চল্লিশ পেরোলেই কি চশমা?
চল্লিশ বছরের পর আমাদের চোখে অনেক সমস্যা হয়। এ সময় চোখে ঝাপসা দেখা, কম দেখা- এ ধরনের সমস্যা হয়। আজ ২৪ ডিসেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. সিরাজুদ্দৌলা।urgentPhoto
প্রশ্ন : আমরা প্রায়ই বলে থাকি চল্লিশ পেরোলেই চালশে। চল্লিশের পর আমাদের চোখে ঝাপসা দেখা, কম দেখা কিংবা কাছের জিনিস কম দেখতে পাওয়া- এসব সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এটা হয় কেন?
উত্তর : চোখের ভেতর কর্নিয়া থেকে আরম্ভ করে লেন্স, রেটিনা এগুলো স্বচ্ছ। এগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের আলো যায়। এগুলো একটি পয়েন্টে এসে ইমেজ বা দৃশ্য তৈরি করে। এটা স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় বিষয়। সব লোকের জন্যই একই রকম। সবাই আমরা চাই যে আমার সন্তানটি ভালো দৃষ্টি শক্তি নিয়ে জন্ম নিক। তবুও অনেক সময় শিশুরা যখন স্কুলে যায়, তখন দেখা যায় ভালো মতো বোর্ড দেখতে পারছে না। তখন চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। ইতিহাস শুনে, চশমা লাগলে, চিকিৎসক সেটা দেন। আর নয়তো ওষুধ দেন।
একটা অসুখ রয়েছে, এটি মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়। দুনিয়ার সব জায়গায়, সব লোকেরই ৩৬ বছরের পরে কাছে দেখতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে যারা লেখাপড়া করে, অফিসের কাজ করে কিংবা রাতের বেলায় কম আলোতে পড়ে, তারা ভালো দেখতে পায় না। তখন চিকিৎসকের কাছে এসে বলে, ‘আমি দেখতে পারছি না। এটি আসলে রিডিংয়ের সমস্যা। ওদের ভয় থাকে, আস্তে আস্তে বয়স যেহেতু বাড়ছে, বোধ হয় অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। একে প্রেস বায়োপিয়া বলা হয়। এ ছাড়া চোখের ছানির কারণেও অনেক সময় ঝাপসা দেখে।
প্রেস বায়োপিয়া সম্বন্ধে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার চোখ সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। এটি একটি শরীরবৃত্তীয় পদ্ধতি। আপনার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। আসলে লেন্সটা সাধারণত একটি থলির মধ্যে থাকে, একে বলা হয় লেন্স ক্যাপসুল। লেন্স ক্যাপসুল আবার চোখের মধ্যে ঝুলানো থাকে। একে সাসপেনসিভ লিগামেন্ট বলে। সাসপেনসিভ লিগামেন্ট আবার সিলিয়ারই পেশির সাথে আটকে থাকে। যখন আমরা কাছে দেখি সিলিয়ারই পেশিটা সংযোগ করে, সাসপেনসিভ লিগামেন্টটা আলগা হয়ে যায়। যেহেতু সাসপেনসিভ লিগামেন্টটা ক্যাপসুলের সাথে আটকে থাকে তাই ক্যাপসুলটাও বড় হয়ে যায়। লেন্সটা আবার নমনীয়, এটি স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। তখন দূর থেকে লোকেরা যে কাছে দেখছে, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানিয়ে নেয়। তবে চল্লিশের পর এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অনেক দুর্বল হয়ে যায়। তখন কাছে দেখার জন্য যে পরিবর্তনটা দরকার ছিল, সেটা হতে পারে না। আসলে কাছে দেখতে গেলে চোখের পাওয়ার বাড়ানো দরকার, সেটি বাড়তে পারে না।
সেজন্য সে কাছে দেখতে পায় না। তখন আমরা সাধারণত চোখের অন্য কোনো অসুবিধা না থাকলে চশমা দিয়ে দেই। সাধারণ অর্থে একে আমরা রিডিং গ্লাস বলি।
প্রশ্ন : যারা পড়াশোনো করে, তাদের তো এই সময় চশমা নেওয়া খুব দরকার। তবে যারা এসব কাজ করে না, তারা যদি এই গ্লাস না নেয় তাদের কী কোনো ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : চোখ যদি আগে থেকেও ভালো থাকে, তাহলেও ৪০ বছর হয়ে গেলে চশমা লাগে। কেউ যদি বাহাদুরি করে বলেন, আমার ৪০ বছরেও চশমা লাগে না, তাহলে তার চোখ আগে থেকেই খারাপ ছিল।
কারণ তার হয়তো মায়োপিয়া আছে। মায়োপিয়া থাকলে দূরে দেখে, কাছে দেখে না। আসলে এই বয়সে যাদের স্বাভাবিক চোখ তাদের চশমা লাগবেই। এটা বয়সজনিত একটি পরির্বতন, এটা হওয়ারই কথা। এ সময় লেন্স, সাসপেকটিভ লিগামেন্ট ইত্যাদি দুর্বল হয়ে আসে।
প্রশ্ন : চশমা নেওয়ার কিছু দিন পরপর সমন্বয় করতে হয়। একে বলা হয়, চশমার পাওয়ার এডজাস্টমেন্ট। এই বিষয়টি কী? এটা কেন দরকার?
উত্তর : যারা জানে তার দূরেও সমস্যা নেই, কাছেও সমস্যা নেই শুধু রিডিং বা পড়তে সমস্যা রয়েছে, তারা অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে না গিয়েও চশমার দোকানে গিয়ে পাওয়ারটা হিসাব করে বানিয়ে নেয়। এভাবে অনেকে চালায়। তবে ভালো হচ্ছে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া। আপনি যদি ভালোভাবে না দেখেন, ভালোভাবে কিছু পড়তে বা লিখতে পারবেন না। তাই আপনি যদি একটু সময় করে চিকিৎসকে দেখিয়ে নেন তাহলে ভালো হবে।
প্রশ্ন : কোনো মানুষ যদি এই বিষয়ে চশমা নেয়, তার কি সারাজীবন চশমা ব্যবহার করতেই হবে? না কি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে?
উত্তর : এখন তো চোখের অনেক রোগই আছে। চোখের ছানি হলে প্লাস পাওয়ারও হতে পারে, আবার মাইনাস পাওয়ারও হতে পারে। তাই হিসাব ছাড়া আসলে এই বিষয়ে বলা যাবে না।
প্রশ্ন : প্রেস বায়োপিয়ার ক্ষেত্রে, যারা কাছের জিনিস কম দেখতে পায়। তাদের বেলায় অন্য কোনো বিষয় আছে কি না?লেন্স লাগিয়ে বা অন্য কোনোভাবে কিছু ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না?
উত্তর : মূলত এটা সম্ভব নয়। এখানে আপনাকে চশমা নিতেই হবে। ৬০ বছর পর বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের পর এটি নিউট্রাল (নিরপেক্ষ) হয়ে যায়। তখন চশমা ছাড়াও দেখতে পারবেন।