্রী বুঝতে পারে, সে যে সম্পর্কে জড়িয়েছে, সেটা ভুল ছিল।'
মেকআপ রুম থেকে বেরোতেই দেখি শট শেষ। নাদিয়া পরের শটের ডাকের অপেক্ষায় আছেন। যাকে নিয়ে পুরো নাটকের কাহিনী, তার কাছে নিজের চরিত্র সম্পর্কে জানতে না চাওয়া বোকামি। তাঁর পাশে বসে চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন, 'আমি যে চরিত্রটিতে অভিনয় করছি, তার নাম অর্পা। সংসারজীবনে হাজবেন্ডের সঙ্গে একসময় দূরত্ব সৃষ্টি হয়। জড়িয়ে যায় অন্য সম্পর্কে।'
ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে কি মিলে যায়? তিনি সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন, 'অনেকের পরিবারে এমনটি হয়। মানুষের জীবনের কাহিনী কিন্তু নাটকে তুলে ধরা হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে আমার জীবনে হয়নি। অনেকের পরিবারে এমনটি হয়।'
দুপুর গড়িয়ে সময় বিকেলের দিকে। পরের শটের জন্য নাদিয়ার ডাক পড়ল। আউটডোর। গাড়িতে উঠে বসলেন নাদিয়া। আমি বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মেঘের আনাগোনা বেড়েছে। রোদটাও নেই।