প্রবীণদের চর্মরোগে করণীয়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে। আমাদের জীবনযাপন, খাওয়া-দাওয়া, বংশগত কারণ এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত অভ্যাস, যেমন : ধূমপান, এলকোহল গ্রহণ ইত্যাদির কারণে ত্বকের এই পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া সূর্যের আলোও আমাদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত করার অন্যতম কারণ। সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট লাইট বা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে এই ক্ষতি হয়। বয়সের কারণে ত্বকে সাধারণত যেসব পরিবর্তন আসে, সেগুলো হলো- ত্বকের রুক্ষতা বা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বিনাইনিন গ্রোথ বা শরীরে কালো কালো ছোট টিউমার, চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া, চামড়া ঝুলে পড়া ইত্যাদি।
বলিরেখা
প্রবীণ বয়সে ত্বকের একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বলিরেখা বা রিংকেলস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এটি হয়ে থাকে। এর ফলে ত্বক নমনীয়তা হারায়। অধূমপায়ী ব্যক্তিদের থেকে যারা বেশি ধূমপান করে তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বলিরেখা থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য সানব্লক লাগাতে হবে।
চামড়া ঝুলে পড়া বা কুচকে যাওয়া
একে ‘লাফ লাইনস’ বা ‘ওরি লাইনস’ বলা হয়ে থাকে। এ সময় চামড়া স্থিতিস্থাপকতা হারায়। মুখের বিভিন্ন জায়গায় এটি দেখা যায়। যেমন : নাকে, চোখের চারপাশে, কপালে, চিক বা গালে।
ত্বকের শুষ্কতা
ত্বকের শুষ্কতা প্রবীণদের একটি সাধারণ সমস্যা। এ সময় শরীরের তৈলগ্রন্থি কমে যায় যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। শুষ্ক ত্বকে চুলকানি বা ইচিং হয়। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ত্বককে মশ্চারাইজ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে পিউর পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। অন্যান্য সময়ের পাশাপাশি গোসলের পর সারা শরীর স্পঞ্জ করে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে লোশন ব্যবহার করতে হবে। ক্ষার মুক্ত সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন গোসলে সাবান না ব্যবহার করাই ভালো। যদি সমস্যা আওতার বাহিরে চলে যায় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এর ফলেও শরীরে চুলকানি হয়। এটি সাধারণত ডায়েবেটিস, থাইরয়েড,মেলিগনেনসি,ক্যানসার,কিডনির সমস্যা ইত্যাদি অসুখের কারণে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হয়।
স্কিন ক্যানসার
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি প্রি স্কিন ক্যানসার এবং স্কিন ক্যানসারের প্রধান কারণ। এদের মধ্যে রয়েছে, বেসাল সেল কারসিনোমা অথবা স্কুয়ামাস সেল কারসিনোমা। শরীরে যদি কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে ওই অংশের বায়োপসি করে দেখতে হবে এটি ক্যানসার কি না।
বয়সের কারণে দাগ
প্রবীণ বয়সে সূর্যের আলোর ফলে ত্বকে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। মুখমণ্ডল, হাত ও ফোরআমর্সে এটি হতে দেখা যায়।
বেডসোরস
যেসব বয়স্ক ব্যক্তি বিভিন্ন অসুখের ফলে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে অথবা নড়াচড়া করতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে বেডসোরস একটি অন্যতম সমস্যা। এসব রোগীর নড়াচড়া করতে না পারার ফলে তাদের শরীরে সংবেদনশীলতা কমে যায়। এই ক্ষেত্রে রোগীকে একপাশ থেকে অন্যপাশে পরিবর্তন করে দিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘন ঘন ড্রেসিং করে দিতে হবে। বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রবীণদের চর্মরোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে বেশি জরুরি প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে ফুল হাতা পোশাক ব্যবহার করতে হবে। চামড়ায় কোনো পরিবর্তন অথবা চেইঞ্জিং মোল দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া কিছু কিছু পরিবর্তন বয়স বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
ডা. মোশারফ আহমেদ খসরু : রেজিস্ট্রার, ডারমেটোলোজি ও লেজার সেন্টার, অ্যাপোলো হাসপাতাল