মালয়েশিয়ার ৪টি মাল্টিপ্লেক্সে ‘সুতপার ঠিকানা’
দেশব্যাপী প্রদর্শন শেষে এবার আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’। যার ইংরেজি নাম- ‘হার ওউন অ্যাড্রেস’। উপমহাদেশের নারীজীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত ‘সুতপার ঠিকানা’ নারী দিবসকে সামনে রেখেই পরিবেশক সংস্থা আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সকাল ১০টায় শুধু সংবাদকর্মীদের জন্য এবং সন্ধ্যা ৬টায় প্রদর্শিত হবে মালয়েশিয়ার অগ্রগামী নারীদের সংগঠন অডঅগের (অল ওমেনস অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়েশিয়া) সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য।
এদিকে গত মাসের ১৯ তারিখে নির্মাতার সাথে মালয়েশিয়ান পরিবেশক সংস্থার অনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর চলচ্চিত্রটি সেন্সরের জন্য জমা দেওয়া হয়। স্থানীয় চলচ্চিত্র অধিদপ্তর থেকে যথাযথভাবে সেন্সর প্রাপ্তির পর সেখানকার সবচেয়ে আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ গোল্ডেন স্ক্রিন সিনেমার মোট ৪টি মাল্টিপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তার মাঝে রয়েছে কুয়ালালামপুরের ‘মিডভ্যালি’ ও ‘প্যাভিলিয়ন’ মেগা-মল, পেতালিং জায়ার ‘ওয়ান উতামা’ মেগা-মল এবং পেনাং এর ‘গুর্নে প্লাজা’র মাল্টিপ্লেক্সগুলো। বাণিজ্যিক মুক্তি শেষে ‘সুতপার ঠিকানা’ মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের দুটি টেলিভিশনেও প্রচারিত হবে। এরপর মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে।
২০১৫ সালের মে মাসে মা দিবস উপলক্ষে শুধু দেশের রাজধানীর কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এরপর বিকল্প পন্থায় প্রদর্শিত হয় ১২টি জেলায় এবং সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাঁচটি মহাদেশের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে অর্জন করে গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা। এরপর গত ডিসেম্বরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ৬৪ জেলায় একযোগে প্রদর্শিত হয় ‘সুতপার ঠিকানা’। সরকারি অনুদানে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে- দেশব্যাপী প্রর্দশনের এই সুযোগ ও সম্মাননাটিকেই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি বলে মনে করেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা প্রসূন রহমান।
প্রসূন রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্রের প্রায় নিয়মিত অংশগ্রহণ থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে মুক্তির ব্যাপারটি বেশির ভাগ চলচ্চিত্রের ভাগ্যেই ঘটে না। বিশ্বায়নের যুগে নিজেরা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভোক্তা হয়ে বসে আছি, কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্ব-বাজারে নিয়ে যেতে আমরা এখনো সমর্থ হইনি। তা ছাড়া ভঙ্গুর অবকাঠামোর কারণে সৃজনশীল কাজ নিয়ে নিজের দেশের প্রদর্শকদের কাছেই আমাদের জায়গা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
স্বল্প বাজেটে আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্লা দেওয়ার মতো প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দুরূহ কাজ। তবে ইরানী চলচ্চিত্রের মতো নিজেদের মৌলিক গল্প নিয়ে নিশ্চয় বিশ্ববাজারে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। সম্পূর্ণ নিজস্ব যোগাযোগ ও প্রচেষ্টায় ‘সুতপার ঠিকানা’র আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের এই অর্জনটি আগামী নির্মাতাদের এই বাংলার জনজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলিক গল্প নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গীতে চলচ্চিত্র নির্মাণে আরো আগ্রহী করে তুলবে বলে বিশ্বাস করি।’
‘সুতপার ঠিকানা’র পর এ মুহূর্তে ‘ঢাকা ড্রিম’ নামে আরেকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিচ্ছেন প্রসূন রহমান। যার ৪০ ভাগ কাজ এরই মাঝে সম্পন্ন হয়েছে। যেটি হবে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা ট্রিলজি’র প্রথম পর্ব।