মধ্য বয়সের নানা মানসিক সংকট
মিড লাইফ ক্রাইসিস বা মধ্য বয়সে নানা ধরনের সংকট হয়। একেকজনের সংকট একেক রকম হতে পারে। মধ্য বয়সের সংকটের মধ্যে কোন বিষয়গুলো পড়ে, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সাইফুন নাহার। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মধ্য বয়সের সংকটের মধ্যে কোন বিষয়গুলো পড়ছে?
উত্তর : বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয় না। বেশির বাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক ট্রানজিশনাল অবস্থা হিসেবে আসে। যাদের ক্ষেত্রে এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সেটা বেশ কিছু কারণের ওপর নির্ভর করে।
আমাদের বয়স বাড়তে থাকলে কী হয়? কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। যেমন আমরা আস্তে আস্তে চোখে কম দেখতে থাকি। আমাদের চুলে পাক ধরতে থাকে। চুল পড়তে থাকে। আমাদের ত্বক ঢিলা হয়ে যেতে থাকে। ত্বকে বিভিন্ন বলিরেখা পড়ে। আমাদের মনের শক্তি বা উদ্দম আগের মতো থাকে না। শরীরের শক্তিও আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলোতে আমরা ধীরে ধীরে ভোগা শুরু করি। আরেকটি যেটি হয়, পরিবারের মধ্যে, আমরা দেখতে থাকি, আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে। তারা সাবলম্বী হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জীবন বা জীবিকার প্রয়োজনে তারা বাড়ির বাইরেও বের হয়ে যায়।
অথবা আমাদের যাঁরা পিতা-মাতা তাঁরা হয়তো অনেক বেশি বুড়ো হয়ে যান। তাঁদের মধ্যে কারো একজনের মৃত্যু, অথবা আমাদের সমবয়সী কারো একজনের মৃত্যু- এই বিষয়গুলো আমাদের চরমভাবে নাড়া দেয়। আমরা অনুভব করতে থাকি যে আমাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় আমরা পার করে এসেছি। অথবা আমরা মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এই চিন্তা গুলোর কারণে এক ধরনের মৃত্যু ভয় তৈরি হয়। তখন মানুষ মনে করে আমি যে পৃথিবীতে আসলাম, আমার আসার কী কারণ। এই আসাকে অর্থবহ করার জন্য, স্মরণীয় করার জন্য কিছু পরিকল্পনা করে। কেউ কেউ করে। অনেকে ভাবে আমি আমার সন্তানদের মাঝে পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকব। আমি আমার কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকব।
সাইকোসোশ্যাল ডেভেলপের যে সাতটি পর্যায় রয়েছে মানুষের, সেটিতে বলা হয়, হয় তিনি নিজের চিন্তা থেকে নতুন কিছু করতে পারবে। অথবা একেবারেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলবে। সে নিজেকে এমনভাবে গুটিয়ে ফেলবে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সমাজ থেকে। সমাজে যোগাযোগ তো দূরের কথা, তার নিজের উন্নতির জন্য নিজের বিকাশের জন্য, নিজের আত্ম উন্নয়নের জন্য কী করতে হবে, সেটিও আসলে খুঁজে পায় না। তার নিজের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করতে পারে না।
প্রশ্ন : তার পরিবারের যেসব সদস্য রয়েছে, সে কি নিজে আপনাদের কাছে আসে, না কি তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন তিনি সমস্যায় রয়েছেন?
উত্তর : এই সংকটের কারণগুলো যেমন ভিন্ন, সংকটের সমস্যাগুলোও ভিন্ন। আমাদের এশিয়ান সংস্কৃতিতে এগুলো এত ভাবা হয় না। বা মানুষ এই বিষয়ে অত বেশি সতর্ক না। তারা আমাদের কাছে যখন আসে, তখন জীবনের যে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আসে, কেউ হয়তো বিষণ্ণতায় ভোগে, কেউ উদ্বেগে ভোগে। এ রকম বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে।