ডায়েটে আমরা যে ১০টি ভুল করি
স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একটু মোটা হলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি ডায়েট করতে। ডায়েট ঠিকই করি কিন্তু শরীরের মেদ তো কমে না। কী করে কমবে বলুন? ডায়েট চলাকালীন অবস্থায় যে ভুলগুলো আমরা করি সেগুলো ওজন তো কমায়ই না উল্টো আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়েটে যে ভুলগুলো সচরাচর আমরা করে থাকি, তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ওয়েবএমডি ওয়েবসাইটে। আপনি চাইলে এই পরামর্শগুলো একবার দেখে নিতে পারেন।
ক্রাশ ডায়েট
দ্রুত ১০ কেজি ওজন কমাতে কেউ কেউ ক্রাশ ডায়েট বেছে নেন। আর ক্রাশ ডায়েটের কারণে তাঁরা ক্যালোরি খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেন। এ কারণে অনেক দ্রুত হয়তো ওজন কমেও যায়। কিন্তু যখনই আপনি ক্যালোরি-সমৃদ্ধ কোনো খাবার খেতে যাবেন, তখনই আপনার পরিপাকে সমস্যা হবে। তাই সময় নিয়ে ডায়েট করুন। যাতে ধীরে ধীরে সঠিক উপায়ে আপনার ওজন কমে যায়।
সকালের নাশতা না খাওয়া
ক্যালোরি কমানোর জন্য অনেকেই সকালের নাশতা খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু এই ক্ষুধার কারণে আপনি দুপুরে অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন; যা উল্টো আপনার ওজন বাড়িয়ে দেয়। সকালে প্রোটিন ও ফাইবার-সমৃদ্ধ নাশতা খেলে সারা দিনে আপনার ক্ষুধা কম পাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা সকালে পুষ্টিকর নাশতা খেয়ে দিন শুরু করেন, তাঁরা অনেক বেশি সুস্থ থাকেন এবং ডায়েটেও ভুল হয় না।
অসময়ে স্ন্যাকস খাওয়া
আপনি হয়তো খাবার খাওয়ার সময় অনেক নিয়ম মেনে চলছেন। কিন্তু মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে বা আড্ডার সময় টুকটাক স্ন্যাকস খেয়ে ফেলছেন। এই অনিয়মিত স্ন্যাকস খাওয়ার কারণে আপনার ডায়েট চার্ট পুরোপুরি কাজে লাগছে না। তাই যদি ক্যালোরি কমাতে চান তাহলে অবশ্যই অসময়ে স্ন্যাকস খাওয়া বন্ধ করুন।
বাদাম না খাওয়া
অনেকে ক্যালোরির ভয়ে বাদাম খায় না। অথচ বাদামে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন রয়েছে, যা পরিপাকে সাহায্য করে। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত অল্প করে হলেও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
লো-ফ্যাটের খাবার না খাওয়া
লো-ফ্যাট শরীরে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় মনে রাখবেন, লো-ফ্যাট আর লো-ক্যালোরি এক না। আপনি যদি লো-ফ্যাটের এক টুকরো কেক খেতে চান তাহলে সে সময় ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবে। তাহলেই সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।
ক্যালোরিযুক্ত জুস বা কফি খাওয়া
অনেক সময় ডায়েট করতে গিয়ে খাবারের অনেক নিয়ম আমরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি কিন্তু কফি বা জুস খাওয়া ছাড়তে পারি না। এক কাপ কফিতে ৫০০-এর বেশি ক্যালোরি আছে। আর জুসের ক্যালোরি অনেক দ্রুত শরীরে কাজ করা শুরু করে দেয়। তাই যদি ওজন কামতে চান তাহলে ডায়েট করার পাশাপাশি এ ধরনের পানীয় খাওয়া বাদ দিতে হবে।
কম পানি পান করা
ডায়েটের সময় এই ভুলটি সবাই করে থাকে। ক্যালোরি কমাতে পানি খুবই কার্যকরী। পানি কম খাওয়ার কারণে যদি আপনি পানিশূন্যতায় ভোগেন তাহলে আপনার পরিপাকে সমস্যা হবে। এর ফলে আপনার ওজন কমার গতি কমে যাবে। তাই প্রতিবার খাওয়ার সময় এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
দুধজাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়া
এটা সত্যি যে ফুল ফ্যাটের দুধ, চিজ ও আইসক্রিম খেলে ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু এই ভয়ে যদি আপনি একেবারেই দুধজাতীয় খাবার খাওয়া ছেড়ে দেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি শরীর সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম পায় তাহলে এটি ফ্যাট কমাতে কার্যকরী হবে আর যদি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে ওজন অনেকটা বেড়ে যাবে। তাই শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে অবশ্যই ননফ্যাট ও লো-ফ্যাটের কথাটি মনে রাখতে ভুলবেন না।
ছুটির দিনে ফাস্ট ফুড খাওয়া
সারা সপ্তাহ আপনি ওজন কমানোর জন্য সালাদ আর স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। অথচ ছুটির দিনে ফাস্টফুড বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে দূরে কোথাও বেড়াতে গেলেও আর হুঁশ থাকে না। এমনকি যাত্রাপথেও আপনি ফাস্টফুড বেছে নিচ্ছেন, যা আপনার সারা সপ্তাহের পরিশ্রমকে বৃথা করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব মানুষ সপ্তাহে দুবারের বেশি ফাস্টফুড খান, তাঁদের অন্যান্য ডায়েট করা মানুষের তুলনায় ১০ কেজি ওজন বেড়ে যায়।
অবাস্তব পরিকল্পনা করা
আপনি যদি চিন্তা করেন ডায়েটের প্রথম সপ্তাহে ২০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলবেন তাহলে আপনি কখনোই ওজন কমাতে পারবেন না। যদি আপনি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ কেজি ওজন কমাতে চান তাহলে এটা আপনার দ্বারা সম্ভব। তাই ডায়েটের আগে অবাস্তব কিছু চিন্তা না করে যেটা সম্ভব সেই পথে আগান।