কফি শরীরের জন্য ভালো না খারাপ
কফি পানের উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ক্যাফেইনকে অনেকেই বাতিল করে দিয়েছেন। আবার অনেকেই দাবি করেছেন ক্যাফেইন শরীরের জন্য ভালো উপাদান। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন কেউ যদি তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পান করেন, তাহলে তাদের ধমনিতে পানি জমা (ক্লোগড আর্টরিস) এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। হার্ট জার্নালের বরাত দিয়ে ভারতীয় ওয়েবসাইট এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল দক্ষিণ কোরিয়ার কাংবুক স্যামসাং হাসপাতালে এই গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষকরা এই গবেষণায় খতিয়ে দেখেন কফির সঙ্গে করোনারি আর্টারি ক্যালসিয়ামের (CAC) যোগসূত্র। করোনারি আর্টারি ক্যালসিয়ামের (CAC) কারণে ধমনি শক্ত এবং সরু হয়ে পড়তে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপ অনুভূত হয়ে হার্ট অ্যাটাক এবং মস্তিষ্কে স্ট্রোকও হতে পারে।
১৩৮ জন নারী-পুরুষকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে এই গবেষণাটি করা হয়। এখানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মোটামুটি সবার বয়স ছিল ৪১-এর কাছাকাছি। যাঁরা কফি একেবারেই পান করেন না, তাঁদেরও গবেষণাভুক্ত করা হয়। তবে এই গবেষণায় বয়স, লিঙ্গ, ধূমপানের পরিমাপ, অ্যালকোহল পানের অবস্থা, ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস এবং হাইপার টেনশনের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গবেষণার শ্রেণিকরণে ছিল- যাঁরা দিনে এক কাপও কফি পান করেন না, এক থেকে তিন কাপ কফি পান করেন, তিন থেকে পাঁচ কাপ প্রতিদিন এবং প্রতিদিন অন্তত পাঁচ কাপের বেশি পান করেন- এমনভাবে।
ফলাফলে দেখা যায়, যাঁরা একের কম কাপ কফি প্রতিদিন পান করেন, তাঁদের রক্তে CAC-এর অনুপাত ০.৭৭, যাঁরা তিন কাপ কফি গ্রহণ করেন তাঁদের CAC-এর অনুপাত ০.৬৬, যাঁরা তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি খান তাঁদের CAC-এর অনুপাত ০.৫৯। যাঁরা এর চেয়ে বেশি কফি পান করেন, তাঁদের CAC-এর অনুপাত ০.৮১।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানান, অতিরিক্ত কফি পান স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। যেহেতু বেশি কফি পানে CAC-এর অনুপাত বেড়ে যায়। আর এই CAC তো একধরনের ক্যালসিয়াম, এটি ধমনিতে বাসা বাঁধলে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কে সমস্যা হতে পারে।
গবেষকরা এও জানান, কফি CVD বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকগুলো গবেষণায় বলা হয়, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কফি পানের কারণে হতে পারে। আবার সম্প্রতি গবেষণাগুলোতে এও বলা হচ্ছে, কফি পান হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কাজ করে, হৃৎপিণ্ডকে সবল রাখে।
তাই বলা যায়, কফি আসলেই শরীরের জন্য কতটুকু ভালো আর কতটুকু খারাপ তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি গবেষকরা। অতএব বিষয়টি আরো গবেষণার দাবি রাখে।