মাথায় আঘাত পেলে কী করবেন
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই ১০-১২ জন করে মারা যায়। এমন কোনো দিন নেই যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা যায় না। প্রাণহানি বা পঙ্গুত্বের একটি বিশেষ কারণ হলো দুর্ঘটনার ফলে মাথা বা মেরুদণ্ডে আঘাত। শুধু আমাদের দেশেই নয় বিভিন্ন উন্নত দেশেও মাথায় আঘাতের কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ লোক মারা যায়।
সড়ক দুর্ঘটনায় যত লোক মারা যায় তার বেশিরভাগই মাথা বা স্পাইনে আঘাতের কারণে। মাথায় আঘাত প্রাপ্তরা মারা যান আমাদের অজ্ঞতার কারণে, টানাহেঁচড়ার জন্য।
কেউ যদি মাথায় আঘাত পায় তখন প্রথমেই লক্ষ রাখতে হবে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কি না। আহত ব্যক্তির শ্বাসপথ পরিষ্কার করার পরও যদি শ্বাস না নেয় তবে আহত ব্যক্তির মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করতে হবে। অজ্ঞান ব্যক্তিকে পুরোপুরি চিত করে শুইয়ে দেওয়া বিপজ্জনক। এ কারণে জিহ্বা পেছনে উল্টে গিয়ে শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য চামচ জাতীয় কিছু মুখে প্রবেশ করিয়ে রাখলে এ আশঙ্কা কমে যায়। যদি আহত ব্যক্তি বমি করতে থাকে তাহলে শুধু মাথা কাত না করে মাথা, ঘাড় ও দেহ একসাথে কাত করতে হবে। এতে বমি ফুসফুসে প্রবেশ করবে না।
মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। মেরুদণ্ডের ক্ষেত্রে ঘাড়ে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ঘাড় যদি খানিকটা শক্ত থাকে বা আঘাতের চিহ্ণ পাওয়া যায় তাহলে আহত ব্যক্তিকে ঘাড়ে কোনো অবস্থায় নাড়া যাবে না। এতে স্নায়ুরুজ্জু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। মাথার নিচে বালিশ ব্যবহার করা উচিত নয়। মাথা সামনের দিকে না ঝুঁকে পেছনের দিকে ঝুঁকে থাকা নিরাপদ। সেজন্য একটা তোয়ালে বা গামছা গোল করে পেচিয়ে ঘাড়ের নিচে দেওয়া সুবিধাজনক, যেন ঘাড় পেছনের দিকে ঝুঁকে থাকে। তবে মাথার নিচে অবশ্যই কোনো কিছু দিবেন না। অনেকে আহত ব্যক্তিকে ধরে জোরে ঝাকাঝাকি করেন। মাথা ধরে ডাকাডাকি করেন। এটা কিন্তু মারত্মক হতে পারে। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ওঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে ৬-৮ জন একসঙ্গে ধরে সমান রেখে শোয়াতে হবে। একটি গাছের গুলাইকে যেভাবে স্থানান্তর করতে হয় সেভাবে করতে হবে।
বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে মাথা ও ঘাড়ের দিকে। ঘাড়ের দু পাশে দুটি হাত দিয়ে স্থির করে নিতে হবে।
মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকলে পরিষ্কার কোনো কাপড় দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে রাখতে হবে। কোনো কাপড় ভিজে গেলে সে কাপড় না সরিয়ে অন্য একটি কাপড় দিয়ে চেপে ধরতে হবে। যদি খুলির কোনো হাড় ভেঙে যায় তাহলে বেশি চাপ দিয়ে ধরা যাবে না। এতে মস্তিষ্কে আঘাত লেগে আরো সমস্যা হবে। মাথা ফুলে গেলে বরফ কাপড়ে পেচিয়ে ঘণ্টায় ১৫-২০ মিনিট ধরে রাখতে হবে।
মাথায় আঘাত লাগলে পুরো ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আহত ব্যক্তি আঘাত লাগার পর পুরোপুরি ভালো হলেও ২-৩ ঘণ্টা পর বমি করতে পারে, অজ্ঞান হতে পারে। এ জন্য কেউ ঘুমালে তাকে ২-৩ ঘণ্টা পর জাগিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে যে ঠিকমতো উত্তর দেয় কি না। এ সময় কোনো কিছু না খেতে দেওয়াই ভালো।
মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে নিচের লক্ষণগুলো খেয়াল রাখতে হবে : চোখের মনির অস্বাভাবিকতা, তীব্র মাথা ব্যথা, নাক, মুখ ও কান দিয়ে তরল পদার্থ বা রক্ত নির্গত হওয়া, চোখের চারপাশ কালচে হওয়া, বেশি ঘুম ঘুম ভাব, অজ্ঞান হওয়া বা কোমা, অস্থিরতা বা অস্বাভাবিক আচরণ, বার বার বমি করা, শ্বাস-প্রশ্বাস কমে যাওয়া, খিঁচুনি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, চোখে সমস্যা হওয়া। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে।