আট বদঅভ্যাসে হতে পারে পিঠে ব্যথা
যেসব কারণে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়, এর মধ্যে পিঠে ব্যথা অন্যতম। আর যতগুলো কারণে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় এর মধ্যে তৃতীয় কারণ হচ্ছে এই রোগ।
পিঠের ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হয়। এসব বিষয়ে সাবধান থাকলে ব্যথার হাত থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়।
১. দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকা
চেয়ারের ওপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। এতে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয়; পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক অঙ্গবিন্যাসে বসতে হবে।
২. কাজের ফাঁকে বিরতি না নেওয়া
কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়ার অভ্যাস না করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে ও হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশি,ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।
তাই প্রতিদিন শান্ত বা চাপ মুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। তা ছাড়া গবেষণায় দেখা যায়, ব্যথা কমাতে গান বেশ কাজ করে। সঙ্গীত হরমোনের চাপ ও পেশির উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
৪. পুরোনো তোশক
একটি ভালো তোশক সাধারণত নয় থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা পিঠে অস্বস্তি হলে পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর তোশক পরিবর্তন করা উচিত। যারা পাঁচ বছর পর তোশক পরিবর্তন করে তাদের পিঠে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়।
এ ক্ষেত্রে বেশি শক্তও না, আবার বেশি নরমও না-এমন তোশক ব্যবহার করতে হবে। শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
৫. খাদ্যাভ্যাস
যেসব খাবার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে, শরীরের ওজন এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে, সেসব খাবার পিঠের জন্যও উপকারী। এ ক্ষেত্রে সয়া, বাদাম, শাকসবজি, মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ও ফল খেতে পারেন।
৬. ভারি ব্যাগ
কাঁধে প্রতিদিন ভালী ব্যাগ বহন করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। কারণ, ভারী ব্যাগ কাঁধের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত ব্যগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেওয়া যেতে পারে। এতে কাঁধের ওপর চাপ কম হবে।
৭. বেশি উঁচু বা বেশি নিচু জুতা
হাই হিল পরলে পিঠ বাঁকা হয়ে থাকে। এতে মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি হয়। জুতার হিলের উচ্চতা ঠিক না হলে পায়ের ক্ষতি হতে পারে। এটি পরে পিঠ ব্যথার কারণ হয়। আবার ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরলে পায়ের পাতার প্রান্তে চাপ পড়ে। এটি শরীরের ওজনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ব্যথার সৃষ্টি করে।
এ ক্ষেত্রে পায়ের জন্য আরাম দায়ক ফ্ল্যাট জুতা বা স্নিকারস পরা যেতে পারে। আর ফ্যাশনেবল কম হিলের জুতাও বাদ দেওয়ার দরকার নেই। শুধু অনেকদূর হাঁটতে হবে এ রকম কোনো জায়গায় যাওয়ার সময় হিল পরা বাদ দিন।
৮. বাইক চালানো
যদি মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালানো শুরু করার পর পিঠে ব্যথা হয়, তবে এই বহন নতুন করে সমন্বয় করতে হতে পারে। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বাইকার পিঠে ব্যথা অনুভব করে। সাধারণ সাইকেলে ক্ষেত্রে ঊরুসন্ধি থেকে হ্যান্ডেল বার এক থেকে দুই ইঞ্চি সামনে থাকবে। আর মাউন্টেইন বাইকের ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ইঞ্চি সামনে থাকবে।
প্যাডেল নিচে থাকলে সিটে বসা অবস্থায় পায়ের অবস্থান হতে হবে ঘড়ির ছয়টা বাজার কাঁটার মতো। বাইকের হাতল ধরার ক্ষেত্রে কনুই অল্প বাঁকবে। তবে হাতে কোনো রকম চাপ পড়লে বুঝতে হবে সমস্যা রয়েছে।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।