আমাকে সবাই বলত বাতাসীর মা : দিলারা জামান
ফ্যাশন, বিনোদন ও লাইফস্টাইল বিষয়ক ‘আইস টুডে’ ম্যাগাজিনের বিশেষ ফটোশুটে অংশ নিয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট সংখ্যায় আলোচিত হয়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান। এনটিভি অনলাইনকে তখন এই অভিনেত্রী বলেছেন, ‘শেষ জীবনে শেষ তৃপ্তি পেলাম।’ এবার ৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে ‘আইস টুডে’র প্রচ্ছদ কন্যা আবারও হয়েছেন দিলারা জামান। ওয়েস্টার্ন লুকে প্রচ্ছদে তাঁকে লাগছে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ম্যাগাজিনের মডেল, বর্তমান জীবন, নারী দিবস ও পুরোনো হাজারো স্মৃতির ঝুড়ি খুলে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : ‘আইস টুডে’র প্রচ্ছদে আপনার ছবি দেখে ফেসবুকে অনেকে উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করেছেন। অনেকে আপনার প্রশংসা করে প্রচ্ছদের ছবিটি শেয়ার করছেন ফেসবুকে। আপনার চোখে এসব পড়েছে?
দিলারা জামান : না, পড়েনি। এখনো ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদটাও দেখিনি। তবে অনেকে মন্তব্য করছেন, এ খবর আমি পেয়েছি আমার মেয়ের কাছ থেকে। অনেক সহকর্মী ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বলছে, ‘তুমি তো মাত করে দিয়েছ।’ আমি তখন তাদের বলছি, ‘এত নাটক করি, একটা ফোনও দাও না। এখন একটা ছবি দেখেই তোমরা সবাই অস্থির।’ আসলে একটা ব্যতিক্রমী ছবি থেকে যে সাড়া পাই, জান দিয়ে নাটক করেও তা পাই না।
এনটিভি অনলাইন : সবার শুভেচ্ছাবার্তা কেমন লাগছে?
দিলারা জামান : অবশ্যই অনুভূতি অন্যরকম। রোমাঞ্চকর। আমি তো ফেসবুক চালাই না, তাই কে কী বলছে, সেটা দেখতেও পাচ্ছি না। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, আমার ছবি অনেকে দেখছেন। ভালো-মন্দ বলছেন।
এনটিভি অনলাইন : ফটোশুটের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দিলারা জামান : আমি তো সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই ফটোশুট হয়েছে। আমাকে ওরা বলেছিল, ওয়েস্টার্ন লুকে ফটোশুট করবে। আমি শুধু শর্ত দিয়েছিলাম, যা-ই করো না কেন, যাতে বাড়াবাড়ি কিছু না হয়। দেখুন, দেশের বাইরে গেলে ঠান্ডার কারণে আমরা সবাই ওয়েস্টার্ন পোশাক পরি। আমি নিজেও আমেরিকা, কানাডায় মেয়েদের কাছে গেলে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরি। পড়তে হয় আসলে। কিন্তু এটা তো বাংলাদেশ। আমার কিন্তু একটু লজ্জাও লেগেছে (হাসি)। তাই কর্তৃপক্ষকে এমনটা বলেছিলাম যে পোশাকে যেন মাধুর্য বজায় থাকে।
এনটিভি অনলাইন : এবার অন্য প্রসঙ্গে জানতে চাইব। আপনার বয়স তো এখন ৭৬। জীবনের কোন সময় বেশি মিস করেন?
দিলারা জামান : ১২ ও ১৪ বছরের কিশোরী দিলারা জামানকে অনেক মনে পড়ে। সুযোগ পেলে ১২ বছরে ফিরতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : কেন?
দিলারা জামান : ভীষণ রকম চঞ্চল ছিলাম তো। আমাকে সবাই বলত ‘বাতাসীর মা’। যশোরে আমাদের বাড়িতে আমি উড়ে উড়ে বেড়াতাম। সারাক্ষণ হৈচৈ করা ছিল আমার স্বভাব। রেললাইনের পাশ দিয়ে দৌড়েছি অনেক। আমি গাছেও উঠতাম প্রায়ই। অন্যের গাছের ফল চুরিও করেছি।
এনটিভি অনলাইন : চুরি করে কখনো ধরা পড়েছেন?
দিলারা জামান : মাইরও খেয়েছি। একটা ঘটনা বলছি। একবার অন্যের পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা নিতে শুরু করলাম। গাছের মালিক বুঝতে পেরে কাছে এলেন। এর মধ্যে দেখি, আমার বন্ধুরা সব পালিয়ে চলে গেছে। গাছে আমি ছিলাম বলে পুরোপুরি ধরা। পরে বাসায় আমাকে নিয়ে এসে তাঁরা বিচার দিয়েছিলেন। এরপর মাইর আর বকা শুনতে শুনতে আমি শেষ। মনে আছে, আব্বা বাজার থেকে সেদিন অনেক পেয়ারা কিনে এনেছিলেন।
এনটিভি অনলাইন : এখন শুটিং ছাড়া আর কী করেন?
দিলারা জামান : টেলিভিশন দেখি। আমার দুই মেয়ের মধ্যে একজন আমেরিকা আর একজন কানাডায় থাকে। তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। নাতি-নাতনিদের অনেক মিস করি। তাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এ ছাড়া সংসারের জন্য বাজার করি।
এনটিভি অনলাইন : জীবনে তো অনেক অর্জন। তবু কোনো আফসোস হয় কী?
দিলারা জামান : না, হয় না। যেসব চরিত্রে অভিনয় করতে ভালো লাগে, তা করছি। মানুষের মনে ঠাঁই পাওয়াটা চাওয়া ছিল। মানুষ ভালোবাসা দিচ্ছে, এটাতেই আনন্দ। আর জীবন নিয়ে এখন ভাবার সময় কই? ট্রেনের টিকেট কাটা হয়ে গেছে। জীবন স্টেশনে শেষ ট্রেন থামামাত্রই উঠতে হবে। সেই অপেক্ষায় আছি।
এনটিভি অনলাইন : শেষ প্রশ্ন। আগামীকাল ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। দেশের নারীদের নিয়ে আপনার অভিমত কী?
দিলারা জামান : আমি তো মনে করি, অনেক মেয়ে এখনো স্বাবলম্বী হয়নি। প্রভাবশালীদের কারণে অনেক মেয়েকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। গ্রামে এখনো অনেক মেয়ের কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। অনেকে স্কুলেও যেতে পারে না, অনেক কারণেই। তবে এটা ঠিক, আগের থেকে নারীরা এগিয়ে গেছে। সামনে চলার সুগম পথ নিজেরাই সংগ্রাম করে তৈরি করে নিচ্ছে। এসব দেখতে কিন্তু ভালোই লাগে।