মাড়ি থেকে রক্ত
দাঁতের গোড়া বা মাড়ি থেকে রক্তপড়া- এই সমস্যার কথা প্রায়ই শোনা যায়। রোগীরা সাধারণত দাঁত ব্রাশ করার সময় বুঝতে পারেন, তার দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এই রক্ত বের হওয়া বিভিন্ন রোগের লক্ষণ। মাড়ির রোগ যথা জিনজিভাইটিস পেরিয়োডোন্টাইটিসের ঝুঁকি থেকেই যায়। এ ছাড়া কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হলে এই সমস্যা হয়। যেমন : লিউকোমিয়া প্লাটিলেট ডিজঅর্ডার। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে রোগীদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
কারণ
মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে প্লাককে (খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে এক প্রকার আঠালো দ্রব্য) দায়ী করা হয়। প্লাক মাড়ির মার্জিন বরাবর আঠালোভাবে লেগে থাকে এবং একপর্যায়ে তা কঠিন পাথরে রূপ ধারণ করে যা পরবর্তী সময়ে মাড়ি প্রদাহ রোগ জিনজিভাইটিসে রূপ নেয়। একপর্যায়ে দাঁত থেকেও রক্ত পড়তে থাকে। যদি চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে এর ব্যাপ্তি বেড়ে যায় তখন মাড়ি এবং জো বোন (দাঁত যে হাড়ের সঙ্গে লেগে থাকে) আক্রান্ত হয় তখন একে পেরিয়োডোন্টাইটিস বলা হয়ে থাকে।
এই রোগ হলে রোগীরা দাঁতের গোড়ায় পাথর দেখতে পায়। মাড়ি ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং সামান্য আঘাতেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে থাকে। এই অবস্থা অনেক দিন চলতে থাকলে বা চিকিৎসার কোনো প্রকার উদ্যোগ না নিলে হাড় ক্ষয় হয় এবং দাঁত নড়তে থাকে একর্পযায়ে দাঁত পড়ে যায়।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার অন্যান্য কারণ
১. রক্ত সম্পর্কিত কোনো রোগ থাকা। যেমন : এনিমিয়া, লিউকোমিয়া, থ্রাম্বোসাইটোপেনিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি।
২. নরম টুথ ব্রাশ ব্যবহার না করা।
৩. গর্ভকালীন হরমোনের তারতম্য হওয়া।
৪. আইডোপেডিক থ্রাম্বোসাইটিক পারপুরা।
৫. দাঁত অথবা মাড়ি সংক্রান্ত রোগ হলে।
৬. স্কার্ভি ভিটামিন-সি ডিফেসিয়েনন্সির কারণে।
৭. ভিটামিনকে ডিফেসিয়েন্সির কারণে।
৮. এসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করার জন্য।
৯. অনেক সময় আঘাতজনিত কারণে মুখ বা মাড়ি থেকে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
এই রোগের লক্ষণ দেখার পর পরই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। স্কেলিংয়ের মাধ্যমে দাঁতের গোড়া থেকে ক্যালকুলাস ফেলে দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনমতো ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়া আরো সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য সিবিসি ও এক্স-রে করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ
* তামাক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
* যে স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে এ রকম স্থানে গজ কাপড়ের সাহায্যে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চাপ দিতে হবে।
* যদি ভিটামিনের অভাবজনতি লক্ষণ থাকে তাহলে অতিরিক্ত ভিটামিন কে অথবা সি সেবন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসপেরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
* নরম টুথ ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।