কলকাতার সিনেমা পাড়া অচল : নেপথ্যে বাংলাদেশের যে সিরিজ
আজ (২৯ জুলাই) সোমবার সকাল থেকে কলকাতার সকল ধারাবাহিক থেকে সিনেমা, সব শুটিং বন্ধ। আর এই অচলাবস্থার নেপথ্যে বাংলাদেশ একটি সিরিজ।
গত বছরের ৪ অক্টোবর কলকাতায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি কনটেন্ট নির্মাণ করবে প্ল্যাটফর্মটি। এর মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল। রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় সিরিজটিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের সোহিনী সরকার। তবে টলিউডের ফেডারেশনগুলোর অতিরিক্ত পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন দাবির কারণে কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চরকি। ফলে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় ‘লহু’র শুটিং।
জানা গেছে, সেই সিনেমার বাকি অংশের শুটিং শেষ করতেই কয়েকজন কলাকুশলীসহ বাংলাদেশে এসেছিলেন রাহুল। প্রথমে শুটিংয়ের বিষয়টি আড়াল করলেও পরে বাংলাদেশে শুটিং করার কথা স্বীকার করেন নির্মাতা। টলিউড ফেডারেশনকে না জানিয়ে ঢাকায় এসে শুটিং করার অভিযোগে আগামী তিন মাসের জন্য রাহুলকে নিষেধাজ্ঞা দেয় ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া।
এ ধরনের ঘটনা আগে টলিপাড়ায় ঘটেনি। তাই রাহুলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্ন তুলেছেন অন্য নির্মাতারা। পরিচালকদের বড় একটা অংশ মনে করছেন, একজন পরিচালকের সমস্যায় বাকিরা না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে আরও খারাপ দিন আসতে পারে। তাই সময় থাকতেই তারা প্রতিবাদে শামিল হতে চাইছেন। এছাড়া এই ঘটনায় রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতার সিনেমা সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল সংগঠনগুলো।
গত কয়েকদিন ধরে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেকনিশিয়ান ফেডারেশন দফায় দফায় বৈঠক করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। টেকনিশিয়ান ফেডারেশন নির্মাতা রাহুলকে ‘বয়কট’ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কর্মবিবরতি শুরু করেছেন বাংলা সিনেমা-ওয়েব সিরিজের পরিচালকরা। টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের অভিযোগ, রাহুল কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় এসে ‘লহু’র শুটিং করেছেন এবং কলকাতার ওই সিরিজের শুটিংয়ের বকেয়া মেটাননি। তবে রাহুলের ভাষ্য, কোন বকেয়া নেই বরং দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
ডিরেক্টরস গিল্ড প্রথমে রাহুলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেও পরে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে পরিচালকের পাশে দাঁড়ায়। আর পরিচালকদের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে ছোট পর্দার প্রযোজকদের সংগঠন ডব্লিউএটিপি ও আর্টিস্ট ফোরাম।
এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সোমাবার (২৯ জুলাই) দুপুরে এক বৈঠক ডাকা হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানেই হাজির হন টলিপাড়ার পরিচালক-প্রযোজকেরা। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজ চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, বিরসা দাশগুপ্ত, সুদেষ্ণা রায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সুব্রত সেনসহ অন্যরা।