ফোন আসক্তিতে হতে পারে মস্তিষ্কের সমস্যা
আপনি কি ফোন আসক্ত? এক মুহূর্তের জন্যও ফোনটিকে হাতছাড়া করতে চান না অথবা ফোনে কথা বলা কি আপনার প্রিয় অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে? এমনই যদি হয়, সতর্কবার্তা রয়েছে আপনার জন্য। গবেষকরা বলছেন, যাঁরা অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত তাঁরা বিষণ্ণতা, শুচিবায়ুগ্রস্ততার মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অ্যাডিকশন টিপস জানিয়েছে এই তথ্য। আসুন জেনে নিই কী কী হতে পারে ফোন আসক্তির কারণে।
বিষণ্ণতার ঝুঁকি
দীর্ঘদিন ধরে যদি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই কারো মন খারাপ থাকে বা কষ্ট লাগার অনুভূতি হয় তবে তাকে বিষণ্ণতা বলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণতা রোগের সঙ্গে ফোন আসক্তির যোগসূত্র রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, একাকিত্ব ভোলার জন্য ফোন ব্যবহার করলেও ফোনই একসময় একাকিত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেটা বিষিণ্ণতা তৈরির একটি বড় লক্ষণ।
হতে পারে শুচিবায়ু রোগ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা ফোন বেশি ব্যবহার করেন তাঁদের সঙ্গে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবায়ুগ্রস্ততা রোগের সম্পর্ক রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একই চিন্তা বারবার ঘুরে ফিরে আসতে থাকে। তাঁরা একই জিনিস বারবার পরীক্ষা করেন। সাধারণত স্মার্টফোনের অ্যালার্ম বা নোটিফিকেশন কিছু মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু যাঁদের মধ্যে ওসিডির লক্ষণ রয়েছে, তাঁরা এই অ্যালার্ম বা নোটিফিকেশনকেই সর্বোচ্চ নিরাপদ পদ্ধতি মনে করেন। কোনোভাবেই মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন ভুল হতে পারে না - এই চিন্তা মাথায় কাজ করতে থাকে।
সামাজিক আচরণের দক্ষতা কমিয়ে দেয়
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব সমাজে ব্যক্তিরা বেশি ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের মধ্যে সামাজিক আচরণের দক্ষতা কমে যায়। বিশেষ করে এটি তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তারা সর্বক্ষণই ফোনে কথা বলতে থাকেন, খুদে বার্তা পাঠাতে থাকেন, গেম খেলতে ব্যস্ত থাকেন। ফলে আশপাশের মানুষের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে ভুলে যান। ফলে তাঁরা প্রয়োজনীয় সামাজিক দক্ষতা শিখতে অক্ষম হন।
ফোন আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই
ফোন আসক্তি অনেকটা মাদকাসক্তির মতোই। গবেষকরা জানান, মাদক গ্রহণ করলে যেমন মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি বেশি ফোন ব্যবহারেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
ম্যালাটোনিন হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত হয়
মাত্রাতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের কারণে মস্তিষ্কের ম্যালাটোনিন হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত হয়। আমরা অনেকেই জানি, এই হরমোন ঘুম এবং জাগানোর ক্ষেত্রে কাজ করে; শরীরের স্নায়ুকে শিথিল রাখতেও সাহায্য করে। গবেষণায় বলা হয়, অতিরিক্ত ফোনের ব্যবহার মেলাটোনিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষ করে যাঁরা ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বেশি হয়।
অনিদ্রা হয়
যাঁরা অনিদ্রা বা ইনসমোনিয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার খুবই ক্ষতিকর। গবেষকরা বলেন, ফোনের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা যায়, ততই অনিদ্রাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালো।
কাজের ক্ষতি করে এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দেয়
স্মার্টফোন ব্যবহারে সময় অপচয় হয়। ফলে কাজে মনোযোগ কমে যায়। সারাক্ষণ ফোনে মেইল দেখা, খুদে বার্তা পাঠানো, ফেইসবুকিং বা চ্যাট করার চিন্তা মাথায় থাকলে কাজ ব্যাহত হয়। আর কাজে মনোযোগ দিতে না পারলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায় না। যারা শিক্ষার্থী, তাদের ক্ষেত্রে এই আসক্তি খুব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন গবেষকরা।
স্মৃতির বিভ্রাট ও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
ফোন আসক্তির ফলে স্মৃতিবিভ্রাট হতে পারে এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। যখন ফোন ছিল না, তখন আমরা হয়তো খুব সহজেই বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর মনে রাখতে পারতাম অথবা অনেক প্রয়োজনীয় তারিখগুলো মনে রাখতে পারতাম। কিন্তু ফোন ব্যবহারে এখন অনেক সহজ জিনিসই এখন আার আমাদের মাথায় থাকে না।