রোজায় কী ব্যায়াম করবেন?
রমজান মাস শুরু হয়েছে, আর আমাদের দৈনন্দিন কাজেরও কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষই এই সময়টায় ঘরে একটু বিশ্রামে থাকতে পছন্দ করেন। তবে সেই অলসতা ঝেড়ে ফেলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে হবে, যা আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করতে সাহায্য করতে পারে। ব্যায়াম করা ঠিক হবে কি না এই সময়, এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায়।
শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে সবারই রমজান মাসে কিছু হালকা-পাতলা ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম অনেক রকমের হয়। যেমন : হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন হেলথ ক্লাবে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি চালিয়ে দেহকে বিশেষ ভঙ্গিমায় স্থির রেখে যোগব্যায়ামও করা যায়। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী, প্রয়োজন পরিবেশগত সুবিধা। সময়ের সীমাবদ্ধতা ও মানসিক প্রবণতার কথা ভেবে ব্যায়াম বেছে নেওয়া ভালো।
আপনি হাঁটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। সকালবেলায় ব্যায়ামের কাজটি করে ফেলতে পারলে ভালো। কারণ যত দিন বাড়তে থাকে, ততই শরীর দুর্বল এবং পানিশূন্য হতে থাকে। তাই রোজা রেখে ব্যায়াম করতে চাইলে সকালটাকে বেছে নেওয়াই উত্তম, প্রথমে ২০ মিনিট ধরে হাঁটা শুরু করতে পারেন। খুব জোরে না হেঁটে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত হাঁটতে পারেন। রোজা রেখে আপনি প্রতিদিন ব্যায়াম করতে না পারলেও অন্তত সপ্তাহে তিনদিনের একটি পরিকল্পনা করে নেবেন। চেষ্টা করবেন ব্যায়াম শুরুর আগে শরীরটাকে ভালোভাবে ওয়ার্মআপ করে নিতে এবং শেষ করার পরেও কিছু স্ট্রেচিং করে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন শরীর যেন খুব বেশি ঘেমে না যায়।
ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত কাপড় নির্বাচন করবেন। খুব বেশি ভারী কাপড় পরে ব্যায়াম করবেন না। ব্যায়াম করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখাটা জরুরি। রমজান মাসে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ভালো হয় যদি বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে ইনডোর লোকেশন বেছে নিতে পারেন। যেমন : বাড়িতে ব্যবস্থা না থাকলে কোনো হেলথ ক্লাবে যোগ দিতে পারেন।
এ ছাড়া সকালবেলা ঘুম থেকে লাফিয়ে বিছানা থেকে না উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করুন। মনকে চিন্তামুক্ত রেখে বালিশ ছাড়া চিত হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে শবাসন করুন। এতে শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এতে অনেক পরিশ্রম ও মানসিক চাপ সহ্য করা যায় এবং দেহের যে কোনো ব্যথা ও লুকানো সমস্যা দূর হয়।
পাশাপাশি শুয়ে পেটের ওপরে দুই হাত রেখে গভীরভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিলে ফুলিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের শক্তি বাড়ে এবং দিনে ২০ মিনিট এটি করলে ভালো ঘুম হয়।
একেবারে শয্যাশয়ী বা চলাফেরায় অক্ষম না হলে সবার পক্ষেই রোজা রেখে হালকা-পাতলা ব্যায়াম করা সম্ভব। যেহেতু রমজান মাসে শরীরে খাবারের ঘাটতি থাকে, তাই এই সময় বেশি ভারী ব্যায়ামগুলো না করাই ভালো। যেমন ভার উত্তোলন-জাতীয় কোনো ব্যায়াম এই সময় না করাই ভালো। ট্রেডমিলে হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এবং ইয়োগা করা যেতে পারে। এই সময় ব্রিফিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম অনেক বেশি উপকারে আসে।
ব্যায়ামে কেবল শরীর নয়, মনও সুস্থ-সবল ও সক্রিয় রাখা যায়। তাই দেরি না করে শুরু করুন, হোক না সেটা রমজান মাস। নিয়মকানুন মেনে ঠিকভাবে ব্যায়াম করলে আপনি এই রমজান মাসেও ফিট থাকতে পারবেন। রোজা রেখে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি হেলথ ক্লাবে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করেন। তাহলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। কারণ রোজা রেখে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে, রক্তে শর্করার পরিমাণও কমে যেতে পারে। আর যে কোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : ফারজানা খানম শিমুল, চিফ ইনস্ট্রাকটর,পারসোনা হেলথ