মধ্য বয়সের সংকট : সমাধানে করণীয়
মিড লাইফ ক্রাইসিস বা মধ্য বয়সের সংকট অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।এটি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। সাধারণত চল্লিশ থেকে পয়ঁষট্টি বছর বয়সে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
এই সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ৩০১২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সাইফুন নাহার। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এই বিষয়টিকে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : আমরা প্রথমে ভালো করে ধারণা পাবার চেষ্টা করি। তিনি কোন ধরনের সমস্যার ভেতরে যাচ্ছে বা উনি বর্তমান, ট্রিগার ফেক্টরগুলো কী কী রয়েছে।
কী কারণে তিনি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো নির্ণয় করার চেষ্টা করবেন। এই যে একটা অসুখীভাব, এটি থেকে বের হয়ে আসার জন্য তিনি কী চাচ্ছেন সেটি জানতে হবে। কোন বিষয়টা তাকে সুখী করতে পারবে, এই বিষয়ে তিনি কী মনে করেন, জানতে হবে।
যেটা তিনি করতে চাচ্ছেন, সেটি করতে তার কী কী সম্ভাবনা রয়েছে। এই কাজটা করতে গেলে তার কী কী অসুবিধা রয়েছে, সেগুলো আমরা কথা বলার মাধ্যমে বের করি।
এরপর কী করবেন তিনি, সেই বিষয়ে একটি পরিকল্পনা করি। সেই পরিকল্পনাকে সফল করার জন্য তাকে কিছু পরামর্শ আমরা দিতে পারি। কিছু দিন পরপর তাদের পর্যবেক্ষণ করারও প্রয়োজন হয়। এই যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে তাদের যদি বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ থাকে, তখন তাদের অ্যান্টিডিপ্রিসেন্ট বা সাইকোথেরাপি করারও প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন : পুরুষ ও নারী ভেদে কী পার্থক্য রয়েছে?
উত্তর : কিছু কিছু পার্থক্য রয়েছে। কিছু বৈশিষ্ট্য মিলিতভাবে দুজনেরই থাকে।
নারীদের ক্ষেত্রে যেটি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, এই সময়ে অনেকে মেনোপজাল পর্যায়ে চলে যায়। এটি তাদের জীবনের খুব একটা কঠিন অবস্থা। অনেকে মনে করে তার সঙ্গী, হয়তো তার ওপর আর আকর্ষণবোধ করবে না।
আরেকটি বিষয় যেটি হয়, সন্তানরা যখন বড় হয়ে যায়, বাড়ির বাইরে বের হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। কখনো হয়তো দেখা যায় কোনো নারী সন্তানদের লালন পালনের জন্য তার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। তারপর যখন সন্তানরা বাড়ির বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। ভাবে, আমার আর কোনো পরিচয় রইল না। আমার একটা সময় পেশা ছিল, আমার পরিচয় ছিল, এরপর একটি সময় আমি পরিবারে ঢুকলাম। যখন সন্তান বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন তার মধ্যে একটি সংকট তৈরি হয়।
আবার অনেকে কিন্তু উল্টোটাও করে। অন্য ধরনের আচরণ দেখায়। আমার দায়িত্ব ছিল, আমি আমার সন্তানদের বড় করেছি। এই সময় কারো কারো ক্ষেত্রে নাতি-নাতনিদের দায়িত্বও কিন্তু নিতে হয়। অনেকেই দেখা যায় একই সঙ্গে নিজের মা-বাবার দায়িত্ব পালন করছে, অনেকে আবার নাতি-নাতনির দায়িত্ব পালন করছে। তবে কেউ কেউ দেখা যায় একটু স্বার্থপর আচরণ দেখায়। আমার সন্তানদের আমি বড় করেছি। আমার এখন স্বাধীনতা লাগবে। নাতি-নাতনিদের দায়িত্ব আসলে অনেকে নিতে চায় না। তারা যে স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারেনি। সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করে। আবার কেউ কেউ খুব বেশি সৌন্দর্য সচেতন হয়ে যায়।