সন্তান নেওয়ার আগে ডায়েট কেন
সন্তান নেওয়ার সময়টি যেকোনো মানুষের জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান নেওয়ার জন্য সাধারণত কিছু পূর্বপরিকল্পনা করতে হয়। এ সময় পৃথিবীতে আসা শিশুর পুষ্টির পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হয় নতুন মায়ের শরীরের পুষ্টির দিকেও। আর একজন মা যেন সঠিক পুষ্টি পান সেই জন্য গর্ভধারণের অন্তত তিন থেকে ছয় মাস আগেই সঠিক নিয়মে খাবার গ্রহণ করতে হয়।
অনেকেই মনে করেন গর্ভাবস্থায় পুষ্টির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আজকাল সেই ধারণা বদলাচ্ছে। গর্ভ ধারনের পরিকল্পনা থেকে সঠিক ডায়েট পালন করা জরুরি। অর্থাৎ যখন থেকে আপনি মা হওয়ার কথা ভাবছেন তখন থেকেই উচিত শরীরের সঠিক পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখা। আর মায়ের নিউট্রেশনাল স্ট্যাটাসকে মেনটেন করা হচ্ছে প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েটের মূল লক্ষ।
গর্ভধারণের অন্তত ছয় মাস আগে থেকে মেয়েদের কিছু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। যেমন : সিবিসি বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, ডায়াবেটিস, থাইরোয়েড হরমোন বা অন্যান্য হরমোন ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে শরীরের ওজন উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আছে কি না তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কেননা অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটি গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং স্বাভাবিক প্রসবের জন্য মায়ের শরীরে ওজনকে যথাযথভাবে কমিয়ে আনতে হবে। আর এজন্যও প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েট প্রয়োজন।
প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েট শরীরে বেশ কিছু পুষ্টির চাহিদা যথাযথভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেমন : রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রাকে বজায় রাখে। রক্তে আয়রনের যেন কোনো ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে।
গর্ভাবস্থার ছয় মাস আগে থেকেই অনেককেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলিক এসিড বা ফলিক এসিডজনিত সমস্যা ছাড়াও অন্য বিভিন্ন গর্ভকালীন জটিলতাকে এড়াতে সাহায্য করে প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েট। প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েট পরিকল্পনায় ছয় মাস অথবা তিন মাস আগে থেকে আপনি নিয়মিত ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া ফলিক এসিডযুক্ত বিভিন্ন খাবার যেমন : দুধ, ডিম, কমলা, শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হয়।
গর্ভাবস্থায় অনেকে প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। যেমন : বমি ভাব, সকাল বেলা উঠে দুর্বল বোধ করা, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে অনেক মা তার পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হয়। সেজন্য গর্ভধারণের আগেই যদি খাবার খাওয়ার নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলতে পারেন তবে শরীরে পুষ্টির সঠিক সংরক্ষণ হবে। এটি আপনাকে প্রথম তিন মাসে পুষ্টির জোগান দিতে সাহায্য করবে।
অনেকের ক্ষেত্রে আগে থেকেই দেখা যায় রক্তে স্বল্পতা রয়েছে। তাদের গর্ভাবস্থার আগে রক্তস্বল্পতার কারণ নির্ণয় করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করে রক্তের স্বল্পতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাতে গর্ভকালীন অবস্থায় রক্ত স্বল্পতা কোনো ঝুঁকির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।
গর্ভকালীন অনেকের এসিডিটির সমস্যা হয়। সাধারণত গর্ভকালীন এই অবস্থা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই যখনই আপনি চিন্তা করছেন গর্ভধারণ করবেন তখন এসিডিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম, দুচিন্তা মুক্ত থাকা প্রিপ্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
প্রেগনেন্সির পরিকল্পনা যখনই করবেন তখনই একজন চিকিৎসক এবং একজন ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন।
তাই সম্পূর্ণ গর্ভধারণের সময়টি যেন আনন্দদায়ক হয় এবং স্বাস্থ্যকরভাবে উপভোগ করা যায় সেই জন্য প্রিপ্রেগনেন্সি ডায়েট মেনে চলুন।
তামান্না চৌধুরী : পুষ্টিবিদ,অ্যাপোলো হাসপাতাল