দাম্পত্য সংঘাতের কারণ কী?
দাম্পত্য সংঘাতের ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। দাম্পত্য সংঘাতের কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯৯৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সাইফুন নাহার।
বর্তমানে ডা. সাইফুন নাহার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : সংঘাতের কারণগুলো কী বলে মনে করেন?
উত্তর : অনেক কারণ রয়েছে। যদি একজন সঙ্গী বা দুজনের মনে হয়, তাদের একে অন্যের কাছ থেকে যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার দরকার ছিল, যতটুকু ভালোবাসা পাওয়ার দরকার ছিল, সেই জায়গায় অভাব রয়েছে, অথবা আবেগীয় জায়গাতে যদি মনে করেন কোথাও অভাব রয়েছে, অথবা তাদের যে সেক্সুয়াল চাহিদা, সেই জায়গাতে অনেক দিন ধরে তারা বঞ্চিত রয়েছেন, অথবা কেউ যদি মনে করেন, তাকে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিত সঙ্গী সেটুকু দিচ্ছেন না, যেকোনো একজন সঙ্গী হয়তো তার প্রফেশনাল জীবনকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন, বা তার অন্য যে পারিবারিক সদস্য তাদের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান আচরণ করছেন, তার সঙ্গীকে হয়তো অতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তখন দাম্পত্য সংঘাত হতে পারে।
প্রশ্ন : কোনো ঝুঁকির কারণ কী থাকে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত আরো বাড়ানোর ক্ষেত্রে?
উত্তর : আমরা একে বলি ল্যাক অব ইফেকটিভ কমিউনিকেশন স্কিল ( যোগাযোগের দক্ষতার অভাব) । আমি আসলে কী চাচ্ছি, আমার পরিবারকে কীভাবে দেখতে চাচ্ছি, আমার সঙ্গীর কাছ থেকে আচরণগুলো কীভাবে চাচ্ছি, আমার বার্তাটি যদি আমি সঠিকভাবে পৌঁছাতে না পারি, সেই জায়গায় যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে সমস্যা হয়।
আর যদি কেউ এমন হয় যে তার সঙ্গীকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করে, তারা সব কাজেরই একটি ব্যাখ্যা চায় তাহলে সমস্যা হয়। অভিযোগের বিষয়টা একজন সঙ্গী বা দুজন সঙ্গী করতে পারে। আবার অভিযোগ করার কোনো কারণ নাও থাকতে পারে। আবার দেখা যায় কোনো একটি সঙ্গী তার কোনো একটি বিষয়ে একরোখা আচরণ দেখাচ্ছে, তখনো সমস্যা হয়। আরেকটি হলো আত্মকেন্দ্রিকতা বা স্বার্থপরতা। এটি সম্পর্ককে খুব খারাপভাবে আহত করে। অনেক সময় দেখা যায় সঙ্গীর তুলনায় তাদের পরিবারের সদস্যদের যদি একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেটিও কিন্তু দাম্পত্য সংঘাত তৈরি করে। অনেক সময় বিবাহবহির্ভূত কিছু সম্পর্কের কারণেও দাম্পত্য সংঘাত হয়।
আর কখনো কখনো আমরা দেখি, মধ্য বয়সে বা মিড লাইফ ক্রাইসিসের মধ্যে পড়ে। একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে, সঙ্গত কারণেই হোক বা বায়োলজিক্যাল কারণেই হোক।
এই যে সংঘাত তৈরি হলো সেটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের পর্যায় চলে যায়। সেই বিষয়টি নির্ভর করে এই যে দ্বন্দ্বটা হলো সেটি কীভাবে সারানো হলো, তার ওপর। যদি একে ধ্বংসাত্বক পথে ঠিক করার চেষ্টা করা হয়,তাহলে বিচ্ছেদের পথে যায়।
বিবাহ বিচ্ছেদের আগে যে আলাদা থাকা, সে সময় বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য একটি প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেই মুহূর্তটা পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং দম্পতিদের জন্য একটি চাপযুক্ত সময়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু সন্তান বা বারন্ত বয়সের শিশুরা।