শুচিবায়ুগ্রস্থতা কী কী ধরনের হয়?
ওসিডি বা শুচিবায়ুগ্রস্থতা একটি জটিল মানসিক রোগ। রোগটি মূলত কী এবং এ রোগের ধরন কেমন হয়, এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আজিজুল ইসলাম।
বর্তমানে তিনি আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৬২তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : ওসিডি কী?
উত্তর : অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার- যদি শব্দগুলোকে ব্যাখ্যা করি, তাহলে কিন্তু রোগকে পেয়ে যাবো। অবসেশন হলো কোনো চিন্তা, যেটি বারে বারে মানুষের মনে আসে। মানুষ মনে করছে, এটি বেশি হয়ে যাচ্ছে, সেটি ফেরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ফেরাতে পারছে না। এ কারণে তার মধ্যে এক ধরনের উদ্বিগ্নভাব তৈরি হচ্ছে। একটি বিষণ্ণতা তৈরি হচ্ছে। এটি তার দৈনন্দিন কাজকে ব্যহত করছে। এই যে তার চিন্তাটা আসছে বারে বারে, এটি ফেরাতে গিয়ে মানুষ কিছু কাজ করে। কিছু আচরণ করে সেটি হলো কমপালশন। সুতরাং অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার হলো, একটি অবসেশন।
একটি উদাহরণ দিই, পরিষ্কার হয়ে যাবেন। সবসময় আমি মনে করি, এখানে ময়লা। এ টেবিলে ময়লা, চেয়ারে ময়লা, আসেপাশে সব ময়লা। আমি আর হাত রাখতে পারি না। আমি সবসময় এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকি, ময়লা লেগে যাবে বলে। এটি হলো অবসেশন। এখানে সে হয়তো হাত রাখলো চেয়ারের ওপর সে হাত ধোয়া শুরু করে দিল। তো হাত ধুলাম। একবার ধুলাম। ময়লা মনে হয় যায়নি। তো আরেকবার ধুলাম। এটা হলো কমপালশন। সুতরাং অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার হলো, একটি চিন্তা, একটি চেতনা, একটি ধারণা, একটি দৃশ্য যেটি বারে বারে মানুষের মনের মধ্যে আসছে, সেটা দূর করতে গিয়ে মানুষ একটি কাজ করে ফেলে।
প্রশ্ন : কিছু ধরন তো রয়েছে। আপনি একটি উদাহরণ দিয়েছেন। আর কী কী ধরন রয়েছে?
উত্তর : আসলে আমরা জানি না যে অবসেশন খুব প্রচলিত একটি বিষয়। শতকরা তিন ভাগ মানুষের মধ্যে কিন্তু অবসেশন রয়েছে। আর সাইকিয়াট্রিস্ট যারা রয়েছি, তারা দেখি, আমাদের রোগীদের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ অবসেসিভ। একটি তো আমি বললাম, ডার্ট অ্যান্ড কনটামিনেশন। এটি হলো, ময়লা আমরা গায়ে লেগে যাবে।
আবার একটি হতে পারে সন্দেহ। আপনি রাতে ঘুমাতে গেলেন, মনে হলো, দরজাটা বোধ হয় লাগাইনি। উঠে দেখলাম লাগালাম কী। শুলাম, আমার মনে হলো, লাগালাম কী। ঘর থেকে বের হয়ে আবার দেখলাম তালাটা ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না। এই যে সন্দেহ, এটিও একটি অবসেশন।
প্রশ্ন : এটি তো হঠাৎ করে অনেকেরই মনে হতে পারে, এটি কি অবসেশন?
উত্তর : অবসেশন, তবে ডিজঅর্ডার নয়। যদি কোনো ডিজঅর্ডার হয়, তাহলে এটি কিন্তু আপনাকে যথেষ্ট ঝামেলা করবে। আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে। একজন ব্যাংকার, ক্যাশিয়ার সে টাকা গুণে আর সন্দেহ করে। সারা দিনে সে আর কাজ করতে পারে না। দুজন বা তিনজন ক্লাইন্টকে শুধু বিদায় করতে পারবে।
আবার অনেক বিষয় রয়েছে। ইদানীং আমরা কেস পাচ্ছি এমন যে রোগী ভাবছে, আমার এইচআইভি এইডস হয়ে গেল। তার মাথার মধ্যে সবসময় চিন্তা যে আমার এইডস হয়ে গেছে। তো রোগ হয়ে গেল, এ রকম একটি অবসেশন হয়ে গেল। চেক ও কাউন্টিংয়ের কথা বললাম। এ ছাড়া অনেক সময় অদ্ভুত কিছু অবসেশন পাই। মা মনে করছে, আমার যে ছোট সন্তান কয়েকদিন আগে হয়েছে, তাকে বোধ হয় আমি মেরে ফেলব। এই চিন্তাটা তার মাথার মধ্যে আসে এবং সে খুব উদ্বিগ্ন অনুভব করে। ভাবে, দা দিয়ে আমি হয়তো কেটে ফেলব। এ জন্য সে বাসায় আর দা রাখে না।
আবার ধর্মীয় সম্পর্কে অবসেশন হয়। আমার চিন্তা হচ্ছে, আল্লাহ বোধ হয়, একজন মেয়ে। এ ছাড়া কিছু সেক্সুয়াল অবসেশন হয়। এগুলো আরো ভয়াবহ হয়। অনেক সময় মাকে জড়িয়েও হয়। অনেক সময় বোনকে জড়িয়ে হয়। এটি আমরা চিন্তা করি না। তবে বারে বারে সেটি চিন্তার মধ্যে চলে আসে। সে নিজেও কষ্ট পায়। এসব চিন্তা যেহেতু সে সহ্য করতে পারে না, তাই তার কষ্টটা বেড়ে যায়।