শবেবরাতের হালুয়া, রোগী কীভাবে খাবেন?
আজ পবিত্র শবেবরাত। মহান আল্লাহতায়ালা আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতদের জন্য ইবাদতের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন এই রাতে। রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার পাশাপাশি হালুয়া-রুটির বিষয়টি আমাদের দেশে অনেকেই পালন করেন।
নানা রকম হালুয়া, মিষ্টান্ন, বনরুটি, চালের রুটি, মাংস ইত্যাদি অনেক বাসাতেই আয়োজন করা হয়।
হালুয়া নানা রকমভাবে তৈরি হয়। ঘি ও চিনি এ দুটো হলো মূল উপাদান। এই ঘি ও চিনি ব্যবহার করে তার সঙ্গে নানা রকম সবজি, যেমন : পেঁপে, গাজর, চালকুমড়া, দুধ, সুজি কর্নফ্লাওয়ার ইত্যাদি খাদ্য উপাদান দিয়ে হালুয়া তৈরি হয়। বাড়ির সবাই এই হালুয়া কমবেশি খেয়ে থাকে। হালুয়ার মূল ক্যালরি আসে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট থেকে।
বাড়ির যাঁরা ডায়াবেটিক রোগী আছেন, তাঁদের জন্য যেকোনো হালুয়াই খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যাঁরা শবেবরাতে রোজা রাখেন, তাঁরা ইফতারিতে সামান্য হালুয়া খেতে পারবেন। আবার যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁরাও ইনসুলিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে অল্প পরিমাণ খেতে পারবেন।
যাঁরা হৃদরোগী, তাঁদেরও অনেক সতর্কতার সঙ্গে হালুয়া খেতে হবে। ঘি ব্যবহার করা তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই হৃদরোগীদের জন্য গাজর বা পেঁপের সঙ্গে পাতলা দুধ, সামান্য চিনি ও উদ্ভিজ তেল, যেমন : সয়াবিন বা সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করে হালুয়া তৈরি করা যেতে পারে। এতে খুব বেশি স্বাদ না হলেও বেশি ক্ষতি হবে না।
আবার যাঁরা কিডনি রোগী, তাঁরা অনেক খাবারই খেতে পারেন না। তবে চালকুমড়ার হালুয়া অল্প উদ্ভিজ তেল, চিনি দিয়ে তৈরি করলে তাঁরা খেতে পারেন।
কিডনি রোগীতে হালুয়াতে ঘি ও দুধ এড়িয়ে চলা ভালো। ময়দার হালুয়া চালকুমড়ার হালুয়া ও নেরেস্তার হালুয়া অল্প করে কিডনি রোগীরা খেতে পারবেন।
যাঁরা ওজন কমানোর ডায়েট এ আছেন, তাঁদের জন্য হালুয়া খুবই ক্যালরিবহুল। সারা দিনের ক্যালরির ভারসাম্য রক্ষা করে সন্ধ্যায় সামান্য হালুয়া খাওয়া যেতে পারে।
তবে যাঁরা ওজন বাড়াতে চান, তাঁরা স্বাদমতো ও পরিমিত হালুয়া খেতে পারবেন। তবে ওজন কম বলে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। এতে বদহজম হতে পারে।
সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য দুধের তৈরি যেকোনো হালুয়া বা মিষ্টান্ন, যেমন : ডিমের হালুয়া, দুধ লাউ, ফিরনি, দুধের বরফি, পায়েস ইত্যাদি ভালো।
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের অনেক বুঝে হালুয়া খেতে হবে। অতিরিক্ত ফ্যাট থাকায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই হালুয়া খাওয়ার আগে রক্তের চাপ মাপা, রুটিনমতো ওষুধ খাওয়া এবং অন্যান্য ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে সামান্য হালুয়া খেতে হবে।
হালুয়ার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো হলো চালের রুটি বা পাতলা ময়দার রুটি। পাউরুটি বা বনরুটি এড়িয়ে চলা ভালো। স্বাদের কথা মাথায় রাখলেও পুষ্টির কথা ভেবে সঠিকভাবে বুঝেশুনে হালুয়া খেতে হবে।
লেখক : পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।