সকালে নাস্তা সবসময়
শরীরকে সুস্থ রাখতে চাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস। এর মধ্যে খুবই জরুরি হলো সকালের নাস্তা। সারাদিনের সব বেলার খাবারের মধ্যে সঠিক অনুপাতে সকালের নাস্তা খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
সারাদিন সুস্থভাবে চলতে আমাদের প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি। এর সাপেক্ষে সারাদিনের খাবারকে ছয় থেকে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সকালের নাস্তা হলো প্রথম। দীর্ঘ আট থেকে ১০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর সকালের নাস্তা দিয়ে দিন শুরু। কাজেই দিনের শুরু ভালোভাবে করতে সকালের নাস্তাটা অবশ্যই ঠিকঠাক করা আপনার জন্য উপকারী।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়মতো ভালোভাবে সকালের নাস্তা খেলে সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা যথাযথভাবে বজায় থাকে। অনেকেই সকালে নাস্তা না খেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। অনেকে আবার ঘরে থেকেও নাস্তা খান না।দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে একটা সময় অনেক বেশি ক্ষিধে লেগে যায়। ফলে বেলা হলে অনেক খাবার খেয়ে ফেলতে হয়, এতে খাবারের সঠিক পরিমাণ বজায় থাকে না। এ ছাড়া সকালের নাস্তা ঠিকভাবে না খেলে অনেকেই সারাদিনের অন্যান্য খাবারগুলো সাধারণত বেশি খেয়ে থাকেন। এতে তাদের হজমের গতি ধীর হয়ে যায়; যার ফলাফল হিসেবে জোটে অতিরিক্ত ওজন!
গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, ওজন কমাতে সকালের নাস্তা অনেক সাহায্য করে থাকে। সকালের খাওয়া একটু বেশি করে, সঠিক সময়ে হজমের হার বাড়ে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সকালের নাস্তা ঠিকমতো খেলে এসিডিটি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শুধু তাই নয়,গবেষণায় এও দেখা গেছে, যেসব শিশু সকালে ঠিকঠাক নাস্তা খেয়ে স্কুলে যায় তারা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে এবং উৎফুল্ল থাকে। তাই বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার আগে অবশ্যই নাস্তা খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্কুলে খাওয়ার জন্য হালকা কিছু টিফিন দিলেই চলবে।
সঠিকভাবে সকালে নাস্তা করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সকালের নাস্তা খেলে মন-মেজাজ ভালো থাকে, ফুরফুরে হয়। কেননা দিনের শুরুতে খালি পেটে থাকলে কাজের সাথে মানুষের মন-মেজাজও খারাপ হতে থাকে। এতে অনেক সময়ই মানুষ তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যা তার ব্যক্তিত্বেও ফেলে নেতিবাচক প্রভাব।
সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা অনেক জরুরি। কেননা বেলা করে নাস্তা খেলে তা কিন্তু আর সকালের নাস্তার পর্যায়ে পড়ে না। সকাল ৮ থেকে সাড়ে ৮টার এর মধ্যে সকালের নাস্তা খেলে ভালো। এ ক্ষেত্রে রুটি, সবজি, ডিম, রঙ চা, দুধ, ব্রেড, ফল, চিড়া, দই, সুজি ইত্যাদি খাবারকে রকমফের করে সুষম নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। সকালের নাস্তা খাওয়ার ২০ মিনিট পর পানি এবং চা খাওয়া যেতে পারে।
তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে সব বয়সের মানুষের সঠিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে সকালে নাস্তা খেতে হবে। এতে জীবন হবে সুন্দর, উপভোগ্য।
তামান্না চৌধুরী : পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল