করোনা মহামারির পর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স—এটি বর্তমানে অন্যতম একটি বাধা চিকিৎসা শাস্ত্রে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হতে চলেছে। আজ আমরা এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে বিস্তারিত জানব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইলোরা শারমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহসিন।
অ্যান্টিবায়োটিক যখন রেজিট্যান্স ডেভেলপ করে যায়, এটিকে কেন হুমকি বলা হচ্ছে? অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কতটা ভয়ানক হতে পারে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ কী। এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইলোরা শারমিন বলেন, বর্তমানে আমাদের যে কোভিডের মহামারি চলছে, এর পরবর্তী মহামারি কিন্তু আমাদের হবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। কারণ, এ করোনার জন্য যেটা হলো যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক উইথআউট প্রেসক্রিপশন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই আমাদের দেশে ফার্মেসিতে গেলে প্রচুর মানুষ, তাঁরা নিজে নিজেই মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ইউস করছে। এবং হাসপাতালেও কিন্তু বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ইউস করা হয়েছে, যার ফলে পরবর্তীতে যেটা হবে, আগে যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সির মহামারিটা আরও পাঁচ বছর পরে হতো, এই মহামারিটা চলে গেলে এর পরবর্তীতেই কিন্তু ধাক্কাটা আসবে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
এটি অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন না, তাঁরা ভাবছেন কী হয়েছে, একটা ওষুধ আমার শরীরে কাজ করছে না, তো কী হবে, খুব বেশি কী হবে; কিন্তু কী হবে সেটা কিন্তু তাঁদের জানা জরুরি যে তাঁরা যে কোনও ধরনের একটা সিম্পল কাট ইনজুরি থেকে একটা ইনফেকশন হয়ে মারা যাবেন। কোনও ওষুধ তাঁর শরীরে কাজ করছে না। আর যত্রযত্র যে ওষুধের ব্যবহার বা ফার্মেসিতে গিয়ে যে কোনও ওষুধ কিনে নেওয়া, এটা স্টেরয়েড হোক, অ্যান্টিবায়োটিক হোক, এটা কতটা ভয়ঙ্কর? সঞ্চালক ডা. মুনা তাহসিনের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইলোরা শারমিন বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনও ওষুধই দেওয়া উচিত নয় বা ব্যবহার করা উচিত নয় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া। এটা তো সর্বপ্রথম কথা। আমাদের দেশে যেটা দেখা যায়, ফার্মেসিতে যারা আছে, তাদের কাছে যে কোনও সমস্যা নিয়ে গেলে তারা কিন্তু ওষুধ দিয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষও সেটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যদি কিছু জনসচেতনতা আমরা বাড়াতে পারি এবং অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে যদি আমরা নির্দিষ্ট সকল অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল-ট্যাবলেট, এগুলোকে নির্দিষ্ট কালার দিয়ে আমরা যদি বোঝাতে পারি যে অ্যান্টিবায়োটিক কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। কারণ, অনেক সময় সাধারণ মানুষ বোঝেও না যে এটি অ্যান্টিবায়োটিক। যেমন—দেখা যাচ্ছে পেট খারাপ হলো, এরা কিন্তু মেট্রোনিডাজল খেয়ে ফেলল। আমার পরিচিত অনেকে আছে, যাঁদের জিজ্ঞেস করলাম, কী ওষুধ খেয়েছেন। বললেন, মেট্রোনিডাজল খেয়েছিলাম। তখন হয়তো বা বললাম, এটা কেন খেয়েছেন, এটা তো খাওয়া ঠিক হয়নি। বললেন, এটা তো অ্যান্টিবায়োটিক নয়। তিনি এটাই জানেন না এটা অ্যান্টিবায়োটিক। সে ক্ষেত্রে যদি আমরা কালার নির্দিষ্ট করে দিতে পারি, হ্যাঁ, এ ধরনের কালারের যেসব ওষুধ, সেগুলো সবই অ্যান্টিবায়োটিক। তাহলে মানুষ জানল যে হ্যাঁ, এই কালারের হওয়া মানেই অ্যান্টিবায়োটিক। তার মানে এটা আমার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। দুই নম্বর, যদি এমনই হয়, কোনও মানুষই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ নিতে পারবে না এবং যারা ওষুধ কোম্পানি আছে, তাদের যদি বলা যায় যে আপনারা ডাক্তার ছাড়া অন্য কারও কাছে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও প্রমোশন করতে পারবেন না, এ জিনিসগুলো যদি আমরা কনট্রোলে আনতে পারি, এ রকম কোনও গাইডলাইন করতে পারি যে এ জিনিসগুলো আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তাহলে অনেকটা কমবে এটা।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওতে ক্লিক করুন।