প্রবীণরা নিয়মিত কতটুকু হাঁটবেন?
প্রবীণদের জন্য ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অনেক। একজন বয়স্ক মানুষের বেলায় সুস্থ থাকতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা কী এবং কতখানি, সে বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ ২৩ নভেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২১৪তম পর্বে কথা বলেছেন প্রবীণ হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের ফিজিওথেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মহসিন কবীর।
urgentPhoto
প্রশ্ন : কাদের আপনারা প্রবীণ বলছেন, কোন সময় থেকে বলছেন?
উত্তর : একেক দেশে একেক বয়সের পর লোকদের প্রবীণ বলা হয়। জেরিয়াট্রিক গ্রুপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বা সিনিয়র সিটিজেন বলা হচ্ছে। আমাদের দেশে ৬০ বছরের ওপরে যাদের বয়স, তাদের আমরা প্রবীণ বলছি।
প্রশ্ন : প্রবীণদের বেলায় ফিজিওথেরাপির ধরনটা আলাদা হয় কেন? এবং প্রয়োজন কেন?
উত্তর : প্রবীণদের একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কোষগুলো আর উৎপন্ন হয় না শরীরে। তখন ধীরে ধীরে বার্ধক্য ভর করে। তখন পেশির নমনীয়তা ও শক্তি আস্তে আস্তে হারায়। ধীরে ধীরে এটি শূন্যতে নেমে যাচ্ছে। এই জিনিসগুলো আবার সক্রিয় রাখার জন্য ব্যায়ামের প্রয়োজন পড়ে। কোন ধরনের ব্যায়াম করবে, সেটি বুঝিয়ে দেবেন একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। এখন ফিজিওথেরাপিস্টেরও অনেক ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এখন আধুনিক ফিজিওথেরাপির একটি বিশাল অংশ হলো এই জেরিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি।
প্রশ্ন : একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে তাঁর জীবনযাপনের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়ামের ধরনেও আপনারা পরিবর্তন আনার উপদেশ দিচ্ছেন। তিনি আগে কী করতেন, এখন কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন? কী ধরনের ব্যায়াম করবেন তিনি? নাকি তাঁকে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে?
উত্তর : একজন মানুষ যখন ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, আমরা বলছি বার্ধক্য কোনো রোগ নয়। এটি প্রতিটি মানুষের হয়। যদি সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে, আকস্মিক মৃত্যু না হয়, তাহলে আমাকে বার্ধক্যে যেতেই হবে। একটি মানুষ যখন বার্ধক্যের ধাপে পৌঁছাবে, ওই ধাপে আমাদের শারীরিক পরিবর্তন আসে। শারীরিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে পেশি, গাঁটে পরিবর্তন আসে। যারা তরুণ আছে, তাদের যে পরিমাণ শক্তি আছে, প্রবীণদের সে পরিমাণ শক্তি থাকবে না। এটি না থাকার কারণে তাঁদের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুর্বল হওয়ার কারণে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন ব্যথা ভর করছে। একে বলা হচ্ছে বাতের ব্যথা। বার্ধক্যের একটি প্রধান সমস্যা বাতের ব্যথা। এ ছাড়া পেশিতে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা—এ ধরনের ব্যথা যদি না হয়, সে জন্য এটি করতে হবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যাঁরা বার্ধক্যে পৌঁছাচ্ছে, তাঁদের সাধারণ চলাফেরাগুলোও কমিয়ে দিচ্ছে। এর কারণে পেশি, গাঁট আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের প্রতিটি পেশির একটি নির্দিষ্ট নড়াচড়া আছে, যেটাকে আমরা ফিজিওথেরাপির ভাষায় বলি অ্যাকটিভ ব্যায়াম। যাঁরা বার্ধক্যের দিকে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিদিন অ্যাকটিভ ব্যায়াম করতে হবে।
প্রশ্ন : অ্যাকটিভ ব্যায়াম বলতে তিনি কী ধরনের ব্যায়াম বেছে নেবেন? এবং কখন একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া ঠিক হবে?
উত্তর : আমি বলব, যারা বার্ধক্যে যাচ্ছে, তাদের প্রি-জেরিয়াট্রিক পর্যায় থেকেই গাইড নিতে হবে।
প্রশ্ন : প্রি-জেরিয়াট্রিক মানে কোন বয়সটি?
উত্তর : প্রি-জেরিয়াট্রিক বলা হচ্ছে, ৪৫ বছরের পরেই। বার্ধক্যে যখন পৌঁছাবে, তখন থেকে তাকে ফিট থাকতে হলে তার কিছু ব্যায়াম মেনে চলতে হবে। এই বিশ্বায়নের যুগে আমরা তো বসেই সবকিছু করছি। আমাদের বাচ্চাগুলো আর আগের মতো মাঠে যাচ্ছে না, খেলছে না। তারা এখন ঘরে বসে মোবাইলে, ল্যাপটপে গেম খেলছে, এখানেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে। শেষ পর্যন্ত নড়াচড়াগুলো কম হচ্ছে। সে জন্য জেরিয়াট্রিক বয়সে আসার আগে ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে পরবর্তী সময়ের জন্য।
প্রশ্ন : ওই সময়ে পৌঁছে যাওয়ার পর তিনি কী ধরনের ব্যায়াম বেছে নেবেন?
উত্তর : একেকটা মানুষের ধরন বুঝে তাকে এটি দিতে হবে। তার কতটুকু পেশির শক্তি কমে গেছে, সেটার ওপর নির্ভর করে তাকে কী ধরনের ব্যায়াম দেওয়া হবে। আসলে তাদের পেশির শক্তি বুঝে ব্যায়ামটা দিতে হবে। যার পেশির শক্তি চার রয়েছে, তাকে প্রধানত অ্যাকটিভ ব্যায়ামগুলো দেওয়া হবে। প্রতিটি গাঁটের নির্দিষ্ট কিছু নড়াচড়া আছে। সেই নড়াচড়াগুলো তাকে প্রতিদিন করতে হবে। পেশির শক্তি যাদের আরেকটু কম, তাদের অ্যাকটিভ ব্যায়ামের সঙ্গে স্ট্রেনথেনিং ব্যায়াম করতে হবে। তখন তাকে ওয়েট ব্যায়ারিং ব্যায়াম দিতে হবে। আবার ওয়েট ব্যায়ারিং ব্যায়াম যখন করবে, তখন গাঁটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনেকে ভাবে, হাঁটাই বুঝি ভালো। আমি দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা সব সময় হাঁটলাম, সেটা ভালো। আসলে সেটি নয়। পেশির শক্তি অনুযায়ী আপনাকে হাঁটতে হবে। আপনার পেশির শক্তি হাঁটার ক্ষমতা রাখে ৪০ মিনিট, আপনি তিন ঘণ্টা হাঁটলে তো পেশি অবসন্ন হয়ে যাবে। এই ভুলগুলো আমরা অনেকেই করি। প্রতিটি জিনিসই বৈজ্ঞানিক উপায়ে করা উচিত। সে জন্য প্রবীণদের একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে কী ধরনের ব্যায়াম, কতটুকু করবেন সেটি ঠিক করা উচিত।