ভালো ঘুমের জন্য কী খাবেন, কী খাবেন না
সুস্থ থাকার সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো ভালো ঘুম হওয়া। আবার ভালো ঘুমই হচ্ছে সুস্থ থাকার অন্যতম উপায়। সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, প্রয়োজনীয় ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া ও ভালো ঘুম হওয়া খুব জরুরি। প্রত্যেক মানুষের জন্য তাই ঘুমের গুরুত্ব অনেক। ঘুমের বিষয়টি নির্ভর করে ঘুমের ধরন ( কোয়ালিটি) ও পরিমাণের (কোয়ানটিটি) ওপর।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ভালোভাবে ঘুম হলে মানুষ অনেক বেশি কর্মক্ষম থাকে, সতেজ থাকে। যা তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর অনেক প্রভাব ফেলে।
অনেক গবেষণায় দেখা যায়, সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি ও এসিডিটিসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এমনকি ঘুমের ওপর মানুষের মেজাজ নির্ভর করে।
এ ছাড়া আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম ভালো হলে মানুষের ত্বক অনেক সুন্দর থাকে। দেহের সুস্থ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে মানসিক সুস্থতার ওপর। আর এই মানসিক সুস্থ থাকা অনেকাংশেই নির্ভর করে ঘুমের ওপর।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ঘুমের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। কেননা দেখা গেছে কিছু ভুল খাদ্য গ্রহণের জন্য মানুষের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। যেমন-
কফি : এতে রয়েছে প্রচুর ক্যাফেইন যা শারীরিক উত্তেজনা তৈরি করে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
কালো (ডার্ক) চকলেট : এটিও ঘুমের ব্যাঘাতের ক্ষেত্রে অনেক দায়ী। যদিও গবেষকরা বলেন, কালো চকলেট হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত তৈরিতেও ডার্ক চকোলেট যথেষ্ট দায়ী।
কোমল পানীয় : যেকোনো কোমল পানীয় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এই ধরনের খাবারকে অনেক সময় স্লিপ কিলার বা ঘুম-ঘাতকও বলা হয়।
ফাস্ট ফুড : ফাস্ট ফুডও আপনার নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের বারোটা বাজাতে পারে।
ওয়াইন : ওয়াইনও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ওয়াইন খাওয়ার ফলে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। এটি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটালেও পাশে যিনি ঘুমিয়ে আছেন তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
এ ছাড়া রাতের খাবারে অতিরিক্ত মাংস খেলেও সেটি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। খাবারে অতিরিক্ত কারি পাউডারের ব্যবহার ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।
উপরোক্ত খাবার যেমন ঘুমের বিরুদ্ধে কাজ করে, তেমনি কিছু ভালো খাবারও রয়েছে যা ভালো ঘুমের জন্য উপকারী। যেমন-
দুধ : দুধে খুব ভালো মাত্রার ট্রিপটোফেন রয়েছে; এটি মস্তিস্কের সেরোটোনিনের খুব ভালো উৎস। এটি মানুষকে সঠিকভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে। তাই রাতে শোয়ার আগে একগ্লাস দুধ পান আপনাকে ভালো ঘুম দিতে সাহায্য করবে।
ফোরটিফাইড সিরিয়াল : বিভিন্ন ফোরটিফাইড সিরিয়াল রয়েছে যেগুলো রাতের খাবারে থাকলে ভালো ঘুমে সাহায্য করে। যেমন : ভুসিসহ আটার রুটি বা লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেডস ও ওটস। এগুলো থেকে রক্তে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ তৈরি হয় যা ঘুমের জন্য অনেক ভালো।
মিস্টি আলু : মিষ্টি আলুও ঘুমের জন্য অনেক ভালো। এর ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম মাংস পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
হারবাল চা : হারবাল চা ঘুমের জন্য উপকারী।
তবে খাবারদাবার মেনে চললেও সঠিক ঘুমের নিশ্চয়তার জন্য বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এসব নিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাতে হালকা খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ঘুমের আগে প্রয়োজনে উষ্ণ স্নান করা। ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে ল্যাপটপ, ট্যাব, কমম্পিউটারে কাজ না করা এবং টিভি দেখা থেকে বিরত থাকা। এমন কিছু অভ্যাস সঠিকভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে।
তাই স্মৃতি শক্তিকে ভালো রাখতে, সুস্থ, সুন্দর ও সবল থাকতে ঘুমকে অবশ্যই গুরুত্ব দিন এবং সঠিক মাত্রার ঘুম নিশ্চিত করুন।
তামান্না চৌধুরী : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।