মনের যত্ন নিচ্ছেন তো?
করোনা মহামারি পুরো বিশ্বের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা থেকে জীবনযাপন পদ্ধতিই পাল্টে দিয়েছে। আমরা শরীরের প্রতি এখন অধিক যত্নবান, কিন্তু একবারও কি ভাবি, শরীরের পাশাপাশি এ সময় মনেরও সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন?
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’-এর একটি পর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. সানজিদা হোসেন পাপিয়া।
সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস বলেন, আমরা সব সময় শারীরিক যত্নের দিকে বেশি ফোকাস দিই। মনের যত্নটাকে আমরা অত বেশি গুরুত্ব দিই না। আর না দেওয়ার কারণে কখন যে আমি মনোরোগে ভুগছি, আমরা নিজেরাও টের পাই না। বুঝতে পারি না। আমরা মনোরোগ তখনই বলি, যখন কোনো মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক জীবন—এই তিনটা জীবনের যেকোনো দুটি ক্ষেত্র থেকে কমপ্লেইন আসবে অথবা সে মেইনটেইন করতে পারবে না। বিশেষ করে ব্যক্তিগত জীবনে প্রথম সমস্যাটা তৈরি হয়। তখন পরিবারে প্রভাব পড়ে, এরপর সামাজিক। এখন কোভিড-১৯ একটি রোগ, এ কথাটাই আমাদের জন্য আতঙ্ক তৈরি করে, উদ্বেগ তৈরি করে, উৎকণ্ঠা তৈরি করে। কারণটা, কোভিড-১৯ নিজেই স্ট্রেস তৈরি করছে, আমাদের অবচেতন মনে তৈরি করছে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এই উৎকণ্ঠার কারণে আমাদের মনে যে প্রভাবটা পড়ছে... আমরা বলি, মন থাকে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কে থাকার কারণে মস্তিষ্কে যে নিউরো ট্রান্সমিটার আছে, রাসায়নিক পদার্থ আছে, তার সিক্রেশন বা তার নিঃসরণের ওপরেই মনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। আর যখন মনে অসুবিধা হয়, তার বহিঃপ্রকাশ হয় আচরণ দিয়ে।
আমরা যখন বিশ্বের দিকে তাকাই, তখন দেখি যে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো, প্রতিষ্ঠিত; এই রোগের (কোভিড-১৯) কারণে বেশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তখন আমাদের কাছে মনে হয়, এ রোগটার প্রতিকার আছে, প্রতিষেধক নেই। এ কারণে আমাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়... আতঙ্কটা কীসের, মৃত্যু একটা ভয়। এই রোগটা হলে অনেকে মারা যাচ্ছেন, মারা গেছেনও। এ কারণে একজন মানুষের... নিউরো ট্রান্সমিটারের, রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণের তারতম্য হওয়ার কারণে তার মধ্যে তৈরি হবে একিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার... এটা বোঝা যাবে আচরণে... এ থেকে হতে পারে ডিপ্রেশন। তৈরি হবে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার। এটা যে শুধু বড়দের হবে, তা নয়। শিশু, বড়, বৃদ্ধ সবারই হতে পারে।
মনের যত্ন যেভাবে নেবেন
ডা. ফাহমিদা ফেরদৌসের পরামর্শ, আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করি আমরা নিজেরাই। এখন আমি আমার মনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব... জীবন কিন্তু সব সময় উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা দিয়েই যাবে। আপনার জীবন যে সব সময় একই রকম যাবে, তা নয়। আমি কিন্তু কোভিড আসার আগ পর্যন্ত ভালো সময় কাটিয়েছি, কোভিড কবে যাবে, আমরা জানি না। কিন্তু এই সময়ের সাথে তো আমাদের অ্যাডজাস্ট করতে হবে। জীবনসংগ্রাম করেই মানুষ বেঁচে থাকে। আমাদের মনে করতে হবে, এটা একটা যুদ্ধ। এখান থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। আমাদের সতর্ক হতে হবে, সচেতন হতে হবে... প্রতিটি নেতিবাচক কাজ থেকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনই এ ক্ষেত্রেও থাকতে হবে। আর আমাকে জীবনসংগ্রামে জয়ী হতে হবে। জীবনসংগ্রামে জয়ী হতে হলে যে স্বাস্থ্যবিধি আছে, আমি সেগুলো মেনে চলব। যদি মেনে চলি, তাহলে আমার ভেতরে... স্বাস্থ্যবিধি যিনি মানছেন, আর যিনি মানছেন না, তাদের মধ্যে কিন্তু তারতম্য হবে। যিনি মানবেন না, তাঁর কিন্তু ভয়টা বেশি হবে। যদি আমরা চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করি, আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
করোনাকালে মনোরোগ ও মনের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওতে ক্লিক করুন।