যেভাবে করবেন পেশির ব্যায়াম
দীর্ঘসময় কর্মক্ষম থাকতে প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে অন্তত দুবার পেশির ও অ্যারোবিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা।
ব্রিটিশ চিকিৎসকদের নতুন এই নির্দেশনায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে এসব। এতে গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়াদের জন্য নিরাপদে কাজ করার সীমানাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওয়ার শঙ্কা কমাতে নাচ, বউলস (এক ধরনের খেলা) অথবা তাই চি (এক ধরনের চীনা আত্মরক্ষার কৌশল) অনুশীলনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ব্রিটিশ চিকিৎসকরা আরো জানিয়েছেন, শারীরিক পরিশ্রম করলে স্থুলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অবসাদজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে শারীরিক কার্যক্রমের পরামর্শনামায় হালনাগাদ সংস্করণটির সমন্বয় করেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ চিকিৎসা কর্মকর্তারা।
নতুন এই পরামর্শনামায় চিকিৎসকরা যে বার্তাটি দিয়েছেন তা হলো—কোনো ধরনের কায়িক পরিশ্রম না করার চেয়ে যে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা উত্তম, বেশি করা গেলে আরো ভালো।
ব্রিটেনর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক ডেইম স্যালি ড্যাভিস জানান, তাঁর দেশের বেশিরভাগ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক তেমন কোনো শরীরচর্চা করেন না।
ড্যাভিস বলেন, ‘বাসে বা টিউবে যাতায়াতের সময় আমাদের নির্ধারিত গন্তব্যের আগের স্টপে নেমে পড়ে বাকি পথটুকু হেঁটে যেতে হবে। লিফটে না উঠে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের আরো শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।’
এ ছাড়া পরামর্শনামায় ৫০ বছর বয়স থেকে স্বাভাবিক নিয়মে পেশি ও হাড় দূর্বল হতে শুরু করা ঠেকাতে প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক শক্তি ও ভারসাম্যের সমন্বয়ে মনোযোগী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কী পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা?
অনূর্ধ্ব-৫ বছর পর্যন্ত
নবজাতক : নিজ থেকে নড়াচড়া করে না এমন শিশুকে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট উপুড় করে শুইয়ে রাখা।
১২ থেকে ৩৬ মাস : শিশু প্রতিদিন অন্তত ১৮০ মিনিট হাত-পা ছুড়ে খেলছে নিশ্চিত করা।
৩ থেকে ৪ বছর : প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিট বিভিন্ন মাত্রার ব্যায়াম করাসহ প্রতিদিন ১৮০ মিনিট শারীরিক কর্মকাণ্ড।
৫ থেকে ১৮ বছর
সপ্তাহে প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা করে মাঝারি থেকে ভারি কাজের মাধ্যমে শারীরিকভাবে সচল থাকতে হবে। যেমন, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় সচল থাকা। পেশী ও হাড়ের কার্যক্ষমতা বাড়ানো। অলস সময় কমানো।
১৯ থেকে ৬৪ বছর
প্রতিদিনই শারীরিকভাবে সচল থাকার চেষ্টা করা। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ভারী কিছু বহন করে পেশির কার্যক্ষমতা বাড়ানো। যেমন, বাজার করার পর ব্যাগ বহন করা। এ ছাড়া ব্যায়ামের জন্য সময় বাড়ানো। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রুত হেঁটে ও সাইকেল চালিয়ে অথবা অনুরূপ কাজ করে সচল থাকা। অথবা ৭৫ মিনিট দৌড়ানো বা অনুরূপ কাজ করা। অলস সময় কমিয়ে ফেলা।
৬৫ বছরের বেশি
শারীরিকভাবে সচল থাকা অন্যান্য সব কাজের থেকে বেশি দরকারি। সপ্তাহে দুই দিন পেশি শক্তি বৃদ্ধি করা ও ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করা। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি কাজ করে শরীর সচল রাখা। যখনই সম্ভব সামান্য কাজ করা, কমপক্ষে দাঁড়িয়ে হলেও শরীরকে সচল রাখা।
অন্তঃসত্ত্বা নারী
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি কাজ করে শরীর সচল রাখা। ভারী কাজ করার বাধ্যবাধকতা নেই। সপ্তাহে অন্তত দুবার পেশি শক্তির কার্যক্ষমতার জন্য কাজ করা।
সন্তান জন্মদানের পর
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিকভাবে সচল থাকা। সপ্তাহে দুবার পেশীশক্তির জন্য কাজ করা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতেই প্রতিদিন সামান্য ব্যায়াম করা।
শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে
যতটা সম্ভব অন্যসব মানুষের মতোই তাঁদের কাজ। এতে কোনো ঝুঁকি নেই।
রয়েল কলেজ অব পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ থেকে ডা. ম্যাক্স ডেভি বলেন, সব পরিবারকে অবশ্যই তাঁদের সন্তানদের রুটিন অনুযায়ী হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে ব্যায়াম করানোর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।