ডিম খেতে নেই বাধা
কুসুমসহ ডিম খাওয়ায় তেমন কোনো বাঁধা নেই। কারণ ডিমের কোলেস্টেরলকে যতটা ক্ষতিকর মনে করা হতো, আসলে ততটা ক্ষতিকর নয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিশারদরা দাবি করেছেন, ডিমসহ বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাবার স্বাভাবিক মাত্রায় গ্রহণের সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের সতর্কবার্তা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন দেশেটির ডায়েটারি গাইডলাইন অ্যাডভাইজরি কমিটি।
একদল পুষ্টিবিশারদ ও গবেষক নিয়ে গঠিত এই কমিটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্কতার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। কোলেস্টেরলের বিষয়ে ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পুষ্টিবিষয়ক সতর্কবার্তা চালু আছে।
পাঁচ বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিশারদরা মনে করতেন কুসুমসহ ডিম, চিংড়ি, লবস্টার ও অন্যান্য বাড়তি কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এতে হৃদরোগ ও রক্তে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তবে গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে পুষ্টিবিদদের বর্তমান ধারণাটি হলো, কোলেস্টেরলই এসব রোগ সৃষ্টিতে বড় কোনো ভূমিকা রাখে তা প্রমাণিত হয়নি। তাঁদের মতে কোলেস্টেরলের নয়, বরং সম্পৃক্ত চর্বিসমৃদ্ধ খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই চর্বিসমৃদ্ধ মাংস, ননীসমৃদ্ধ দুধ ও মাখনের মতো খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ওয়েক ফ্রস্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক লরেন্স রুডেল বলেন, ডিম একটি আদর্শ খাবার। অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার কারণে সবার শরীরেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু মানুষের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিশারদদের মতে, স্বাভাবিক মাত্রায় কোলেস্টেরল শরীরের জন্য তেমন বড় কোনো ক্ষতি না করলেও অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। অনেক পুষ্টিবিদ নিরোগ স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের কোলেস্টেরলের চেয়ে সম্পৃক্ত চর্বির ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কোলেস্টেরলের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন গবেষকরা।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি ডিম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাস নয় বরং শরীরই ঠিক করে রক্তে কী পরিমাণ কোলেস্টেরল তৈরি হবে। একই সঙ্গে শরীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক কোলেস্টেরলের পরিমাণও নির্ধারণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্যবিধির সতর্কতা অনুযায়ীই দেশটির সব বিদ্যালয়ের দুপুরের খাবার তৈরি হয়। এ ছাড়া দেশটির প্রায় সব খাবার তৈরি ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানই এই বিধি মেনে চলার চেষ্টা করে।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোলেস্টেরল বিষয়ে সতর্কতা তুলে গত ডিসেম্বরে একটি সভায় আলোচনা হয়েছে। এতে সরকারে এখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে কাজ চলছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ডিমসহ কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ নানা খাবারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।