বৈশাখে খাওয়া-দাওয়া : খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়
আসছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় আনন্দ উদযাপনের দিন। ঘোরাঘুরি, সাজগোজ, গলা ছেড়ে গান গাওয়া আর খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালি তার এই আনন্দের দিনটি উদযাপন করে থাকে। সাদা আর লালের এই দিনে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার পাশাপাশি থাকে নানা রকম বাঙালি খাবারের আয়োজন।
পুষ্টি প্রতিদিনের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিজ্ঞান। যেকোনো দিনেই মানুষকে তার পুষ্টির কথা মাথায় রেখে খাবার খেতে হয়। বৈশাখের আনন্দকে আরো স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর করতে তাই মাথায় পুষ্টির কথা রেখেই খাবার খেতে হবে।
কার্বোহাইড্রেট
বৈশাখে নানা রকম কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া হয়। পান্তা ভাত হলো কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে বড় উপাদান। পান্তা ভাতে ক্যালোরি বেশি থাকে। কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি ভিটামিনের খুব ভালো উৎস হলো পান্তা ভাত। সহজে হজমযোগ্য এই পান্তা সবাই খেতে পারলেও যাদের ওজন বেশি এবং যাদের রক্তে গ্লুকোজ অনেক বেশি তারা একটু সাবধানে পরিমিত পান্তা ভাত খাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন গরম পান্তা ভাতের গ্লাইসেমিক সূচক ঠান্ডা পান্তা ভাতের তুলনায় বেশি।
পান্তা ছাড়াও চিড়া, মুড়ি, খই পহেলা বৈশাখের জন্য অনেক ভালো কার্বোহাইড্রেট। তবে নানা জাতীয় মিষ্টান্ন, পিঠা, মোয়া, নাড়ু থেকেও প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।
মিষ্টান্নগুলো থেকে প্রচুর ক্যালোরিও আসে। স্বাস্থ্য বিবেচনায় যেকোনো মিষ্টান্ন তৈরিতে সাদা চিনির পরিবর্তে গুড়ের ব্যবহার কিছুটা উপকারী। মিষ্টান্ন ঘরে তৈরি করলে তাতে তীব্র মিষ্টি না দিয়ে হালকা মিষ্টি দিয়ে তৈরি করুন।
প্রোটিন
বাঙালির পহেলা বৈশাখ মানে ইলিশ মাছ, যা প্রোটিনের অনেক ভালো উৎস। ভাজা ইলিশ মাছ স্বাদের হলেও যাদের খাবারে বিধিনিষেধ থাকে তারা ভাজা না খেয়ে সরষে ইলিশ, ভাপে ইলিশ বা চালকুমড়া ইলিশও খেতে পারেন।
ইলিশ ছাড়াও ছোট মাছ ও মুরগির নানা রেসিপি পহেলা বৈশাখে ঘরে তৈরি করা যায়। এগুলো প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে। এ ছাড়াও প্রোটিন বহুল আরেকটি খাবার হলো ডাল। কাঁচা আমের ডাল, ডাল চরচরি, ডালের বড়ি, ভর্তা, মাছের মাথায় ডালের মুরিঘণ্ট, ঘনডাল বাঙালির অতি পরিচিত প্রোট্নি বহুল খাবার। ডালের তৈরি খাবার রান্নায় তেল কম লাগে। তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
ফ্যাট
বাঙালির ঘরে তৈরি বৈশাখী খাবার, সাধারণত দেশীয় আঙ্গিকে তৈরি হলে তাতে কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে। সরিষার তেল দিয়েই নানা আয়োজন করা হয়। কিন্তু নতুন বছরে কেউ মোগলাই খাবার তৈরি করলে তখন চর্বির পরিমাণ বেশি হয়। যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি। এ ছাড়া মিষ্টান্ন তৈরিতে ঘির ব্যবহার বা তেলে ভাজা হলে তখন চর্বি বেশি খাওয়া হয়। তাই বৈশাখে বাঙালির স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন পাতলা ঝোলের তরকারি, ভর্তা ইত্যাদি খেলে চর্বি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ভিটামিন ও মিনারেলস
পহেলা বৈশাখের অন্যতম খাবার হলো নানা রকম ফল। যেমন বাঙ্গি, কাঁচা আম, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি দেশীয় ফল স্বাস্থ্যকর তেমনি ভিটামিনস ও মিনারেলসে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া সজনে, লতি, ডাটা শাক, হেলেঞ্চা, ঢেড়স ছাড়াও নানা রকম শাক সবজি পহেলা বৈশাখের মেনুতে খাওয়া যেতে পারে। রকমারি ম্যানু শাক ও মাছের পাতুরি, সবজি নিরামিষ, শাক, সবজি ভর্তা বা বড়া ইত্যাদি নানা আয়োজন করা হয় বৈশাখের খাবারে। ফলের মধ্যে কাঁচা আমের ভর্তা, বাঙ্গির শরবত, তরমুজের জুস বা কাঁচা তরমুজ বৈশাখের খুব পরিচিত খাবার।
তরল
বাঙাল ঐতিহ্যের একটি বড় দিন হলো পহেলা বৈশাখ। সারাদিন ঘোরাঘুরিত যাতে কোনোভাবেই পানিশূন্যতা না হয়,সে বিষয়টি ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে। পানি হলো হাইড্রেট রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যাপাদান।
পাশাপাশি বৈশাখে চলে কাঁচা আমের জুস, বাঙ্গির জুস, তরমুজের জুস,ডাবের পানি,লেবু পানি,জিরা পানি,তেঁতুলের শরবত,দইয়ের লাচ্ছি ইত্যাদি। স্বাস্থ্যকর এই তরলগুলো শরীরকে চাঙ্গা রাখে। শরীরের লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ করে। এগুলো ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রেখে আপনাকে সজিব করতে সাহায্য করবে।
বৈশাখ মানে আনন্দ। আর সুস্থভাবে এই আনন্দ উপভোগ করার লক্ষ্যে সঠিক খাবারের কোনো বিকল্প নেই।
অস্বাস্থ্যকর খাবার আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি আপনার আনন্দেরও বাঁধা হয়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ বজায় রেখে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর সঙ্গে পহেলা বৈশাখের আনন্দ উপভোগ করুন।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।