নারীর স্তনে চাকা বা গোটা হলে
নারীর স্তনে চাকা বা গোটা হওয়া কিংবা গোটা ভাব অনুভূত হওয়া বিরল নয়। স্তনের ৯০ শতাংশ গোটা ক্ষতিকর নয়; এগুলো থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুকি থাকে না। অবশ্য কিছু অস্বাভাবিক জিনিস সময়মতো ধরা পড়লে ছোট অপারেশন দিয়ে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।
নারীর মাসিকের আগে স্তনে কিছু পরিবর্তন আসে। টিস্যু বিভিন্ন হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর কারণে স্তনে চাকা অথবা গোটা ভাব বা ব্যথাও অনুভব হতে পারে। তবে মাসিকের পরেও সাধারণত স্তনে ব্যথা ও চাকা ভাব হতে পারে।
সবচেয়ে সাধারণ এবং ক্ষতিকর নয় এমন দুটি গোটার নাম ফাইব্রো এডেনোমা ও সিস্ট।
ফাইব্রো এডেনোমা
সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ফাইব্রো এডেনোমা হয়। স্তনে একটি শক্ত চাকা যা চাপ দিলে নড়াচড়া করে; আকারে বাড়তে পারে আবার কমেও যেতে পারে। একপর্যায়ে চাকাটা মিলিয়ে যায়। তবে রোগী যদি ৩০ বছরের বেশি বয়সী হন এবং তাঁর ফাইব্রো এডেনোমা নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে অপারেশন করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সমস্যা পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সিস্ট
তরল পদার্থে ভরা থলেকে সিস্ট বলা হয়। জরায়ুর মতো স্তনেও সিস্ট হয়। এই সমস্যায় ব্যথা হতে পারে। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সে সাধারণত এগুলো হয়। তবে সিস্টের চিকিৎসা বেশ সহজই। একটি সুচ দিয়ে চাকা থেকে তরল পদার্থটা বের করে ফেলা হয়। কোনো জটিলতা না থাকলে চাকাটা একেবারে সেরে যায়। তবে যেসব নারীর সিস্ট হয় তাঁদের পরেও স্তনের বিভিন্ন জায়গায় সিস্ট হতে পারে। সিস্ট বড় হলে অপারেশন করে ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
তবে নিশ্চিন্ত থাকেন ফাইব্রো এডেনোমা বা সিস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায় না।
প্রতিটি নারীর উচিত নিজেদের স্তন সম্পর্কে সচেতন থাকা। যাতে নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
স্তনে সাধারণ যেসব পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হলো :
ম্যামোগ্রাম
স্তনের এক ধরনের এক্সরে-কে ম্যামোগ্রাম বলে। সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সে ম্যামোগ্রাম কার্যকর। কারণ এ বয়সে স্তনের টিস্যুতে কম গ্লান্ডুলার থাকে। এ জন্য এক্সরের ছবি ভালো আসে।
ফাইন নিডেল এসপিরেশন সাইটোলজি
এ পরীক্ষায় একটি সূক্ষ্ম সুচ দিয়ে স্তনের গোটা থেকে কিছু কোষ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
আলট্রাসাউন্ড
শব্দ-তরঙ্গ ব্যবহার করে এ পরীক্ষা করা হয়। ছোট মাইক্রোফোন জাতীয় যন্ত্র স্তনের ওপর ধরে স্তনের গোটা বা চাকা ভাব আছে কিনা সেটি দেখা হয়। সব বয়সের নারীর জন্য এ পরীক্ষা করা যায়।
তাই স্তনে সমস্যা মনে হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. সামছাদ জাহান শেলী, গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক গাইনি বিভাগ, বারডেম; পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মালিবাগ, ঢাকা।