নারীর হৃদরোগ
হৃদরোগের বেলায় বিশেষ কিছু কারণে নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নারী শরীরের কিছু পরিবর্তনের সময় হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আজ বুধবার (১৮ মার্চ ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭৮তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আদদ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাসেরা বেগম।
প্রশ্ন : হৃদরোগের বিষয়ে নারী-পুরুষ আলাদা করার প্রয়োজন কেন হচ্ছে? নারীর হৃদরোগের গুরুত্ব কোথায়?
উত্তর : সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন নারীরা। আর সেটি হচ্ছে গর্ভধারণ এবং শিশু লালন পালন। কাজেই তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন শিশু বয়স থেকেই নিতে হয়। ছোটবেলায় কনজিনিটাল যত হৃদরোগ আছে সবই নারীর হয়। এর মধ্যে এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট মেয়েদের বেশি হয়। আর অন্য সমস্যাগুলো ছেলেমেয়ে উভয়ের একই রকম হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট গর্ভাবস্থায় ধরা পড়ে।
তা ছাড়া আরেকটি রোগ আছে রিউমেটিক ফিভার, এটিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের সমান হয়। কিন্তু মাইট্রাসটেনোসিস হয় মেয়েদের বেশি। এই মাইট্রাসটেনোসিস গর্ভাবস্থায় খারাপ হয়ে যায়; তার আগ পর্যন্ত নীরব থাকে।
কারণ মেয়েদের সাধারণত সমাজে ঠাণ্ডাভাবে চলতে শিক্ষা দেয়। এজন্য এট্রিয়াল সেপাটাল ডিফেক্ট, রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ সব গিয়ে ধরা পড়ে সন্তান ধারণের সময়।
প্রশ্ন : কেন গর্ভকালীন লক্ষণগুলো ধরা পড়ে?
উত্তর : গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সমস্যা বোঝা যায় না। চতুর্থ মাস, পঞ্চম মাসে সমস্যা ধরা পড়া শুরু করে। এর লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট হয়, পায়ে পানি আসে। এন্টিনেটাল চেকআপের পর সমস্যাটি ধরা পড়ে।
গর্ভধারণের সময় এই সমস্যাগুলো প্রকট হয়, কারণ প্লাসেনটাকে ফিড করতে হয়। এ সময় রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সঞ্চালন বেড়ে যায়। এটা হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। তখন হার্ট সেই চাপ নিতে পারে না।
হার্ট শরীরের এমন একটি যন্ত্র যা জন্মের আগে থেকে, গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তিন মাস থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজ করে যায়। হার্টের মতো এ রকম অধ্যবসায়ী অঙ্গ শরীরে আর একটিও নেই।
প্রশ্ন : বয়সন্ধির সময়ে ছেলে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের কোনো তারতম্য আছে কী?
উত্তর : এ সময়ে একটাই হৃদরোগ মেয়েদের হয় সেটা হচ্ছে এডোলোসেন রিউমেটিক ফিভার। রিউমেটিক ফিভার থেকে কনসিকুয়েন্স মাইট্রাসটেনোসিস হয়। ২০ বছর আগে আমাদের দেশে ৯ বছর বয়সেও মাইট্রাসটেনোসিস পাওয়া গেছে। এখন প্রচার এবং গবেষণার জন্য মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়ে গেছে।
প্রশ্ন : বলা হয় হার্ট অ্যাটাকে পুরুষরা বেশির ভাগ আক্রান্ত হয়। নারীরা কোন বয়সে গিয়ে বেশি আক্রান্ত হয়?
উত্তর : আগে বলা হতো আমাদের দেশে পুরুষরা একটু ভালো খাওয়া দাওয়া করে। অর্থাৎ ভারী, ভাজাপোড়া খাবার খায়। যার ফলে তাদের হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ বেশি। কিন্ত এখন নারীদের হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণও সমান।
প্রশ্ন : পোস্ট মেনোপোজাল অব্স্থায় নারীর হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ কেমন?
উত্তর : এখন হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এক রকম। এর আগে পরিমাণ কম থাকলেও পোস্ট মেনোপোজাল পিরিয়ডে হার্ট অ্যাটাকের বেড়ে যাওয়াতে পুরুষ এবং নারীর সমান হয়।
আরেকটি বিষয় হয়, পোস্ট মেনোপোজালের আগে নারীরা হার্টের বিষয়ে যত্ন পায় কম। হয়তো স্বামীর ডিমের কুসুমটি খাওয়ার দরকার নেই, স্ত্রী ভাবছে আমার জন্য আলাদা করে কেন আরেকটি ডিম নেব, তখন ওই ডিমের কুসুম হয়তো খেয়ে ফেলে। এভাবে তারা হৃদরোগের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। সেজন্য এই বয়সে নারীকে সতর্ক থাকা দরকার।
দর্শকদের বলছি, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন না। আগে থেকেই যান। হৃদরোগের প্রতিরোধে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক জীবন যাপন মেনে চলুন।